নিউজ ডেস্ক: আজ থেকে ব্রিটেনে শুরু হয়েছে পবিত্র রামাদ্বান মাস। আর রামাদ্বান মাসে ব্রিটিশ মুসলিম সম্প্রদায় যেন নির্ভয়ে মসজিদে যেতে পারে সে ব্যাপারে তাদের ফের আশ্বস্ত করেছে দেশটির পুলিশ।
শনিবার লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশ স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে তাদের আশ্বস্ত করা হয়। স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের অন্তর্ভুক্তি বিষয়ক প্রধান কমান্ডার মার্ক ম্যাকইওয়ান বলেন, লন্ডনে বসবাসরত আমাদের মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য রমজান খুব বিশেষ একটি সময়। মুসলিম সম্প্রদায়ের অধিকাংশ সদস্যের জন্য এটি বছরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়। এই শহর তার বহুত্ববাদী সংস্কৃতিকে ধারণের জন্য পরিচিত। এই শহর ভিন্ন ভিন্ন ধর্মবিশ্বাসকে গ্রহণ করে। ইবাদাতে অংশ নেওয়া যে কোনও ব্যক্তির নিরাপদ বোধ করা উচিত।
বিদ্বেষমূলক হামলার শিকার হলে পুলিশকে জানাতে এবং এর সমাধানে তাদের সাহায্য করতে মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন মার্ক ম্যাকইওয়ান।
২০১৯ সালের ১৫ মার্চ নিউ জিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে জুমার নামাজের সময় দুই মসজিদে প্রবেশ করে মুসল্লিদের ওপর গুলিবর্ষণ শুরু করে ট্রাম্প সমর্থক উগ্র মুসলিমবিদ্বেষী ব্রেন্টন ট্যারান্ট। প্রথমে আল নুর মসজিদ এবং সেখান থেকে গিয়ে লিনউডের আরেকটি মসজিদের মুসল্লিদের ওপর হায়েনার মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে সে। হামলার আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘দ্য গ্রেট রিপ্লেসমেন্ট’ নামের ৭৪ পাতার একটি কথিত ইশতেহার তুলে ধরে উগ্রপন্থী এই খুনি।
এতে বলা হয়, শ্বেতাঙ্গরা গণহত্যার শিকার এবং সে যুক্তরাষ্ট্রে গৃহযুদ্ধ ছড়িয়ে দিতে চায়। ইশতেহারে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ‘শ্বেতাঙ্গ পরিচয়ের নতুন প্রতীক’ হিসেবে আখ্যায়িত করে ব্রেন্টন ট্যারান্ট। একইসঙ্গে প্রস্তাব করা হয়, মুসলিমদের জন্য যেন একটি ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করা হয়। ক্রাইস্টচার্চের দুই মসজিদে হামলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই লন্ডনে এক মুসল্লির ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে।
পূর্ব লন্ডনের একটি মসজিদে জুমার নামাজ শেষে বাসায় ফেরার পথে হাতুড়ি নিয়ে তার ওপর চড়াও হয় অজ্ঞাত শ্বেতাঙ্গ সন্ত্রাসবাদীরা। এর মধ্যেই শ্রীলঙ্কায় তিন গির্জাসহ আটটি স্থানে আইএস জঙ্গিদের সিরিজ বিস্ফোরণের ঘটনায় মুসলিমদের নিরাপত্তা নিয়ে বাড়তি উদ্বেগ তৈরি হয়। এমন পরিস্থিতিতে আসন্ন রমজানে মুসলিম সম্প্রদায়ের উদ্বেগ প্রশমনে উদ্যোগী হয়েছে কর্তৃপক্ষ।
ব্রিটিশ সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী, রমজানে মসজিদগুলো ও মুসল্লিদের নিরাপত্তায় সরকারি তহবিলের পরিমাণ বাড়ানো হবে। বাড়তি অ্যালর্ম স্থাপন, সিকিউরিটি লাইটিং ও সিসিটিভি ক্যামেরার ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়া মুসল্লিদের সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় যে কোনও ব্যবস্থা নেবে কর্তৃপক্ষ।
ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র দফতরের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সরকার নিউ জিল্যান্ডের ভয়াবহ হামলার পর, বিশেষ করে রমজানের আগে মুসলিম সম্প্রদায়ের উদ্বেগের বিষয়টি স্বীকার করে। জনসাধারণের নিরাপত্তায়, বিশেষ করে ধর্মীয় উৎসব এবং পবিত্র দিনগুলোতে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে পুলিশ ও তাদের সহযোগীরা সম্ভব সবকিছুই করছে। এর মধ্যে আসন্ন রমজানে পুলিশি তৎপরতার পরিকল্পনাও রয়েছে।