শীর্ষবিন্দু আন্তর্জাতিক নিউজ: সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যার পর থেকে তার হত্যাকাণ্ড নিয়ে ভয়াবহ তথ্য প্রকাশিত হয়েছে বিভিন্ন মিডিয়া ও গোয়েন্দা রিপোর্টগুলোতে। সেই ধারাবাহিকতা এখনও শেষ হয়নি। সর্বশেষ চাঞ্চল্যকর চারটি গোপন ফোনালাপ প্রকাশিত হয়েছে আলজাজিরায়।
যাতে ওই হত্যাকাণ্ডের পেছনে যুবরাজ মুহাম্মাদ বিন সালমানের প্রত্যক্ষ ভূমিকা থাকার বিষয়টির দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। ওই ফোনালাপগুলোতে কে পরিকল্পনা করেছে, কে কী নির্দেশ দিয়েছে, ইত্যাদি বিষয়গুলোও উঠে এসেছে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা চারটি ফোনালাপের আলাদা চারটি শিরোনাম দিয়েছে।
বুলেট: এই ফোনকলগুলো ইঙ্গিত করছে যে, উক্ত হত্যাকাণ্ড সৌদি যুবরাজ মুহাম্মাদ বিন সালমানই ঘটিয়েছেন। ফোনালাপে এমন কিছু ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে, যাতে তার সাংবাদিক জামাল খাশোগির প্রতি ঘৃণা, ঔদ্ধত্য ও পীড়াপীড়ি বোঝা যায়। তবে সৌদি কর্মকর্তারা এসব ফোনালাপের বিষয়টি অস্বীকার করেন এবং এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে রাজি হননি।
দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের রিপোর্টে জানা যায়, ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে সৌদি প্রিন্স তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী তুর্কি আদ্দাখীলের সঙ্গে ফোনালাপে বলেন, তিনি সাংবাদিক খাশোগির বিরুদ্ধে ‘বুলেট’ ব্যবহার করবেন যদি তিনি সৌদি সরকারের সমালোচনা থেকে বিরত না হন এবং দেশে ফিরে না আসেন।
পত্রিকাটি ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে প্রস্ততকৃত গোয়েন্দা কর্মকর্তার রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে এই তথ্য প্রকাশ করেছে।
পত্রিকাটি আরও বলছে, মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার প্রস্তুতকৃত রিপোর্টে বিস্তারিত তথ্য রয়েছে, যাতে দেখা গেছে, সৌদি যুবরাজ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটার অনেক আগ থেকেই বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন পর্যালোচনা করেছেন।
তুর্কি আদ্দাখিলের সঙ্গে কথোপকথনে তিনি বলেন, খাশোগিকে বুঝিয়ে যদি সহজে দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব না হয় তাহলে তাকে শক্তি প্রয়োগ করে আনা উচিত। এই উভয় রাস্তায় যদি তাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে আমরা ব্যথ হই তাহলে তার বিরুদ্ধে ‘বুলেট’ব্যবহার করা হবে।
সুযোগ দেয়া: দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট দাবি করেছে, মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছে, সৌদি যুবরাজই ইস্তান্বুলে খাশোগির হত্যার আদেশ দিয়েছিলেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য মিডিয়া এই খবর গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশ করেছে।
সিআইএ অনেক তথ্য পরীক্ষা–নিরীক্ষা করে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে। তার মধ্যে গুরুত্বর্পূণ একটি হলো, সৌদি যুবরাজের ছোট ভাই ওয়াশিংটনে সৌদি রাষ্ট্রদূত খালিদ বিন সালমানের সঙ্গে নিহত সাংবাদিক জামাল খাশোগির কথোপকথন। তিনি তাকে ফোনে তার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র বের করার জন্য ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেটে যেতে বলেন্ এবং সবকিছু নিরাপদ হবে বলে আশ্বাস দেন।
পত্রিকাটি জানায়, মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা জামাল খাশোগির সঙ্গে খালিদ বিন সালমানের ফোনকলটি তদন্ত করে জানায়, এই কলটি তিনি দিয়েছেন মূলত তার বড় ভাই যুবরাজ মুহাম্মাদ বিন সালমানের আবেদনের প্রেক্ষিতে। তবে ঘটনা ঘটার পর রাষ্ট্রদূত তার টুইটার অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে খুব তাড়াতাড়ি বিষয়টি অস্বীকার করেন। যাতে বিষয়টি আরও সন্দেহপূর্ণ হয়ে যায়।
তার মাথা নিয়ে এসো: মোহাম্মাদ বিন সালমানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী যাকে তার ডানহাত হিসেবে গণ্য করা– সৌদ আল–কাহতানি ২ অক্টোবর ২০১৮ ইস্তান্বলের সৌদি কনস্যুলেটের একটি কক্ষে ঘাতক টিমের সঙ্গে স্কাইপে কথা বলেন। তাদের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি সেখানে অবরুদ্ধ জামাল খাশোগির সঙ্গেও কথা বলেন। উক্ত কথোপকথনে কাহতানি তাকে গালমন্দ করছিল এবং খাশোগি সেগুলোর জবাব দিয়েছিলেন। পরে তিনি হত্যাকারী টিমকে তাকে হত্যার নির্দেশ দেন। তিনি তাদেরকে বলেন, এই কুকুরটার মাথা আমার কাছে নিয়ে এসো। বিষয়টি বেশ কিছু আরবি ও তুর্কি সূত্রের বরাতে প্রকাশ করেছে সংবাদ সংস্থা রয়টার্স।
উল্লেখ, অভিযোগ রয়েছে মোহাম্মাদ বিন সালমানের ঘনিষ্ঠ কাহতানিই রিয়াদে বসে এ হত্যাকাণ্ড পরিচালনা করেছেন।
মিশন সম্পন্ন: নিউইয়র্ক টাইমস জানায় যে ২ অক্টোবর খাশোগি হত্যাকাণ্ড ও ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেটের অভ্যন্তরে তার দেহ টুকরা টুকরা করে ফেলার পরপরই প্রভাবশালী সৌদি গোয়েন্দা কর্মকর্তা মাহির আল–মুতরিব যাকে হত্যাকারী দলের নেতা বলে মনে করা হয়– সৌদি প্রিন্সের এক সহযোগীর সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। সেখানে তিনি তাকে বলেন, “তোমার মুনীবকে বল মিশন সম্পন্ন হয়ে গেছে”।
সংবাদপত্রটি জানায়, তুর্কি গোয়েন্দাদের কাছে এই ফোনকল রেকর্ড আছে। তারা সিআইএ পরিচালক জিনা হাস্পেলকে বিষয়টি শুনিয়েছেন। মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বিশ্বাস করেন ‘তোমার মুনিব’ দ্বারা সৌদি প্রিন্সের দিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে।