শীর্ষবিন্দু আন্তর্জাতিক নিউজ ডেস্ক: বাড়ি থেকে পালিয়ে সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেটে (আইএস) যোগ দেওয়া যুক্তরাজ্যের সাবেক নাগরিক শামীমা বেগমের সদ্যোজাত সন্তানের মৃত্যু নিয়ে মুখ খুলেছে তার স্বামী ও জিহাদি যোদ্ধা ইয়াগো রিয়েদিজক।
সে বলেছে, তৃতীয় সন্তানের মৃত্যু হওয়ায় তারা এখন দুঃস্বপ্নের মধ্যে বাস করছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ডেইলি সান এ খবর জানিয়েছে।
২৭ বছরের রিয়েদিজক সিরিয়ার কুর্দি পরিচালিত কারাগারে আটক রয়েছে। সে জানায়, লন্ডনের সাবেক স্কুলছাত্রী শামীমা একজন ‘আদর্শ স্ত্রী’। তিন সন্তানের মৃত্যুতে তাদের মন ভেঙে গেছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য টাইমসকে রিয়েদিজক বলে, সবচেয়ে খারাপ যা হওয়ার তা ঘটেছে। শামীমা একা, মন ভাঙা ও তিন সন্তান হারিয়েছে।
এদিকে, ব্যাপকভাবে আলোচিত হওয়া আইএস বধু বলে পরিচিত শামীমা‘র জিহাদী স্বামী রিয়েদিজক’কে নিষিদ্ধ করেছে বৃটেন। তাকে বৃটেনের জাতীয় নিরাপত্তার ঝুঁকি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তার নাম উঠেছে বর্জনের তালিকায়।
অর্থাৎ বৃটেনে যারা প্রবেশ করতে পারবেন বা থাকতে পারবেন তাদের নামের মধ্যে তার নাম থাকবে না। শামীমা বেগমের নাগরিকত্ব কেড়ে নেয়ার কয়েক সপ্তাহ পরে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বৃটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ। বৃটিশ একটি ট্যাবলয়েড পত্রিকার অনলাইন সংস্করণে এ খবর দেয়া হয়েছে।
অবশ্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ শামীমারও নাগরিকত্ব বাতিল করেছেন জন নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কায়। সে এখন ইরাক সীমান্তের কাছে একটি শরণার্থী শিবিরে রয়েছে।
আইএস দম্পতির প্রথম দুই সন্তান ছিল এক ছেলে ও এক মেয়ে। ইউফ্রেতাস উপত্যকায় আইএসের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত যুদ্ধের সময় অপুষ্ঠিতে মৃত্যু হয় তাদের। সম্প্রতি ১৯ বছরের শামীমা জারাহ নামের তৃতীয় সন্তানের জন্ম দেয়। সুস্থ হয়ে জন্ম নিলেও ৮ মার্চ নিউমোনিয়ায় শিশুটির মৃত্যু হয়।
বৃটিশ আইন অনুযায়ী, বৃটিশ নাগরিক মায়ের গর্ভে জন্ম নেয়ায় সেও বৃটিশ বলে স্বীকৃত হয়। কিন্তু জন্মের কয়েক দিনের মধ্যেই নিউমোনিয়ায় শামীমার সেই ছেলেটি মারা গেলে এমন অবস্থায় শামীমাকে নিয়ে নিজের দেশ নেদারল্যান্ডে ফেরার প্রত্যয় ঘোষণা করেন ইয়াগো রিডিজক। কিন্তু সন্ত্রাসী সংগঠনে যোগ দেয়ার কারণে সেখানে গত জুলাই মাসে অনুপস্থিতিতে তাকে ৬ মাসের জেল দেয়া হয়েছে।
শামীমা বেগম বৃটেনে জন্মগ্রহণকারী বৃটিশ নাগরিক। ২০১৫ সালে পূর্ব লন্ডনের বাড়ি থেকে ১৫ বছর বয়সে আইএসে যোগ দিতে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায় শামীমা। ১৬ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই সে ২৩ বছরের রিয়েদিজককে বিয়ে করে। ২০১৪ সালের অক্টোবরে নেদারল্যান্ডের আর্নহেম থেকে সিরিয়ায় পাড়ি জমায় শামীমার স্বামী ইয়াগো।
রিয়েদিজক জানায়, সিরিয়া যাওয়ার পরে তারা আইএস খিলাফতের নিপীড়ন, ভীতু ও ধর্ষকামী বাস্তবতা দেখতে পায়। বিদেশি গুপ্তচর হিসেবে তাকে নির্যাতন করা হয় বলেও দাবি করে রিয়েদিজক।
এদিকে, শামীমার স্বামীকে বৃটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ নিষিদ্ধ করাকে শনিবার দিবাগত রাতে খুবই ভাল খবর বলে আখ্যায়িত করেছেন কনজার্ভেটিভ দলের এমপি ফিলিপ হলোবোন। তিনি বলেছেন, আমাদের এ বিষয়ে আরো নজর দেয়া উচিত। এমন হাজার হাজার আইএস যোদ্ধা আগামী কয়েক মাসের মধ্যে ইউরোপে ফিরবে। এতে হুমকি দেখা দেবে।