মুকুল হায়দার: চলছে হিন্দু ধর্মীয় সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজা। সুসজ্জিত হয়েছে মন্ডপগুলো। দুর্গাপূজা এলেই ধর্মীয় সম্প্রীতির এক অনন্য নজির গড়েন কলকাতার একটি এলাকার মুসলিমরা।
দুর্গাপূজা আর কালীপূজা এলে নিজ উদ্যোগে মন্ডপ থেকে শুরু করে সব আয়োজন সম্পন্ন করে সেই এলাকার মুসলিমরাই। গত ৬০ বছর ধরে এমনটাই হয়ে আসছে। বিবিসি
স্থানটির নাম মুন্সিগঞ্জ, কলকাতা বন্দরের কাছাকাছি খিদিরপুরে অবস্থিত এলাকাটি। এখানে একটি দুর্গাপূজার আয়োজনের মূল উদ্যোগটাই নেন মুসলিমরা।
এর কারণ মুন্সিগঞ্জে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বসবাস তেমন একটা নেই। সেখানে মুসলিমরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। তাই পূজা এলে মুন্সিগঞ্জের হিন্দুদের মন্ডপ তৈরিতে সাহায্য করে মুসলিমরা। হিন্দুরা পূজা করেন আর মুসলিমরা ঈদের মতো উৎসবে মেতে ওঠেন।
প্রতিবারের মতো এবারও মুন্সিগঞ্জের তিন রাস্তার মোড়ে প্যান্ডেল বানানো হয়েছে। দুর্গার মূর্তিও প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। এসব ধর্মীয় আচারে স্থানীয় হিন্দুদের সর্বাত্মক সহায়তা করেছে প্রতিবেশী মুসলিমরা।
পূজা কমিটির প্রধান প্রেমনাথ সাহা বলেন, ষাট বছর ধরে এভাবেই পূজা হয়ে আসছে। আমাদের পূর্বপুরুষরাও এভাবে হিন্দু-মুসলিম সহাবস্থানে, ধর্মীয় স¤প্রীতির দৃষ্টান্ত দেখিয়ে দুর্গাপূজা, কালীপূজা, ঈদও মহররম পালন করে এসেছেন। আমরাও সেভাবেই করি। এটা এই এলাকার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি।
তিনি বলেন, এবারের দুর্গাপূজায় এলাকার মুসলিম ছেলেরাই চাঁদা তুলে পূজার কাজে এগিয়ে এসেছেন। প্যাণ্ডেল তৈরি থেকে সব কাজে সাহায্য করেছে। গায়ে খেটেছে।
তিনি যোগ করেন, এই তো মহরম গেল। আমরাও মুসলিমদের মতো বাজার করেছি, খাবার বিলি করেছি, পানি দিয়েছি। এ নিয়ে কখনও কোনও সমস্যা হয় না এ পাড়ায়।
তিনি বলেন, ৯২ সালে বাবরি মসজিদ ভাঙার পরে যখন সারা ভারত জ্বলছিল, তখনও আমাদের মুন্সিগঞ্জ টেরই পায়নি বিষয়টি।
শুক্রবার পূজার জন্য অবশিষ্ট কাজ দেখছিলে সালমান সর্দার।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সালমান জানায়, এখানে পূজা হলে মনে হয় ঈদ এসেছে। স্কুল থেকে ছুটি পাই। পূজার কয়েকদিন আগে প্যান্ডেল তৈরির কাজ করে আনন্দ পাই। ঠাকুর দেখতে যাই। এরপর ফুচকা আর আইসক্রিমের দোকান বসে। সেগুলো খাই। নাগরদোলায় চড়ি।
পাশে দাঁড়িয়ে কথা শুনছিলেন পূজার আরেক উদ্যোক্তা শেখ বাবু। এগিয়ে এসে তিনি বলেন, এখানে হিন্দু-মুসলমান ভাই ভাই। তা পূজা আর ঈদ এলে যে কেউ বুঝতে পারবে।
এবারের পূজার চাঁদা তোলার দায়িত্বে ছিলেন মুহাম্মদ সেলিম নামের এক যুবক। তিনি বলেন, আগে পূজায় আর্টিস্ট এনে শো হত। এখন খরচ এত বেড়ে গেছে, সেসব বাদ দিতে হয়েছে। পাড়া-প্রতিবেশী আর রাস্তা থেকে চাঁদা তুলে এক লাখ ২০ হাজার রুপির মতো উঠেছে। তাই দিয়েছি ওদের। তাদের পূজা আনন্দে কাটুক এটাই চাই।