মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৪, ০৫:১৭

দেশের প্রথম লোহার খনি মিললো হিলিতে

দেশের প্রথম লোহার খনি মিললো হিলিতে

শীর্ষবিন্দু নিউজ ডেস্ক: দিনাজপুরের হিলিতে দেশের প্রথম লোহার খনির সন্ধান পেয়েছেন বাংলাদেশ ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ অধিদফতরের (জিএসবি) কর্মকর্তারা। কূপ খনন করে পাওয়া নমুনা প্রায় দুই মাস ধরে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর এ ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছেন তারা।

বিশেষজ্ঞরা জানান, এখানে লোহার আকরিকের (যার বৈজ্ঞানিক নাম ম্যাগনেটাইট) খনির সন্ধান মিলেছে। দুয়েক দিনের মধ্যেই আনুষ্ঠানিকভাবে ঢাকায় জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব বা মন্ত্রী এ বিষয়ে ব্রিফ করবেন।

মঙ্গলবার (১৮ জুন) দুপুরে সরেজমিন হিলির ইশবপুরে খনির সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে চলমান ড্রিলিং কার্যক্রম সম্পর্কে খোঁজ নিতে গেলে ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ দল খনির সন্ধানের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তারা জানান, জরিপে আশানুরূপ ফলাফল পাওয়া গেছে। দেশের মধ্যে এটিই প্রথম লৌহ খনিজ পদার্থের খনি।

বাংলাদেশ ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ অধিদফতরের মতে, ‘বাংলাদেশ ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ অধিদফতর ২০১৩ সালে মুর্শিদপুরে প্রথম খনন কার্যক্রম শুরু করে।

সেই খনন কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় ও ফলস্বরূপ ছয় বছর পর হিলির ইশবপুরে গত ১৯ এপ্রিল থেকে দ্বিতীয় দফায় খনন কার্যক্রম শুরু করা হয়েছিল। আমরা যে আশায় এখানে ড্রিলিং কার্যক্রম শুরু করেছিলাম সেই কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ১৩৮০-১৫০০ ফুট গভীর পর্যন্ত ড্রিলিং কার্যক্রম চলার সময়েই এখানে খনির আশার আলো দেখতে পেয়েছিলাম। এখন পর্যন্ত এখানে আমরা যে পরিমাণ খনন কাজ চালিয়েছি এবং যে পরিমাণ নমুনা ভূ-গর্ভ থেকে সংগ্রহ করেছি, সেগুলো পরীক্ষাগারে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে মোটামুটি আমরা নিশ্চিত হয়েছি এখানে লৌহের আকরিকের অর্থাৎ ম্যাগনেটাইটের উপস্থিতি রয়েছে। এর উপস্থিতি অনেক বড় আকারে। এর থিকনেস প্রায় ৩শ’ ফুটের অধিক।

এ রকম থিকনেস যদি আরও ৫/৬ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে থাকে তাহলে এখানে বড় ধরনের রিজার্ভ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা আশা করছি ওই ধরনের রিজার্ভ যদি আশপাশের এলাকাসহ এখানে থাকে তাহলে সেটা দেশের মধ্যে এই প্রথম আয়রন খনি এবং বিশ্বের মধ্যে একটা স্থান করে নেওয়ার বেশ সম্ভাবনা রয়েছে।

এই অঞ্চলে প্রায় সাড়ে ৪শ’ কোটি বছর আগে সমুদ্র ছিল। আর এ কারণেই এখানে আগ্নেয় শিলার অবস্থান থাকায় লৌহ জাতীয় খনিজ পদার্থের খনি রয়েছে। আমরা নিশ্চিত হয়েছি এখানে উন্নতমানের লোহার খনি রয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এখান থেকে যেসব নমুনা বিভিন্ন ল্যাবে পাঠিয়েছিলাম সেগুলোর রিপোর্ট পাওয়ার পর জানা গেছে, বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে লোহার খনির সন্ধান পাওয়া গেছে সেসব খনির লোহার মান ৫০ শতাংশের নিচে।

আর বাংলাদেশের লোহার মান ৬৫ শতাংশের ওপরে বলে রিপোর্টে জানা গেছে। জয়পুরহাট বিসিএসআইআর পরীক্ষাগারে পরীক্ষায় এ তথ্য পাওয়া গেছে। এখানে কপার, নিকেল ও ক্রোমিয়ামেরও উপস্থিতি রয়েছে। এছাড়াও ১১৫০ ফুট গভীরতায় চুনাপাথরের সন্ধানও মিলেছে।’

বাংলাদেশ ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ অধিদফতরের ড্রিলিং ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের উপ-পরিচালক মাসুদ রানা বলেন, ‘হিলির ইশবপুরে কূপ খনন করে ধাতব খনিজ সম্পদের মজুত ও বিস্তৃতি এবং অর্থনৈতিক সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য বাংলাদেশ ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ অধিদফতরের একটি টিম গত ১৯ এপ্রিল থেকে ড্রিলিং কার্যক্রম চালাচ্ছে। এখানে আমরা ১৩২৪ ফুট গভীরে লোহার আকরিকের সন্ধান পেয়েছি।

আমাদের কাছে মনে হচ্ছে এই লোহার আকরিকের মজুত অনেক বেশি। কিন্তু এই মজুতটা বের করার জন্য এখানে আমাদের আরও অনেক ড্রিলিং করতে হবে। তাহলে আমরা বলতে পারবো যে এখানে কী পরিমাণ লোহার আকরিকের মজুত রয়েছে। এই লোহার আকরিক যদি আমাদের কাছে ভিজিবল হয় তাহলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’

তিনি আরও জানান, খনন করে এখন পর্যন্ত সেখানে যা পাওয়া গেছে তার মধ্যে ম্যাগনেটিক মিনারেল, হেমাটাইট, ম্যাগনেটাইট ও লিমোনাইট উপাদান পাওয়া গেছে। এ কারণে আরও ভালো কিছু পাওয়ার আশা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

উল্লেখ্য, হাকিমপুর (হিলি) উপজেলার আলিহাট ইউনিয়নের ইসবপুর গ্রামে খনির সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে গত ১৯ এপ্রিল থেকে বাংলাদেশ ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ অধিদফতরের ৩০ সদস্যের একটি দল তিন শিফটে দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা কাজ করছেন।

এর আগে ২০১৩ সালে হাকিমপুর উপজেলার মুর্শিদপুর গ্রামে খনিজ সম্পদ অনুসন্ধানে জরিপ কার্যক্রম চালানো হয়। সেখানে ১৫শ থেকে দুই হাজার ফুট গভীরে ম্যাগনেটিক মিনারেল, হেমাটাইট, ম্যাগনেটাইট ও লিমোনাইট পাওয়া যায়। আর ১২শ’ ফুট গভীরে পাওয়া যায় চুনাপাথর, যা অন্যান্য জায়গার চেয়ে অপেক্ষাকৃত অনেক কম গভীর। এর ওপর ভিত্তি করেই দ্বিতীয় পর্যায়ের জরিপ কার্যক্রম চালাচ্ছেন অনুসন্ধানী দল।




Comments are closed.



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০৩১  
All rights reserved © shirshobindu.com 2012-2024