শীর্ষবিন্দু নিউজ ডেস্ক: আসামে ৪০ লাখ মানুষের ভারতীয় নাগরিকত্ব কেড়ে নেয়া হয়েছে। রাজ্যটিকে অবৈধ অভিবাসীমুক্ত করার কর্মসূচির আওতায় এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
ফলে প্রত্যাবাসনের মুখে পড়ার ভয়ে অনেকেই আত্মহত্যা করেছেন– এমনটাই বলছেন ভুক্তভোগীদের স্বজন এবং অধিকার কর্মীরা। মে মাসের শেষ দিকে আশরাফ আলী (৮৮) তার পরিবারের সদস্যদের বলেন, রোজা ভাঙার জন্য খাবার সংগ্রহ করতে যাচ্ছেন তিনি।
পরে বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেন তিনি। এর আগে আশরাফ এবং তার পরিবারের সদস্যরা নিজেদের ভারতীয় প্রমাণ করতে সক্ষম হন। কিন্তু তাদের এক প্রতিবেশী এর বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ করেন। নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য আশরাফকে ফের তলব করা হয়। ব্যর্থ হলে তাকে আটকেরও হুমকি দেয়া হয়।
দ্য ন্যাশনাল রেজিস্ট্রার অব সিটিজেনস (এনআরসি) নামে পরিচিত তালিকাটি ১৯১৫ সালে তৈরি করা হয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল, কারা জন্মসূত্রে ভারতীয় এবং কারা প্রতিবেশী মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ পূর্ব পাকিস্তান থেকে এসেছে তা জানা।
গত জুলাইয়ে চূড়ান্ত খসড়া অনুযায়ী আসামের প্রায় ৪০ লাখ মানুষের নাম বাদ পড়ে। চলতি সপ্তাহে কর্তৃপক্ষ জানায়, এনআরসি তালিকা থেকে আরও এক লাখ বাসিন্দা বাদ পড়বেন।
অ্যাক্টিভিস্টরা বলছেন, ২০১৫ সালে নাগরিকত্ব তালিকা হালনাগাদ শুরুর পর নাগরিকত্ব হারিয়ে আটক হওয়ার ভয়ে আত্মহত্যা করেছে বহু বাঙালি মুসলিম ও হিন্দু।
সিটিজেন ফর জাস্টিস অ্যান্ড পিস সংস্থার জমশের আলী এ ধরনের ৫১টি আত্মহত্যার তালিকা দিয়েছেন। ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে হালনাগাদ তালিকার প্রথম খসড়া প্রকাশিত হওয়ার পর সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে।
গবেষক আবদুল কালাম আজাদ ২০১৫ সালে তালিকা হালনাগাদ শুরু হওয়ার পর থেকে এসব আত্মহত্যার বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করে আসছেন। যারা আত্মহত্যা করেছেন তাদের হয় সন্দেহজনক ভোটার ঘোষণা করা হয়েছে কিংবা তালিকা থেকে নাম বাদ দেয়া হয়েছে।
অধিকারকর্মী জমশের আলী বলেন, স্ত্রী মালেকা খাতুনের নাম তালিকা থেকে বাদ পড়ায় গত নভেম্বরে বারপেতা জেলার সামসুল হক (৪৬) আত্মহত্যা করেন। ২০০৫ সালে মালেকাকে সন্দেহজনক ভোটার বলে উল্লেখ করা হয়। মার্চে উদলগিরি জেলার দিনমজুর ভাবেন দাস (৪৯) আত্মহত্যা করেন।
তার স্বজনরা জানান, আইনি প্রক্রিয়ার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের ঋণ শোধ করতে না পারায় আত্মহত্যার পথ বেছে নেন তিনি। ৩০ বছর আগে তার বাবাও আত্মহত্যা করেছিলেন। তাকেও নিজের নাগরিকত্ব প্রমাণের নির্দেশ দিয়েছিলেন স্থানীয় ট্রাইব্যুনাল।
খারুপেটিয়া শহরাঞ্চলের স্কুলশিক্ষক নিরোদ বরণ দাস আত্মহত্যা করার পর তার বিছানা থেকে তিনটি কাগজ উদ্ধার করা হয়। যার একটি ছিল এনআরসি তালিকা থেকে তার নাম বাদ দেয়া।
হাতে লেখা একটি আত্মহত্যার নোট এবং তার স্ত্রীর প্রতি কিছু ছোট ঋণ শোধ করার আবেদন। নিরোদের ভাই অখিল চন্দ্র অভিযোগ করেন, তার ভাইয়ের মৃত্যুর জন্য এনআরসি কর্তৃপক্ষ দায়ী।