রবিবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ০১:৫৬

মহাবিপদ সঙ্কেতে থেরেসা মে: নিজ মন্ত্রিপরিষদে উৎখাতের পরিকল্পনা

মহাবিপদ সঙ্কেতে থেরেসা মে: নিজ মন্ত্রিপরিষদে উৎখাতের পরিকল্পনা

শীর্ষবিন্দু নিউজ: ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে নিজ দলেই বিদ্রোহের শিকার। মে-কে উৎখাতে খোদ তার নিজ মন্ত্রিসভার সদস্যরা পরিকল্পনা করছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, থেরেসাকে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরানোর পাশাপাশি আগামী বছর নেতৃত্ব নির্বাচনের আগ পর্যন্ত তার জায়গায় ‘অন্তবর্তী নেতা’ নির্বাচনের কথাও ভাবছেন মন্ত্রিসভার সদস্যরা। তবে অন্তর্বর্তী নেতা হিসেবে বেছে নেওয়া হবে, তা নিয়ে ভিন্নমত রয়েছে দলের অভ্যন্তরে। দলের ব্রেক্সিটপন্থী এবং বিরোধীদের পছন্দ ভিন্ন ভিন্ন নেতাদের।

ব্রেক্সিট ইস্যুতে তার ওপর প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দিতে বলা হয়েছে। তাকে সরিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা চলছে পর্দার আড়ালে। রাজপথে শনিবার প্রায় ১০ লাখ মানুষ ব্রেক্সিট ইস্যুতে দ্বিতীয় গণভোটের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে।

ফলে থেরেসা মে এখন কোনপথে হাঁটবেন! তাকে নিজ দল কনজার্ভেটিভ পার্টির অনেক সিনিয়র নেতা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি পদত্যাগের প্রতিশ্রুতি দিলেই তার ব্রেক্সিট ইস্যুতে সমর্থন দেবেন তারা।

এমন অবস্থায় তার বিরুদ্ধে মন্ত্রীপরিষদের কিছু সদস্য যে প্রচেষ্টা নিয়েছেন তাকে মন্ত্রপরিষদের অভ্যুত্থান হিসেবে আখ্যায়িত করছে বৃটিশ বিভিন্ন গণমাধ্যম। বলা হচ্ছে, এমন অভ্যুত্থান বা পরিকল্পনার কারণে থেরেসা মের জন্য ১০ ডাউনিং স্ট্রিটের দিন ফুরিয়ে এসেছে। হয়তো আর কয়েকটা দিন তিনি সেখানে থাকতে পারেন। অর্থাৎ এর মধ্যেই তাকে পদ থেকে সরে যেতে হবে।

তাহলে কে তার হাল ধরবেন! হ্যাঁ, এমন ব্যক্তিও বাছাই করা হয়েছে। বলা হয়েছে, থেরেসা মে’কে পদ থেকে সরিয়ে দিয়ে সে পদে বসানো হবে ডেভিড লিডিংটন অথবা মাইকেল গভ’কে। এমন খবর দিয়েছে অনলাইন স্কাই নিউজ।

দলটির আইনপ্রণেতারা বিবিসি-কে বলেছেন, ইউরোপের সঙ্গে পরবর্তী পর্যায়ের আলোচনার দায়িত্বে থেরেসা আর থাকবেন না, এমন নিশ্চয়তা পেলে অনিচ্ছা সত্ত্বেও তার চুক্তি অনুমোদন করতে পারেন তারা। মন্ত্রিসভার সদস্যরা তার বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানের ষড়যন্ত্র করছে, সংবাদমাধ্যমে এমন খবর প্রকাশের পরই বিবিসি-র কাছে এ ব্যাপারে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেন তারা। তবে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে কনজারভেটিভ পার্টির অভ্যন্তরে কোনও ধরনের অভ্যুত্থানচেষ্টার খবর নাকচ করে দেওয়া হয়েছে।

