শীর্ষবিন্দু আন্তর্জাতিক নিউজ ডেস্ক: ওয়াশিংটন পোস্টের একজন কলামিস্ট দাবি করেছেন, অনুসন্ধানী সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের কেউ কেউ যুক্তরাষ্ট্রে প্রশিক্ষণ নিয়েছিল। বেশ কয়েকটি সৌদি ও মার্কিন সূত্র এ ব্যাপারে তাকে নিশ্চিত করেছেন বলে জানিয়েছেন কলাম লেখক ডেভিড ইগনাটিয়াস।
তার দাবি অনুযায়ী সিআইএ সে দেশের অন্যান্য নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংস্থাকে জানিয়েছে, হত্যাকারীদের কেউ কেউ টায়ার-ওয়ান নামে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অনুমোদিত একটি কোম্পানির কাছে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। ওয়াশিংটন-রিয়াদ সামরিক মৈত্রীর অংশ হিসেবে ওই প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালিত হতো। খাশোগি হত্যাকাণ্ডের পর তা বন্ধ করে দেওয়া হয়।
৫৯ বছর বয়সী খাশোগি একসময় সৌদি রাজপরিবারের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি থাকলেও পরবর্তী সময়ে সৌদি যুবরাজের কঠোর সমালোচকে পরিণত হন। গ্রেফতার এড়াতে দুই বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রে স্বেচ্ছা নির্বাসনে চলে যান খাশোগি।
দ্বিতীয় বিয়ের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করতে গত বছরের ২ অক্টোবর ইস্তানবুলের সৌদি কনস্যুলেটে গিয়ে হত্যার শিকার হন তিনি। প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে খাশোগি হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করে সৌদি আরব জানায়,ইস্তানবুলের কনস্যুলেটে জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়ে খুন হন তিনি। খাশোগি হত্যার অভিযোগে এ বছরের শুরুতে সৌদি আরবে ১১ সন্দেহভাজনের বিরুদ্ধে বিচার শুরু হয়।
ওয়াশিংটন পোস্টের কলাম লেখক ডেভিড ইগনাটিয়াসের দাবি, ইস্তানবুলের কনস্যুলেট থেকে খাশোগিকে অপহরণের পরিকল্পনা ছিল সৌদি হত্যাকারী দলটির। কনস্যুলেটে তুর্কি গোয়েন্দাদের লাগানো ক্ষুদ্র একটি রেকর্ডার থেকে পাওয়া রেকর্ডিং সূত্রে তিনি বলেন, আটক ও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য খাশোগিকে সৌদি আরবে ফিরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল।
ওই রেকর্ডিং এর শ্রুতিলিখন নিবিড়ভাবে পড়েছেন এমন এক সৌদি সূত্রকে উদ্ধৃত করে ইগনাটিয়াস জানিয়েছেন, খাশোগিকে একটি ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়েছিল, সম্ভবত তা শক্তিশালী ঘুমের ওষুধ ছিল। এরপর তার মাথা থেকে মুখ পর্যন্ত একটি ব্যাগের মধ্যে ঢুকিয়ে নিলে খাশোগি চিৎকার করে বলতে থাকেন: আমার দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, আমার অ্যাজমা আছে। এমন কোরো না।
ওই রেকর্ডিং এর ট্রান্সক্রিপ্ট সূত্রে আরও জানা গেছে, কেমন যেন ভোঁ ভোঁ শব্দ শোনা যাচ্ছিলো, হতে পারে বৈদ্যুতিক করাত ব্যবহার করে খাশোগির শরীর টুকরো টুকরো করা হয়েছে।
ইগনাটিয়াস জানিয়েছেন, হত্যার ঘটনা নিয়ে তিনি বেশ কয়েকটি মার্কিন ও সৌদি সূত্রের সঙ্গে কথা বলেছেন। নাম প্রকাশ না করে তারা জানিয়েছেন, সৌদি আরবের র্যাপিড ইন্টারভেনশন গ্রুপ নামের ওই দলটির কয়েকজন সদস্য যুক্তরাষ্ট্রে প্রশিক্ষণ পেয়েছে।
ইগনাটিয়াস বলেন, ‘সিআইএ অন্যান্য সরকারি সংস্থাগুলোকে সতর্ক করেছে যে, বিশেষ অভিযান সংক্রান্ত এ প্রশিক্ষণের কোনও কোনওটি আরকানসাসভিত্তিক কোম্পানি টায়ার ওয়ান গ্রুপ পরিচালনা করেছে। পররাষ্ট্র দফতরের লাইসেন্সের আওতায় তা হয়েছে।
সৌদি আরবের সঙ্গে মৈত্রীর অংশ হিসেবে খাশোগি হত্যাকাণ্ডের আগে ওই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল এবং সেটি আর নতুন করে চালু হয়নি। ইগনাটিয়াস আরও জানান, ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র-সৌদি নিরাপত্তা সহযোগিতা সংক্রান্ত আরও কিছু কর্মসূচি স্থগিত হয়ে গেছে।
খাশোগি হত্যার ঘটনায় সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সংশ্লিষ্টতার নানা আলামত মিললেও সৌদি কর্তৃপক্ষ সে অভিযোগ নাকচ করে আসছে।
মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ’র এক রুদ্ধদ্বার ব্রিফিং-এর পর যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে খুনি আখ্যা দিয়ে একটি প্রস্তাব পাস হয়। তবে হত্যাকাণ্ডে সৌদি যুবরাজের সংশ্লিষ্টতা প্রশ্নে প্রকাশ্যে কোনও অবস্থান নিতে নারাজ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।