শীর্ষবিন্দু আন্তর্জাতিক নিউজ: আইসিস ব্রাইড বা আইএসের পাত্রী বলে পরিচিত শামিমা বেগমকে (১৯) নিয়ে বিতর্ক শেষ হচ্ছে না। উল্টো তার পক্ষে ও বিপক্ষে দল ভারি হচ্ছে।
তিনি বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত একজন বৃটিশ নাগরিক। ২০১৫ সালে মাত্র ১৫ বছর বয়সে খাদিজা সুলতানা ও আমিরা আবাস নামের আরো দু’জন কিশোরীকে সঙ্গে নিয়ে বৃটেন থেকে পালান তিনি।
তুরস্ক হয়ে তারা চলে যান সিরিয়ায়। সেখানে জঙ্গি গোষ্ঠী আইএসে যোগ দেন। জঙ্গিদের বিয়ে করেন তারা। শামিমা বর্তমানে সিরিয়ার একটি শরণার্থী শিবিরে অবস্থান করছেন।
শনিবার তিনি একটি পুত্র সন্তান জন্ম দিয়েছেন। এর আগেই তিনি বৃটেনে ফিরে আসার আবেদন জানান সংবাদ মাধ্যমে। তা নিয়েই বিতর্ক।
শেষ পর্যন্ত তিনি বলেছেন, তাকে বৃটেনে ফিরতে দিলে তিনি জেলে যেতেও প্রস্তুত আছেন। তবে এই প্রথম তিনি নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালানো এই জঙ্গি গোষ্ঠীতে যোগ দেয়ার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। স্বীকার করেছেন তাকে আইএস ব্যবহার করেছে ‘পোস্টার গার্ল’ হিসেবে।
শামিমার এসব কাহিনী নিয়ে গত কয়েকদিন ধরেই বৃটিশ মিডিয়ায় তোলপাড় চলছে। মঙ্গলবারও প্রায় সব পত্রিকা এ বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে।
ওদিকে মধ্যপ্রাচ্যে বিবিসির প্রতিনিধি কুইনটিন সমারভিলে টুইট করেছেন। তিনি বলেছেন, আইএস সমর্থক শামিমা বেগম বিবিসি নিউজের কাছে স্বীকার করেছেন যে, মেয়েদের আইএসে টানার ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন একজন পোস্টার গার্ল। তিনি আইএসে যোগ দেয়ার কারণে বৃটেনের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন।
তিনি বিবিসি’কে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। তাতে শামিমা বলেছেন, প্রকৃতপক্ষেই আমি বৃটিশ কিছু মূল্যবোধকে সমর্থন করি। আমি বৃটেনে ফিরে যেতে চাই। সেখানে থিতু হতে চাই। পুনর্বাসিত হতে চাই।
শামিমা আরো বলেছেন, তাকে পোস্টার গার্ল হিসেবে ব্যবহার করাটা তার পছন্দের ছিল না। তিনি স্বীকার করেছেন জঙ্গি গ্রুপগুলোর প্রপাগান্ডা বিষয়ক ভিডিও দেখানো হতো।
এ ছাড়া ম্যানচেস্টার ও অন্যান্য স্থানে আইসিস আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে যেসব হামলা চালানো হয়েছিল সে সম্পর্কে জানতেন তিনি। তবে সেখানে নারী ও শিশুদের হত্যা করা হয়েছে এ বিষয়টি তিনি জানতেন না।
বিবিসির ওই প্রতিনিধি বলছেন, তবু উদ্বেগের বিষয় হলো এই যুবতী এখনও আইএসের প্রপাগান্ডায় বিশ্বাস করেন। কুইনটিন সমারভিলে বলেন, যখন আমি তাকে বললাম ইয়াজিদি নারীদের আইএস দাসী হিসেবে ব্যবহার করেছে। হত্যা করেছে। ধর্ষণ করেছে।
তখন জবাবে শামিমা বলেছেন, শিয়ারাও তো একই কাজ করেছে ইরাকে। কথার এক ফাঁকে শামিমা তার দু’দিন বয়সী ছেলেকে খাওয়াতে চলে যান অল্প সময়ের জন্য।
শামিমার বিস্তারিত ওই সাক্ষাতকারটি নিয়েছেন কুইনটিন সমারভিলে। তিনি বলেছেন, ছেলেকে নিজের সারা শরীর ঢেকে রাখা বোরকার ভিতর আগলে রাখছেন শামিমা। তিনি আশা করেন, যদি তাকে বৃটেনে ফেরার পর জেলে নেয়া হয় তাহলে তার এই ছেলের দেখাশোনার দায়িত্ব নেবে তার পরিবার।
এর মাত্র ২৪ ঘন্টা আগে শামিমা সাক্ষাতকার দিয়েছেন স্কাই নিউজ টেলিভিশনকে। সেখানে তিনি বলেন, সিরিয়ায় যুদ্ধের উত্তাল সময়টাতে তিনি শুধুই একজন গৃহবধু ছিলেন আইএস যোদ্ধার। তিনি আরো জানান, তিনি কখনোই বিপজ্জনক ছিলেন না। কোনো প্রপাগান্ডা চালান নি। লোকজনকে সিরিয়ায় যেতে কখনো উৎসাহিত করেন নি।
গত সপ্তাহে বৃটেন তো অবশ্যই, সেই সঙ্গে সারাবিশ্বে বিতর্কের ঝড় তুলে দিয়েছেন শামিমা। তিনি তখন দাবি করেন, তার তৃতীয় সন্তানকে নিয়ে তিনি বৃটেনে ফিরতে চান। তিনি ২০১৫ সালে সিরিয়া পৌঁছার মাত্র ১০ দিনের মধ্যে বিয়ে করেন ডাচ নাগরিক ইয়াগো রেইডিজক (২৭) কে। তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এরপর তাকে আর কোথাও দেখা যায় নি। সিরিয়ায় দুটি সন্তানের জন্ম দেন শামিমা। তারা মারা গেছে। এখন তৃতীয় সন্তানের মা তিনি। তার দাবি, এই সন্তানের উন্নত ভবিষ্যতের জন্য তিনি বৃটেনে ফিরতে চান।