শীর্ষবিন্দু নিউজ ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ও বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের কড়া সমালোচনা করেছেন লন্ডনের মেয়র সাদিক খান। দু’জনকেই তিনি উগ্র ডানপন্থি নেতার উত্থান হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
ডনাল্ড ট্রাম্পকে তিনি ‘শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদীদের পোস্টার বয়’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। অন্যদিকে বরিস জনসনকে নিয়ে বলেছেন, এ যাবতকালের মধ্যে অধিক ডানপন্থি। সাদিক খান বলেন, ডনাল্ড ট্রাম্পের উত্থান দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শিক্ষাকে ক্ষীণ করে দিচ্ছে।
তিনি মনে করেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শিক্ষা ভুলে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। এ খবর দিয়েছে লন্ডনের প্রভাবশালী অনলাইন দ্য গার্ডিয়ান।
১৯৩৯ সালের ১লা সেপ্টেম্বর পোল্যান্ডে আগ্রাসন চালায় জার্মানি। সেখান থেকেই শুরু হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের। যুদ্ধ শুরুর ৮০তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে চলতি সপ্তাহান্তে একটি অনুষ্ঠান আয়োজিত হওয়ার কথা রয়েছে পোল্যান্ডের ওয়ারস’তে। ওই অনুষ্ঠানের আগ দিয়ে ট্রাম্পকে শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদীদের জন্য বৈশ্বিক পোস্টার বয় বলে আখ্যায়িত করেন সাদিক খান।
তিনি বলেন, ট্রাম্পকে অনুসরণ করছেন বরিস জনসনসহ ইউরোপের অনেক নেতা। গার্ডিয়ানের অবজার্ভারে এক নিবন্ধে সাদিক খান বলেছেন, বরিস জনসন ও ব্রেক্সিট পার্টির নেতা নাইজেল ফারাজে বৃটেনে একই রকম উগ্র-ডানপন্থি চিন্তাভাবনাকে সামনে এগিয়ে দিচ্ছেন।
অবজ্ঞা প্রকাশ করা হচ্ছে ইউরোপিয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রতি। এই ইইউ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল আরেকটি বিশ্বযুদ্ধ যাতে না হয় তা প্রতিরোধের জন্য। উল্লেখ্য, ১৯৩৯ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত স্থায়ী দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে কমপক্ষে ৮ কোটি ৫০ লাখ মানুষ নিহত হয়েছিলেন।
সাদিক খান বলেছেন, বৃটেনে প্রভাবটা দেখা যায়। এখানে নাইজেল ফারাজে ও তার ব্রেক্সিট পার্টি বরিস জনসনের অধীনে কনজার্ভেটিভ পার্টিতে খুব বেশি প্রভাবিত করে তাদেরকে ঠেলে দিয়েছে এমন এক অবস্থানে, যার ফলে তারা অধিক ডানপন্থি ও অসহিষ্ণু হয়ে উঠেছে।
বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ৩১ শে অক্টোবর ব্রেক্সিট কার্যকরের শেষ সময়সীমার আগে গত সপ্তাহে ৫ সপ্তাহের জন্য পার্লামেন্ট স্থগিত করার ঘোষণা দেন। এ বিষয়ে সাদিক খান বলেছেন, পার্লামেন্ট ও আমাদের গণতন্ত্রের প্রতি বরিস জনসনের অবজ্ঞা আমরা গত সপ্তাহে দেখেছি।
গার্ডিয়ান লিখেছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে লন্ডনের মেয়র সাদিক খানের বিরোধ পুরনো। তবে সেই বিরোধে সর্বশেষ আরো একটু উত্তেজনা যোগ করলেন এবার সাদিক খান। এ বছর জুনে বৃটেনে রাষ্ট্রীয় সফরে আসেন ট্রাম্প। এ সময়ে তার ভাষাকে ‘একবিংশ শতাব্দীর ফ্যাসিস্ট’দের সঙ্গে তুলনা করেন সাদিক খান।
ট্রাম্পকে বহনকারী এয়ারফোর্স ওয়ান বৃটেনের মাটি স্পর্শ করার আগেই তিনি এর জবাব দেন। সাদিক খানকে তিনি ‘স্টোন কোল্ড লুজার’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
ট্রাম্প বলেন, সাদিক খান সব হিসাবেই লন্ডনের মেয়র হিসেবে ভয়ানক সব কাজ করেছেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের সফররত প্রেসিডেন্টকে নিয়ে বোকামির মতো সব ‘ন্যাস্টি’ কাজ করেছেন। সাদিক খানকে আরো আক্রমণ করে ট্রাম্প বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নেতাকে আক্রমণ করে কথা বলার চেয়ে লন্ডনের অপরাধ দমনে মনোনিবেশ করা উচিত মেয়রের।
এ সপ্তাহান্তে গডানস্ক ও পোল্যান্ডের রাজধানী ওয়ারস’তে সফরে যাচ্ছেন সাদিক খান। গডানস্কে ছোড়া হয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রথম গুলিগুলোর একটি। তিনি বলেন, আমি বলছি না যে, আমরা ১৯৩০-এর দশকে অবস্থান করছি অথবা আরেকটি যুদ্ধ অপরিহার্য। তবে আমাদের সতর্ক হওয়া উচিৎ। আমরা যদি এখন থেকে পদক্ষেপ নেই তাহলে ভিন্ন কোনো পথে যাত্রা করতে পারবো।
তিনি বলেন, ক্ষমতাসীন ডানপন্থি ল অ্যান্ড জাস্টিস পার্টির অধীনে পোল্যান্ডও একইধরণের হুমকির সম্মুখীন। দলটি ৩০টিরও বেশি শহর ‘সমকামিতা মুক্ত অঞ্চল’ ঘোষণা করেছে।
তিনি বলেন, বর্তমানে ইহুদি-বিদ্বেষ ক্রমাগত হারে বেড়ে চলেছে। এমন সময় পোলিশ সরকার নাজি যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে দেশটির সংশ্লিষ্টতা নিয়ে কথা বলাকে অপরাধ হিসেবে ঘোষণা করেছে। এই অপরাধের শাস্তি হিসেবে কারাদ- নির্ধারণ করেছে। পদক্ষেপটিকে উদ্বেগজনক হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন তিনি।
ট্রাম্প একাধিকবার ন্যাটোর প্রয়োজন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। জনসনের প্রতি দৃঢ় সমর্থন জানিয়ে বলেছেন, বৃটেনের উচিৎ ইইউ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া। ট্রাম্প জানান, তার বিশ্বাস যে, নতুন বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী বৃটেনের জন্য মহান নেতা হিসেবে প্রমাণিত হবে যিনি, দেশটিকে স্বাধীনতা ও অর্থনৈতিক সাফল্যের নতুন পথে ধাবিত করবেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর ৮০তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে চলতি সপ্তাহান্তে ওয়ারস’তে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। অনুষ্ঠানটিতে যোগ দেয়ার কথা ছিল ট্রাম্পের।
তবে ফ্লোরিডার দিকে দ্রুত গতিতে এগিয়ে আসা ঘূর্ণিঝড় দরিয়ান নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে অবশেষে সফরটি বাতিল করেন তিনি। তার জায়গায় অনুষ্ঠানটিতে যোগ দেবেন ভাইস-প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স।