শীর্ষবিন্দু আন্তর্জাতিক নিউজ: নিজের নাম পরিবর্তন করলেন বাড়ি থেকে পালিয়ে আসা ধর্মত্যাগী সৌদি কিশোরী রাহাফ আল কানুন।
তিনি তার পূরো নাম রাহাফ মোহাম্মদ আল–কুনুন থেকে আল–কুনুন বাদ দেন। মঙ্গলবার টরেন্টোতে এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান তিনি। এছাড়া এসময় তিনি নিজেকে অনেক ভাগ্যবতী বলে আখ্যায়িত করেছেন।
রাহাফ বলেন, আমি অনেক ভাগ্যবতী কেননা আমি জানি সৌদি আরবে থেকে পালাতে গিয়ে অনেক মেয়ে নিখোঁজ হয়ে গেছেন। এবং অনেক মেয়েই সৌদি আরবের বাস্তবতাকে বাধ্য হয়ে মেনে নিচ্ছেন।
এর আগে গত সোমবার কানাডার এক গণমাধ্যমকে রাহাফ জানান, কানাডায় সে এখন পড়াশুনার পাশাপাশি একটি চাকরি নিয়ে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে চান। এছাড়া কানাডায় আশ্রয় পেয়ে অত্যন্ত আনন্দিত বলে জানিয়েছেন রাহাফ।
কানাডায় পৌঁছে নিজের চালচলন, পোশাকের ধরন পাল্টে ফেলেছেন সৌদি আরবের সেই বহুল আলোচিত টিনেজার রাহাফ মোহাম্মদ আল কুনুন (১৮)। সৌদি আরবের সংরক্ষণশীল পোশাক বাদ দিয়ে তার পরণে উঠেছে হাঁটু বের করা পোশাক। খাদ্যভ্যাসে এসেছে পরিবর্তন। সকালে নাস্তা খান মাংস দিয়ে তৈরি বেকন নামের খাবার। সঙ্গে থাকে একটি বিশেষ রকম কফি। হত্যার হুমকি থাকায় ২৪ ঘন্টা দেয়া হচ্ছে তাকে নিরাপত্তা। এমনই করে কানাডায় স্বাধীনতা ভোগ করছেন তিনি। তার পরিবার তাকে তার ওপর থেকে অধিকার হারানোর পর তিনি নিজের নামের শেষ অংশ আল কুনুন বাদ দিয়েছেন।
এখন তিনি পরিচিত হবেন শুধু রাহাফ মোহাম্মদ নামে
রাহাফ মোহাম্মদকে তার পরিবার ধর্ম ত্যাগ করার কারণে হত্যা করতে চায়- এমন অভিযোগ করে পালিয়ে তিনি চলে যান থাইল্যান্ডে। সেখান থেকে তার যাওয়ার কথা ছিল অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু তার পিতা সৌদি আরবের হেইল প্রদেশের গভর্নর।
ফলে কূটনৈতিক সুবিধা ব্যবহার করে রাহাফের পাসপোর্ট ও ভ্রমণ সংক্রান্ত কাগজপত্র জব্দ করান তিনি। তাকে দেশে ফেরত পাঠানোর পরিকল্পনা চলতে থাকে। কিন্তু বেঁকে বসেন রাহাফ। তিনি হোটেলে নিজেকে অবরুদ্ধ করে রেখে তৃতীয় কোনো দেশে আশ্রয় প্রার্থনা করেন। এক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যকে বেছে নেন। পরিস্থিতিতে হস্তক্ষেপ করে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর। তারা তাকে শরণার্থীর মর্যাদা দেয়। এরপর তাদের আহ্বানে কানাডা রাহাফকে আশ্রয় দেয়। রাহাফ সিউল থেকে কানাডার উদ্দেশে উড়াল দেন। তাকে কানাডায় গ্রহণ করেন সেদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
এরপর শুরু হয় মুক্ত পরিবেশে রাহাফের নতুন জীবন। সেখানে তাকে দেখা গেছে শীতের গরম কাপড় পরে আছেন। তবে তাতে শরীরের নিম্ন অংশের অর্থাৎ হাঁটু বেরিয়ে আছে। তাকে দেয়া হয়েছে টেলিফোন সুবিধা। বলা হচ্ছে, সংরক্ষণশীল সৌদি আরবে এমন সব মুক্ত স্বাধীনতা তিনি ভোগ করতে পারতেন না।
মঙ্গলবার তিনি সকালের নাস্তার ছবি স্নাপচ্যাটে পোস্ট করেছেন। তাতে রয়েছে কানাডার স্টাইলের বেকন ও ডিম। ক্যাপশনে লিখেছেন ‘ওএমজি বেকন’। সঙ্গে দিয়েছেন হার্টের ইমোজি ও কানাডার পতাকা। সকালে স্টারবাক থেকে কফি পানের ছবিও শেয়ার করেছেন। তাতে তার ওই হাঁটু বের করা ছবি রয়েছে।
উল্লেখ্য, গত সপ্তাহে সৌদি আরব থেকে পালিয়ে থাইল্যান্ড চলে আসেন রাহাফ। সেখান থেকে অস্ট্রেলিয়ার যাওয়ার পথে থাইল্যান্ড তাকে আঁটকে দেয়। ব্যাংকক থেকে রাহাফকে সৌদি আরবে ফেরত পাঠাতে চেয়েছিলো থাই কর্তৃপক্ষ। পরে বিমানবন্দরে নিজেকে অবরুদ্ধ করে রাখলে বিশ্ব গণমাধ্যমে শিরোনাম হন এই কিশোরী।
এরপর কানাডা সরকারের হস্তক্ষেপে কানাডায় আসেন রাহাফ। রবিবার টরোন্টোর পিয়ারসন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামার পর রাহাফের সঙ্গে ছিলেন কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড।
সৌদি আরবের অভিভাকত্ব আইন অনুযায়ী বাবার অনুমতি ছাড়া বাড়ির বাইরেও যেতে পারে না মেয়েরা। বাবার আদেশ না মানলে যেতে হয় জেলে। রাহাফের দাবি পরিবার তাকে প্রায়ই হত্যার হুমকি দিতো।