লায়েকুজ্জামান: এবার বিটিসিএল থেকে টাকা ধার নিয়ে করা হয়েছে লুটপাট। ৮ লাখ ডলার ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে ল্যাপটপ ‘দোয়েল’ প্রকল্পের নামে। মালয়েশিয়া থেকে এলসিডি টেলিভিশনের যন্ত্র আনা হয় ল্যাপটপ তৈরির জন্য। সরকারের বেহাত হওয়া ওই টাকা জমা হয়েছে দু’টি বিদেশী একাউন্টে। এ অবস্থায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ল্যাপটপ দুর্নীতির অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাদের গত মাসের সভায় ওই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বর্তমান সরকার আমলে দেশে ল্যাপটপ উৎপাদনের সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর ২০১০ সালের মে মাসে টেলিফোন শিল্প সংস্থা (টেশিস), মালয়েশিয়ান কোম্পানি টিএফটি ও বাংলাদেশের কোম্পানি ২ এম করপোরেশনের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। দীর্ঘ আলোচনার পর দেশে ল্যাপটপ উৎপাদন করতে ২০১১ সালের জানুয়ারি মাসে তিন সংস্থার মধ্যে একটি চূড়ান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তির শর্ত অনুসারে টেশিস-এর মালিকানা থাকে ৩০ শতাংশ, বাকি ৭০ শতাংশের মালিকানা পায় মালয়েশিয়ান টিএফটি ও বাংলাদেশের ২ এম করপোরেশন। তবে চুক্তি স্বাক্ষরিত হলেও মালয়েশিয়ান টিএফটি ও ২ এম করপোরেশন তাৎক্ষণিক কোন দৃশ্যমান বিনিয়োগ করা থেকে বিরত থাকে। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বিটিসিএল থেকে ২৫ কোটি টাকা ধার নিয়ে প্রকল্পের কাজ শুরু করা হয়। এর মধ্যে মালয়েশিয়ান কোম্পানি টিএফটি তাদের বিনিয়োগকৃত ৬ লাখ ডলার ফেরত চেয়ে একটি চিঠি দিয়ে ল্যাপটপ প্রকল্প থেকে তাদের অংশীদারিত্ব প্রত্যাহারের ইচ্ছা ব্যক্ত করে। তাদের চিঠি থেকে জানা যায়, তারা ৬ লাখ ডলার বিনিয়োগ করেছে। তাদের বিনিয়োগকৃত ৬ লাখ ডলারের মধ্যে ৪ লাখ ডলারই বাংলাদেশে আসেনি। ওই অর্থ ল্যাপটপ প্রকল্পের কাজ পেতে ঘুষ হিসেবে একজন বাংলাদেশী নাগরিকের নামে মালয়েশিয়ার পেনাং ও যুক্তরাজ্যের নিউ ইয়র্কের ব্যাংকে জমা হয়েছে। ওই অর্থের মধ্যে ২ লাখ ৯৯ হাজার ডলার জমা হয়েছে মালয়েশিয়ার পেনাং-এর এইচএসবি ব্যাংকে বাংলাদেশের নাগরিক ইকবালের নামে। ২০১১ সালের ১১ই জুলাই মালয়েশিয়ার টিএফটি কোম্পানি ওই টাকা জমা দেয়। একই ভাবে ৭৫ হাজার ডলার জমা হয় নিউ ইয়র্কের টিডি ব্যাংকে চৌধুরী এসোসিয়েটসের নামে। ওই অর্থও জমা দেয় মালয়েশিয়ার টিএফটি কোম্পানি। সূত্রমতে ওই ঘুষের টাকা জমা দেয়ার পর জমার খবর নিশ্চিত করতে মালয়েশিয়ার টিএফটি কোম্পানির ম্যানেজার মাইকেল ওয়াং উল্লিখিত ইকবালের ঢাকাস্থ শেরাটন হোটেলের ঠিকানায় একটি চিঠি লেখেন। পরবর্তীকালে তিনি বাংলাদেশ সরকারকেও চিঠি লিখে ঘুষ লেনদেন করার কথা জানান। এ ঘটনার মধ্যে ল্যাপটপ উৎপাদন করতে মালয়েশিয়া থেকে যন্ত্রাংশ আমদানি করা হয়। সূত্রমতে সেখানেও মাত্র ১ লাখ ডলারের যন্ত্রাংশ আমদানি করে দাম দেখানো হয় ১০ লাখ ৬ হাজার ডলার। ওই সব যন্ত্রপাতি আমদানির পর এ নিয়ে তোলপাড় শুরু হয় টেশিস-এ। ল্যাপটপ উৎপাদনের জন্য আমদানি করা যন্ত্রপাতি পরীক্ষার জন্য বুয়েট বিশেষজ্ঞদের কাছে পাঠানো হয়। তাদের পরীক্ষায় পাওয়া যায় আমদানিকৃত যন্ত্রপাতি আসলে ল্যাপটপ তৈরির নয়, ওগুলো এলসিডি টেলিভিশন তৈরির যন্ত্রাংশ। টেশিস-এর সে সময়ের এমডি মোহাম্মদ ইসমাইল একটি সভা ডেকে ঘুষ- দুর্নীতি বিষয়ক নথিপত্র দুদকে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন, কিন্তু এর আগেই তিনি রহস্যজনক বদলি হয়ে যান। পরবর্তীকালে সরকার ল্যাপটপের ওই প্রকল্প বাতিল করে নতুন ভাবে ল্যাপটপ উৎপাদনের প্রকল্প গ্রহণ করে। বাতিল হয়ে যাওয়া ওই ল্যাপটপ প্রকল্পের ঘুষ-দুর্নীতি নিয়ে এখন তদন্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক।
Leave a Reply