শীর্ষবিন্দু নিউজ: সৌদি আরবের মিনায় মুসল্লিদের জড়ো হওয়ার মধ্য দিয়ে হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে।
ইতিমধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ২৫ লাখ মুসল্লি হজ পালনের লক্ষ্যে সৌদি আরবে পৌঁছেছেন। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) সন্ধ্যায় মক্কা থেকে মিনায় যাত্রা শুরু করে হাজিরা এরইমধ্যে মিনায় সমবেত হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ ধ্বনি দিয়ে মক্কা থেকে মিনার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা। শুক্রবার মিনায় রাত্রীযাপন শেষে মুসল্লিরা সারাদিন মিনাতেই অবস্থান করবেন।
এদিকে, বাংলাদেশি হাজিরা যেন সুন্দরভাবে সব কার্যক্রমে অংশ নিতে পারে, সেজন্য নেয়া হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি।
মিনায় পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে শনিবার সূর্যোদয়ের পরপর মিনা থেকে তারা আরাফাতের ময়দানের উদ্দেশে রওনা হবেন।
এবার কোনো ধরনের বিড়ম্বনা ছাড়াই বাংলাদেশিরা হজের মূলপর্ব সম্পন্ন করতে পারবেন সবাই এমনটাই প্রত্যাশা করছেন হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-হাব এর সভাপতি শাহাদাত হোসেন তসলিম।
মক্কায় অবস্থিত বাংলাদেশ হজ অফিসের কাউন্সিলর মোহাম্মদ মাকসুদুর রহমান বলেন, মিনা এবং আরাফাতে অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় হাজিরা বাড়তি সুবিধা পাবেন। তাঁবু ব্যবস্থাপনা অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে ভালো।
এবারের হজ ব্যবস্থাপনা ভালো এবং শেষ পর্যন্ত সুন্দরভাবেই এটি সম্ভব বলে মনে করেন হজ পালনে আসা গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।
হজ অত্যন্ত কষ্টের একটি ইবাদত হলেও এটি মেনে নিয়ে হজ পালনে প্রস্তুত হজযাত্রীরাও।
শনিবার (১০ আগস্ট) ফজরসহ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়ের পর তারা যাবেন মিনা থেকে ১০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত আরাফাতের ময়দানের দিকে। আরাফাতে যাওয়ার দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে মুসল্লিরা পায়ে হেঁটে, হুইল চেয়ারে, বাসে; যে যেভাবে পারেন পৌঁছাবেন। সবার শরীর সাদা কাপড়ে ঢাকা থাকবে। এদিন ‘লাব্বায়েক আল্লাহুম্মা লাব্বায়েক’ ধ্বনিতে মুখরিত হবে আরাফাতের ময়দান।
শনিবার আরাফাতের ময়দান থেকে মুসল্লিরা মাগরিবের নামাজ আদায় না করেই রওনা দেবেন মুজদালিফার দিকে। সেখানে পৌঁছে মাগরিব ও এশার নামাজ একসঙ্গে আদায় করবেন। এখানে খোলা আকাশের নিচে রাত যাপন করবেন তারা। তারপর মিনার জামারায় (প্রতীকী) শয়তানকে নিক্ষেপের জন্য পাথর সংগ্রহ করবেন।
রবিবার (১১ আগস্ট) সকালে ফজরের নামাজ শেষে হাজিরা আবার ফিরে আসবেন মিনায়। জামারাতে পাথর নিক্ষেপ ও পশু কোরবানির পর পুরুষরা মাথা মুণ্ডন করে ইহরাম ত্যাগ করবেন। এরপর পবিত্র কাবা শরিফে বিদায়ী তাওয়াফ করে হজের পূর্ণ আনুষ্ঠানিকতা শেষ করবেন হাজিরা।
হজের আনুষ্ঠানিকতা শেষে যারা আগে মদিনায় যাননি তারা মদিনায় যাবেন। সেখানে হাজিরা সাধারণত ৪০ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেন। পরে শুরু হবে হাজিদের দেশে ফেরার পালা।
সৌদি আরবের হজ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা হাতিম বিন হাসান কাদি বলেন, এ বছর হজযাত্রীদের কোনও মধ্যস্থতাকারী ছাড়াই ১৮ লাখের বেশি ভিসা অনলাইনে সরবরাহ করা হয়েছে। আমাদের জন্য এটি একটি বড় সফলতা।
৪০ বছর বয়সী মিশরের হজযাত্রী মোহাম্মাদ জাফর বলেন, ইসলামের এই পবিত্র স্তম্ভ পালনের মধ্যদিয়ে আমরা আমাদের জীবনের সকল পাপ মোচনের চেষ্টা করি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের এই সমাবেশ সত্যিই বিস্ময়কর।
এই প্রথমবারের মতো পবিত্র হজ পালনে আসা ৫০ বছর বয়সী আলজেরীয় এক নাগরিক বলেন, এটি একটি অবর্ণনীয় অনুভূতি। কেবলমাত্র আপনি এটা পালন করলে এই অনুভূতিটা বুঝতে পারবেন। তার নারী সঙ্গী বলেন, এটি একটি সুবর্ণ সুযোগ ও মুহূর্ত।
সৌদি আরবের নিরাপত্তা বাহিনীর মুখপাত্র বাসাম আতিয়া বলেন, হজযাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রের সকল সশস্ত্র বাহিনীকে মোতায়েন করা হয়েছে। আমরা মহান আল্লাহ’র অতিথিদে’ সেবা করতে পেরে গর্বিত।
ইসলামের পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভের একটি হচ্ছে পবিত্র হজ। ধারাবাহিকভাবে ধর্মীয় বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠান পালনের মধ্যদিয়ে হজ পালন করতে হয়। ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি’র প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, এবারের হজে অংশ নিচ্ছেন প্রায় ২৫ লাখ মানুষ। এদের বেশিরভাগই সৌদি আরবের বাইরের নাগরিক। শুক্রবার (৯ আগস্ট) রাতে মিনায় অবস্থান করবেন হাজিরা।