শীর্ষবিন্দু আন্তর্জাতিক নিউজ: পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের মতো প্রটোকল ভেঙেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ইমরান খান প্রটোকল ভেঙে সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানকে বহনকারী গাড়ি চালিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন পাকিস্তানে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে।
সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান মঙ্গলবার ভারত সফরে আসেন। কিন্তু ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনায় তার এ সফর যেমন ম্লান হয়ে পড়েছে, তেমনি ব্যবসায়িক মিশনও অনিশ্চয়তায় পড়েছে।
তেল বিক্রি বাড়াতে বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতগতির প্রবৃদ্ধির অর্থনীতির দেশগুলোর পেছনে ছুটছেন সৌদি যুবরাজ। বিমানবন্দরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাকে স্বাগত জানান। তার ঐতিহ্যবাহী আলিঙ্গনে যুবরাজকে বুকে টেনে নেন। এর আগে দুদিনের পাকিস্তান সফরে ছিলেন সৌদি যুবরাজ। সেখান থেকেই ভারত সফরে আসেন তিনি।
অবশ্য নরেন্দ্র মোদি প্রটোকল ভেঙে ক্রাউন প্রিন্সকে স্বাগত জানাতে নিজে হাজির হয়েছিলেন বিমানবন্দরে। সাধারণত বিদেশী অতিথিকে স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরে যান না প্রধানমন্ত্রী। এক্ষেত্রে তিনি সরকারী কোনো কর্মকর্তা বা জুনিয়র কোনো মন্ত্রীকে পাঠান তিনি।
কিন্তু মঙ্গলবার রাতে সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান নয়া দিল্লি পৌঁছানোর পর সেই কাজটিই করেছেন মোদি। বিমানবন্দরে ক্রাউন প্রিন্সকে বহনকারী বিমানের কয়েক ধাপ পরেই মোদি ও মোহাম্মদ বিন সালমানের উষ্ণ করমর্দনরত হাত সহ ছবি প্রকাশ করেছেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রাভিশ কুমার।
তিনি লিখেছেন, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের এক নতুন অধ্যায়। এতে প্রধানমন্ত্রীর প্রটোকল ভাঙারও প্রশংসা করেন তিনি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক শক্তিশালী করার জন্য ভারত ও পাকিস্তান যেন প্রতিযোগিতা করছে।
বিমানবন্দর থেকে গাড়িবহর নিয়ে দুই নেতা রওনা হওয়ার আগে পাঞ্জাবি বাদ্যে জাঁকজমকপূর্ণ সংবর্ধনা দেয়া হয়েছে সৌদি যুবরাজকে। বুধবার সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হবে। এর আগে দুই পক্ষ থেকে বিবৃতি ও চুক্তির কথা ঘোষণা করা হবে। এর পর দুদিনের চীন সফরে বের হবেন সৌদি যুবরাজ।
পাকিস্তানে মোহাম্মদ বিন সালমানকে যে মর্যাদা দেয়া হয়েছে, ভারত সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রেখেছে। মোহাম্মদ বিন সালমান যেন কোনোভাবে মনোক্ষুন্ন না হন সেজন্য নরেন্দ্র মোদি প্রটোকল ভেঙে বিমানবন্দরে হাজির হয়ে থাকতে পারেন।
আজ বুধবার তাদের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স, অনলাইন এনডিটিভি। এতে বলা হয়, ভারতে পৌঁছানোর পরে রাষ্ট্রপতি ভবনে গার্ড অব অনার দেয়া হয়েছে প্রিন্স মোহাম্মদকে। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন ভারতের প্রেসিডেন্ট রাম নাথ কোভিন্দ ও প্রধানমন্ত্রী মোদি।
উল্লেখ্য, পাকিস্তান থেকেই ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের নয়া দিল্লি আসার কথা ছিল। কিন্তু ভারতীয় মিডিয়ার খবরেই বলা হয়, তাতে আপত্তি জানায় ভারত।
ফলে দু’দিনের সফর শেষে সোমবার সৌদি আরব ফিরে যেতে বাধ্য হন মোহাম্মদ বিন সালমান। পরে সেখান থেকে মঙ্গলবার রাতে তিনি ভারতে আসেন। এখানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও মোহাম্মদ বিন সালমানের মধ্যে যে আলোচনা হবে সেদিকে ঘনিষ্ঠ নজর রেখেছে বিশ্ব। এই দু’নেতা বিশেষ করে সন্ত্রাস ও বাণিজ্য নিয়ে আলোচনা করতে পারেন। ভারত আগেই জানিয়ে দিয়েছে, তারা এই বৈঠকে সন্ত্রাস ও নিরাপত্তার বিষয়টিকে গুরুত্ব দেবে।
উল্লেখ্য, ভারতে সাম্প্রতিক সময়ে যেসব সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে তার জন্য বার বার আঙ্গুল তোলা হয়েছে পাকিস্তানের দিকে, যদিও পাকিস্তান এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
সর্বশেষ কাশ্মিরের পালওয়ামায় গত ১৪ই ফেব্রুয়ারি সন্ত্রাসী হামলা চালায় জঙ্গি সংগঠন জৈশ ই মোহাম্মদ। এরা পাকিস্তান ভিত্তিক সংগঠন। ওই হামলায় ভারতের কমপক্ষে ৪০ জন সিআরপিএফ সদস্য নিহত হন। এ নিয়ে দুটি দেশের মধ্যে বাকযুদ্ধ চলছে। ঠিক এমনই এক মুহূর্তে পাকিস্তান সফর করেন ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান। সেখানে তিনি ২০০০ কোটি ডলারের চুক্তি স্বাক্ষর করেন। পাকিস্তানকে সৌদি আরবের প্রিয় দেশ বলে আখ্যায়িত করেন। নিজেকে সৌদি আরবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত হিসেবে বিবেচনা করার আহ্বান জানান। এসব কথার দিকেই দৃষ্টি রেখেছে ভারত।
ওদিকে ভারত ও সৌদি আরবের মধ্যকার সম্পর্ককে গুরুত্বপূর্ণ আখ্যায়িত করেছেন সৌদি ক্রাউন প্রিন্স। তিনি বলেন, আমরা নিশ্চিত হতে চাই যে, এই সম্পর্ক অব্যাহত থাকবে এবং দুই দেশের স্বার্থেই তার উন্নতি ঘটবে। (ভারতের) প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আমি নিশ্চিত আমরা সৌদি আরব ও ভারতের জন্য ভাল কিছু সৃষ্টি করতে পারবো।