থেরেসা মে-র ওপর পদত্যাগের চাপ বাড়া কিংবা সিনিয়র মন্ত্রীদের অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়ে কাজ ভাগাভাগির খবরও অস্বীকার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। তবে বিবিসির রাজনৈতিক সম্পাদক লরা কুয়েনসবার্গ বলেছেন, ‘মারাত্মক টানাপড়েন’ চলছে।

বিবিসি জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পদত্যাগের প্রতিশ্রুতি দিলে নিজের ব্রেক্সিট চুক্তিতে দলীয় এমপিদের সমর্থন পেতে পারেন থেরেসা মে। কনজারভেটিভ পার্টির সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমনটাই আভাস মিলেছে।

এদিকে ব্রেক্সিট বাস্তবায়নে বিলম্বের জন্য আইনপ্রণেতাদের সমালোচনা করার এক সপ্তাহের মাথায় এ নিয়ে ব্যাপক চাপের মুখে পড়েছেন থেরেসা মে। আগামী সপ্তাহে তার ব্রেক্সিট চুক্তি নিয়ে পার্লামেন্টে তৃতীয় দফায় ভোটাভুটির কথা রয়েছে। তবে আইনপ্রণেতাদের কাছে লেখা এক চিঠিতে তিনি বলেছেন, চুক্তির খসড়ায় যথেষ্ট সমর্থন পেলেই কেবল তিনি তা পার্লামেন্টে উত্থাপন করবেন। তার এই চিঠির পর কখন সেই প্রস্তাব পার্লামেন্টে উঠানো হবে তা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে।

এদিকে দ্য সানডে টাইমস জানিয়েছে, থেরেসা-র ডি ফ্যাক্টো ডেপুটি ডেভিড লিদিংটনকে তার বিকল্প হিসেবে এগিয়ে রাখা হচ্ছে। তিনি ব্রেক্সিট বিরোধী হিসেবে ভোট দিয়েছেন। ডেইলি মেইল জানিয়েছে, ব্রেক্সিটপন্থী পরিবেশ সম্পাদক মাইকেল গোভকে ঐকমত্যোর ভিত্তিতে বাছাই করা হয়েছে। তবে এক সিনিয়র আইনপ্রণেতা বিবিসি-কে বলেছেন, পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েও চুক্তি অনুমোদন করাতে পারবেন না থেরেসা। দুইবার বড় ব্যবধানে পরাজিত হওয়ার পর চুক্তি অনুমোদন করাতে তাকে এখনও প্রচুর পরিশ্রম করতে হবে।

ধারণা করা হচ্ছে, আগামী সপ্তাহে ব্রেক্সিট প্রক্রিয়ায় নিয়ন্ত্রণ হারাতে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। তার চুক্তির বিকল্প নিয়ে আগামী বুধবার পার্লামেন্টে বিতর্কের আয়োজন করতে যাচ্ছেন বিভিন্ন দলের আইনপ্রণেতাদের একটি গ্রুপ।

থেরেসার চুক্তির অন্তত ছয়টি বিকল্প নিয়ে আগামী কয়েক দিনে ভোটাভুটি অনুষ্ঠিত হতে পারে। এসব বিকল্পের মধ্যে রয়েছে: আর্টিকেল ৫০ বাতিল এবং ব্রেক্সিট বাতিল, আরেকটি গণভোট, প্রধানমন্ত্রীর চুক্তির পাশাপাশি একটি শুল্কঃবিভাগ প্রতিষ্ঠা এবং একক বাজারে প্রবেশাধিকার, কানাডা স্টাইলে একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি এবং চুক্তি ছাড়াই ব্রেক্সিট বাস্তবায়ন।

এ সপ্তাহেই ইউরোপীয় নেতারা ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ২৯ মার্চের পরিবর্তে ১২ এপ্রিল যুক্তরাজ্যের বেরিয়ে যাওয়ার বিষয়ে সম্মত হয়। আগামী সপ্তাহে থেরেসার চুক্তি অনুমোদন পেলে ব্রেক্সিট কার্যকরের সময়সীমা ২২ মে পর্যন্ত বাড়াতে রাজি আছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। আর তা না হলে বা কোনও বিকল্প পরিকল্পনা বাস্তবায়ন না হলে আগামী ১২ এপ্রিল স্বয়ংক্রিয়ভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যাবে যুক্তরাজ্য।

