শীর্ষবিন্দু নিউজ ডেস্ক: ২০১৭ সালে মার্কিন প্রতিষ্ঠানের সরবরাহকৃত পণ্যের কারণেই লন্ডনের গ্রেনফেল টাওয়ারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছিলো।
ওই অগ্নিকাণ্ডে হতাহতের পরিবারের পক্ষ থেকে মঙ্গলবার (১১ জুন) যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়ার আদালতে করা এক মামলায় এমনটাই দাবি করা হয়েছে।
২০১৭ সালের ১৪ জুন লন্ডনের নর্থ কেনসিংটনের বহুতল ভবন গ্রেনফেল টাওয়ারে ভয়াবহ আগুন লাগে। ভবনটিতে ১২৯টি ফ্ল্যাট ছিল। অগ্নিকাণ্ডে নিহতের সংখ্যা ৭৯ বলে জানা গিয়েছিল।
তখন জানানো হয়, ত্রুটিপূর্ণ একটি ফ্রিজ থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছিলো। এছাড়া বিতর্কিত ক্ল্যাডিং এবং ইনসুলেশনও টাওয়ারে আগুন ছড়ানোর জন্য দায়ী বলে বিবেচনা করা হচ্ছিলো। ওই ফ্রিজ, ইনসুলেশন এবং ক্ল্যাডিং সবই মার্কিন প্রতিষ্ঠানের।
মামলায় ৪২০ পাতার ওই এজাহারে বিচার দাবি করা হলেও ক্ষতিপূরণ হিসেবে কি চাওয়া হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। ওই আইনজীবী জানান, অস্বাভাবিক মৃত্যুর কারণে দায়েরকৃত মামলার মধ্যে এটা সবচেয়ে বড় মামলার মধ্যে একটি। হতাহতদের প্রতিনিধিত্ব করা আইনজীবী জানান, তারা নিহত ৭২ পরিবারের মধ্যে ৬৯ জনে ও আহত ১৭৭ জনের প্রতিনিধিত্ব করছেন।
মামলায় বলা হয়, মার্কিন প্রতিষ্ঠান হোয়ারপুলের তৈরি ফ্রিজের দাহ্য পদার্থ থেকে আগুনের উৎপত্তি হয়। এরপর মার্কিন ডিজাইনে তৈরি দাহ্য পদার্থের কারণেই আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। হোয়ারপুল ছাড়াও এর সরবরাহকারী আরকোনিক ইনক, ফরাসি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান সেইন্ট গোবেইনের মার্কিন শাখা সোলোটেক্স গ্রুপের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।
মামলায় প্রতিনিধিত্ব করা আইনজীবী জেফরি গুডম্যান বলেন, সেইসব পদার্থের কারণেই ‘গ্রেনফেল টাওয়ার আগুনের সিলিন্ডারে রুপ নেয়।’ এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে এই মামলার মাধ্যমে ওই অগ্নিকাণ্ডে দায়ী মর্কিন প্রতিষ্ঠানগুলোকে কাঠগড়ায় দাড় করানো হয়েছে।
হোয়ারপুল ও আর্কোঅনিক এক বিবৃতিতে হতাহতদের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে বলে, তারা তদন্তকাজে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কাজ করছে। হোয়ারপুলের দাবি, তাদের পণ্য স্বাভাবিক হিসেবেই সবাই ব্যবহার করতে পারে।
ব্রিটিশ তদন্তকারীদের তারা জানায়, প্রশ্নবিদ্ধ ওই ফ্রিজের মডেলে কোনও ত্রুটি পায়নি তারা।আরকোনিক জানায়, আদালতে তাদের বিরুদ্ধে মামলার জবাব দেবে তারা। এখনও কোনও মন্তব্য করেনি সেলোটিক। তবে গত মাসে তারা গ্রেনফেল টাওয়ারের অগ্নিকাণ্ডে তদন্তে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছিলেন।
অগ্নি নির্বাপন বিশেষজ্ঞরা জানান, ভবনটি ঢেকে থাকা পর্দার কারণে চতুর্থ তলা থেকে দ্রুতগতিতে আগুন পুরো ভবনে ছড়িয়ে পড়ে। ওই পর্দাটি অ্যালুমিনিয়াম ও পলিথিনের মিশেলে তৈরি রেইনবোন্ড দিয়ে তৈরি করা হয়। মামলায় বলা হয়, বাতাস বের হওয়ার রাস্তা না থাকায়ও আগুন নেভানো কঠিন হয়ে যায়।
গুডম্যান বলেন, এই দুই কারণে নিয়ন্ত্রণযোগ্য আগুন একদম নারকীয় আগুনে রুপ নেয়। ওই ঘটনার পর যেসব ভবনে এমন পর্দা আছে তা সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেয় ব্রিটিশ সরকার। এছাড়া ওই রেইনোবন্ড পিই প্যানেল বাজারজাত বন্ধ ঘোষণা করে আর্কোনিক।