শীর্ষবিন্দু নিউজ: যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে দেশটির প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে প্রস্তাবিত খসড়া ব্রেক্সিট চুক্তিটি অনুমোদন না পাওয়ায় আগামী কয়েকদিনের জন্য অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ছে যুক্তরাজ্য ও ব্রিটিশ পার্লামেন্ট।
বুধবার (১৬ জানুয়ারি) ব্রিটিশ পার্লামেন্টে নির্ধারিত হবে থেরেসা মে’র ভাগ্য। আস্থা ভোটের মধ্য দিয়ে মীমাংসা হবে তিনি প্রধানমন্ত্রী পদে থাকতে পারবেন কিনা। মে যদি আস্থা ভোটে হেরে যান তবে নতুন করে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে।
তবে তিনি টিকে গেলেও পরবর্তী পদক্ষেপগুলো নেওয়া তার জন্য কঠিনই হবে। অবশ্য, বুধবার (১৬ জানুয়ারি) অনুষ্ঠিতব্য আস্থা ভোটে থেরেসার টিকে যাওয়ারই আভাস দিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান।
২০১৯ সালের ২৯ মার্চের মধ্যে যুক্তরাজ্যের ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছেড়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বের হয়ে যাওয়ার কথা। পরবর্তী সম্পর্কের রূপরেখা নিয়ে গত নভেম্বরে জোটটির সঙ্গে একটি চুক্তিতে পৌঁছান ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী মে। পার্লামেন্টে সেই খসড়া চুক্তি অনুমোদনের বাধ্যবাধকতায় মঙ্গলবার (১৫ জানুয়ারি) পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্সে ভোটাভুটি অনুষ্ঠিত হয়। ২৩০ ভোটের ব্যবধানে প্রত্যাখ্যাত হয় ব্রেক্সিট সংক্রান্ত খসড়া চুক্তি। বিশাল ব্যবধানে থেরেসা মে’র পরাজয়ের পর তার সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপন করেন লেবার নেতা জেরেমি করবিন। তিনি বলেন, এর মাধ্যমে এই সরকারের নির্ভেজাল অযোগ্যতার বিরুদ্ধে রায় দেওয়ার সুযোগ পাবে পার্লামেন্ট।
বুধবার ব্রিটিশ পার্লামেন্টের নিম্ন কক্ষ হাউস অব কমন্সে থেরেসা মে’র বিরুদ্ধে আস্থা ভোট অনুষ্ঠিত হবে। তার আগে হবে বিতর্ক। হাউস অব কমন্সের নেতা আন্দ্রিয়া লিডসোম বলেছেন, এক্ষেত্রে বুধবার সারাদিন সময় লেগে যেতে পারে। দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিটে প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্ন পর্ব শেষ হওয়ার পর পরই বিতর্ক শুরু হবে এবং তা সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্তও চলতে পারে। এরপর হবে ভোটাভুটি।
২০১১ সালে প্রণিত ফিক্সড টার্ম পার্লামেন্টস অ্যাক্ট-এর আওতায় প্রথমবারের মতো এ ধরনের বিতর্ক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ফিক্সড টার্ম পার্লামেন্টস অ্যাক্ট-এর আওতায় প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছামতো নির্বাচনের ডাক দেওয়ার সক্ষমতা বিলোপ করে পাঁচ বছরের মেয়াদে সরকারকে ক্ষমতায় রাখার কথা বলা হয়েছে। দুইটি ব্যতিক্রমও আছে। একটির প্রয়োগ ২০১৭ সালে দেখা গিয়েছিল। তখন নির্বাচনের দাবি জানিয়ে দুই তৃতীয়াংশ এমপি ভোট দিয়েছিলেন। আরেকটি উপায় হলো আস্থা ভোট। ফিক্সড টার্ম পার্লামেন্টস অ্যাক্টের ২.৪ ধারা অনুযায়ী আস্থা ভোটের প্রস্তাবে বলতে হবে: ‘তার সরকারের ওপর হাউস অব কমন্সের কোনও আস্থা নেই।’
থেরেসা মে আস্থা ভোটে হেরে গেলে রাতারাতিই যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে যাবে তা নয়। এক্ষেত্রে ১৪ দিনের একটি সময়সীমা দেওয়া আছে। সরকার এ ১৪ দিনের মধ্যে এমপিদের আস্থা ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করতে পারে কিংবা নতুন আরেকটি সরকার গড়ে তুলতে পারে। যদি তা না হয়, তবে পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়া হবে। তবে পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার পর নির্বাচন আয়োজন পর্যন্ত ২৫ দিন সময় রাখতে হয়। তবে এ ২৫ দিন সময়ের মধ্যে কী করা হবে ফিক্সড টার্ম পার্লামেন্টস অ্যাক্ট-এ সুনির্দিষ্ট করে বলা নেই। এখন পর্যন্ত এ বিধির ব্যবহার না হওয়ায় ভিন্ন একটি সরকার গড়তে এ সময়কে কিভাবে কাজে লাগানো যাবে সে ব্যাপারেও কেউ নিশ্চিত নয়।
দ্য গার্ডিয়ানের বিশ্লেষণ বলছে, বুধবার থেরেসা মে’র বিরুদ্ধে ডাকা আস্থা ভোটে লেবারদের জয় পাওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। থেরেসা মে-এর দল কনজারভেটিভ পার্টির অনেক এমপি তার ব্রেক্সিট পরিকল্পনাকে সমর্থন না দিলেও তারা সাধারণ নির্বাচন আয়োজনে আগ্রহী নয়। তাছাড়া, তারা চান না, নির্বাচনের মাধ্যমে লেবার পার্টিকে সরকার গড়ার সুযোগ করে দিতে। সেদিক থেকে লেবার নেতা করবিনের জন্য কনজারভেটিভদের সমর্থন পাওয়াটা দূরাশা। তাছাড়াও থেরেসা মে’র ডিইউপি জোটের অংশীদার দলগুলো ব্রেক্সিট চুক্তির বিপক্ষে ভোট দিলেও আস্থা বোটে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর পাশেই থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তারা।
ব্রেক্সিটপন্থী এমপিদের যারা থেরেসার চুক্তিকে সমর্থন দেননি তারাও বলেছেন আস্থা ভোটে তারা থেরেসাকেই সমর্থন দেবেন। গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সব মিলিয়ে থেরেসা অন্তত এ পর্যায়ের আস্থা ভোটের সম্ভাব্য ফল নিয়ে স্বস্তিতেই থাকতে পারেন।
এর আগে ১৯৭৯ সালে মাত্র এক ভোটের জন্য আস্থা ভোটে হেরেছিল লেবার সরকার। তখন নতুন নির্বাচনের আয়োজন করতে হয়েছিল। ওই নির্বাচনে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতায় আসীন হয়েছিলেন মার্গারেট থ্যাচার।