খবরে বলা হয়েছে, ব্রেক্সিট ইস্যুতে সরকারের ভিতরেই অস্বাভাবিক উত্তেজনাকর অবস্থা বিরাজ করছে। এমন ঝড়ো হাওয়ার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে’কে ক্ষমতাচ্যুত করা হতে পারে বলে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে। দ্য সানডে টাইমসকে মন্ত্রিপরিষদের ১১ জন মন্ত্রী বলেছেন, তারা চান প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে পদ থেকে সরে দাঁড়ান। আর তাতে তার পদে নতুন কাউকে বসানোর পথ তৈরি হোক।

যদি তেরেসা মে পদ ছেড়ে দেন তাহলে অন্তর্বর্তী তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নাম করা হয়েছে তেরেসা মে’র ডেপুটি ডেভিড লিডিংটনের। তবে বেশ কিছু সদস্য এক্ষেত্রে মাইকেল গভ-এর প্রতি তাদের সমর্থন দিতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন।

তেরেসা মে’র নীতি বিষয়ক সাবেক উপদেষ্টা জর্জ ফ্রিম্যান এরই মধ্যে টুইট করেছেন। তিনি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মের সব কিছু শেষ হয়ে গেছে। তিনি সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন। কিন্তু সারাদেশে আপনি দেখতে পাবেন তার প্রতি শুধুই ক্ষোভ। সবাই মনে করছে তাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। সরকার অচল হয়ে আছে। গণতন্ত্রের প্রতি আস্থা ধসে পড়েছে। এই অবস্থা চলতে পারে না। আমাদের এ অবস্থায় একজন নতুন প্রধানমন্ত্রী প্রয়োজন, যিনি (ব্রেক্সিট ইস্যুতে) কাজ করতে পারবেন।

দ্য সানডে টেলিগ্রাফ পত্রিকাকে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নিকি মরগান বলেছেন, তেরেসা মে’কে মন্ত্রীপরিষদের সদস্যদের বলা উচিত যে, তার সময় শেষ হয়ে গেছে। অন্যদিকে স্টিভ বেকার বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আসতে চাওয়া নেতাদের এখনই কর্মকান্ড শুরু করা উচিত।

কনজার্ভেটিভ দলের ব্যাকবেঞ্চার হিসেবে পরিচিত এমপি অ্যান-মেরি ট্রেভেলিয়ান লিখেছেন, আমাদের এখন এমন একজন নেতা প্রয়োজন, যিনি আমাদের দেশের ওপর আস্থা রাখেন এবং থেরেসা মের বাকি কাজ এগিয়ে নিতে চান।

বাজফিড অনুযায়ী, এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে’কে তারই কয়েকজন হুইপ বৈঠককালে জানিয়ে দিয়েছেন তার পদ ছেড়ে দেয়া উচিত। তবে থেরেসা মে তার পদে অনড় থাকতেই পছন্দ করছেন। ওদিকে শনিবার প্রায় ১০ লাখ মানুষ লন্ডনের রাস্তায় রাস্তায় বিক্ষোভ করেছেন। তাদের দাবি পিপলস ভোট। তারা দ্বিতীয় গণভোটের দাবিতে এমন বিক্ষোভ করেন।

ব্রেক্সিটপন্থি বিক্ষোভকারীরা উত্তর-পূর্ব লন্ডন থেকে রাজধানীমুখী বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছেন। শনিবারের বিক্ষোভে সাবেক ইউকিপ নেতা নাইজেল ফারাজে বক্তব্য রেখেছেন বেশ কিছু স্থানে। এই বিক্ষোভে যোগ দিয়েছিলেন স্কটল্যান্ডের ফার্স্ট মিনিস্টার নিকোলা স্টারজেনও।




Comments are closed.



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০৩১  
All rights reserved © shirshobindu.com 2012-2024