শুক্রবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:৩৩

চীনে মুসলিম শিশুদের বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে পরিবার থেকে

চীনে মুসলিম শিশুদের বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে পরিবার থেকে

শীর্ষবিন্দু আন্তর্জাতিক নিউজ ডেস্ক: চীনে মুসলিম শিশুদের তাদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে। এর আগে হাজার হাজার প্রাপ্তবয়স্ককে আটককেন্দ্রে আটকে রাখার খবর এসেছিলো আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোতে।

এবার শিশুদের বিচ্ছিন্ন করে রাখারা জন্য আবাসিক স্কুল তৈরির খবর মিলেছে। শুক্রবার ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন ও অন্যান্য নথি বিশ্লেষণ করে বিবিসির পক্ষ থেকে এ সংক্রান্ত একটি গবেষণা করা হয়।

বিবিসি জানায়, জিনজিয়াংয়ের একটি শহরের চার শতাধিক শিশু হারিয়ে গেছে। তাদের বাবা-মাকেও আটকে রাখা হয়েছে। হয় আটককেন্দ্রে নয়তো কারাগারে।  মুসলিমদের তাদের পরিচয় নিশ্চিহ্ন করার পাশাপাশি শিশুদেরও তাদের মূল থেকে সরানোর প্রক্রিয়া ছিলো এটা।

জিনজিয়াং প্রদেশের জনসংখ্যার ৪৫ শতাংশ উইঘুর মুসলিম। এই প্রদেশটি তিব্বতের মত স্বশাসিত একটি অঞ্চল। বিদেশি মিডিয়ার ওপর এখানে প্রবেশের ব্যাপারে কঠোর বিধিনিষেধ রয়েছে।

কিন্তু গত বেশ কয়েক ধরে বিভিন্ন সূত্রে খবর আসছে যে, সেখানে বসবাসরত উইঘুরসহ ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা ব্যাপক হারে আটকের শিকার হচ্ছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ মানবাধিকার সংগঠনগুলোও জাতিসংঘের কাছে এ ব্যাপারে উদ্বেগ জানিয়েছে।

উইঘুর মুসলিমদের গণহারে আটকের অভিযোগ এনেছে তারা। তবে চীন বরাবরই এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। তুরস্কে আশ্রয় নেওয়া অনেক উইঘুর চীনের নিপীড়নের কথা শুনিয়েছে। ইস্তানবুলে একটি হলে বেশ কয়েকজন বিবিসিকে শুনিয়েছেন তাদের অভিজ্ঞতা।

একজন নারী তার সন্তানদের ছবি দেখিয়ে বলেন, আমি জানি না তাদের কে দেখাশোনা করছে। আমার সঙ্গে তাদের কোনও যোগাযোগই নেই। আরেকজন মা তার তিন ছেলে ও এক মেয়ের ছবি হাতে নিয়ে কান্না করতে থাকেন। তিনি বলেন, আমি শুনেছি তাদের এতিমখানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

এমন ৬০ জনের পৃথক সাক্ষাৎকার নিয়েছে বিবিসি। তাদের সবার কথাতেই উঠে এসেছে শিশুদের নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার ঘটনা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জিনজিয়াং প্রদেশে চীনা সরকার উইঘুর মুসলিমদের বেশকয়েকটি ক্যাম্পে আটক রেখেছে।

যুক্তরাষ্ট্রে পররাষ্ট্র দফতরের হিসেব অনুযায়ী বিগত কয়েক বছর ধরে প্রায় ২০ লাখ মানুষ সেখানে বন্দি রয়েছে।  উইঘুর ছাড়াও কাজাখ, কিরগিজ মুসলিমরাও সেখানে বন্দি।

যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বেশ কয়েকটি দেশ ও মানবধিকার সংগঠন জানিয়েছে এই ক্যাম্পগুলো আটকশিবির ছাড়া কিছুই নয়। তবে চীন এই দাবি অস্বীকার করে বলেছে, এটা স্বেচ্ছামূলক উন্মক্ত প্রশিক্ষণ কেন্দ্র।

এক উইঘুর মুসলিম জানান, চীনে তার স্ত্রীকে ক্যাম্পে নেওয়া হয়েছে। তার ৮ সন্তান এখন চীনা কর্তৃপক্ষের অধীনে। তাদের সম্ভবত শিশু শিক্ষা ক্যাম্পে নেওয়া হয়েছে।

জার্মানির গবেষক অ্যাড্রিয়ান জেনজ বলেন,জিনজিয়াংয়ে স্কুল সম্প্রসারণের ব্যাপক কার্যক্রম চলছে। নতুন ডরমিটরি তৈরি হচ্ছে এবং সেখানে ধারণক্ষমতা বাড়ানো হচ্ছে। এখন রাষ্ট্র অনেক শিশুর ২৪ ঘণ্টা তদারকির সক্ষমতা অর্জন করেছে।

একই সঙ্গে তারা জিজ্ঞাসাবাদের ক্যাম্প তৈরি করছে। এসবই মুসলিমদের জন্য তৈরি করা হচ্ছে। মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘু শিশুদের কিন্টারগার্টেনের ভর্তির হার ৯০ শতাংশ বেড়েছে। ২০১৭ সালেই এই সংখ্যা ছিলো ৫ লাখেরও বেশি।  জিনজিয়াং প্রদেশে এই কিন্ডারগার্টেনের উন্নয়নে ১২০ কোটি ডলার ব্যয় করেছে চীন।

জেনজ বলেন, এই নির্মাণ কাজ আসলে তাদের আটক রাখার উদ্দেশ্যেই করা।  গত বছর এপ্রিলে প্রায় দুই হাজার শিশুকে আবাসিক স্কুলে ভর্তি করানো হয়।

সরকারের দাবি, শিশুরো যেন সামাজিক স্থিতিশীলতা ও শান্তি বজায় রাখে সেজনও এটি করা। তবে জেনজ মনে করেন এর উদ্দেশ্য আরও গভীর। তিনি বলেন, আবাসিক স্কুলের মাধ্যমে শিশুদের চিন্তাধারা পাল্টে সাংস্কৃতিক কাঠামো পরিবর্তন করা সম্ভব।

চীনে প্রায় দেড় কোটি উইঘুর মুসলমানের বাস। তাদের প্রতি চীনের আচরণ নিয়ে আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে রয়েছে বেইজিং। গত ডিসেম্বরে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় সেখানকার ‘উদ্বেগজনক’ আখ্যা দিয়ে ওই অঞ্চল সফরের প্রচেষ্টার কথা জানিয়েছিল। যুক্তরাজ্য সরকারও এনিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে চীনকে তাদের মনোভাব পরিবর্তনের তাগিদ দিয়েছে।




Comments are closed.



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০৩১  
All rights reserved © shirshobindu.com 2012-2024