শীর্ষবিন্দু আর্ন্তজাতিক নিউজ: মার্কিন অভিযানে কোণঠাসা হয়ে নিজেকে উড়িয়ে দিয়েছেন আইএস প্রধান বাগদাদি। তাই এখন প্রশ্ন উঠছে ভয়াবহ এই জঙ্গি সংগঠনটির ভবিষ্যৎ নিয়ে।
বিশ্ব নেতারা ও আঞ্চলিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বাগদাদির মধ্যদিয়ে যদিও বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছে আইএস তবে এখনো তারা বিশ্বের জন্য বড় ধরনের হুমকি। ইরাক ও সিরিয়াতে সংগঠনটির অনেক সদস্য রয়েছে। পাশাপাশি সংগঠিত হচ্ছে তালেবান অধ্যুষিত আফগানিস্তানেও। ফলে রাতারাতি ইসলামিক স্টেটের হাত থেকে মুক্তি পাচ্ছে না বিশ্ব।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রামপ জানিয়েছেন, তুরস্ক সীমান্তের কাছে সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ ইদলিবের বারিশা নামক গ্রামেই বাগদাদিকে হত্যা করা হয়। অভিযানে কোণঠাসা হয়ে ধরা পড়া থেকে বাঁচতে নিজেই সন্তানসহ আত্মহত্যা করেন বাগদাদি।
তার নেতৃত্বেই বিশ্বের সব থেকে নৃশংস সশস্ত্র বাহিনীতে পরিণত হয় ইসলামিক স্টেট। এর সব থেকে ভালো সময়ে এটি ইরাক ও সিরিয়ার বড় অংশ শাসন করে যার আয়তন প্রায় বৃটেনের সমান।
ইন্টারনেট ব্যবহার করে ইসলামের একটি উগ্র ধারার প্রচার করতো ইসলামিক স্টেট। আর এভাবেই মগজ ধোলাই করে সমগ্র বিশ্ব থেকে সদস্য সংগ্রহ করতো তারা। সিরিয়া ও ইরাকে নিজেদের দখলকৃত অঞ্চলে ওইসব যোদ্ধাকে নিয়ে প্রশিক্ষিত জঙ্গিতে পরিণত করা হতো। নিজেদের ত্রাসের রাজত্বে নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন, অপহরণ ও দাস বিক্রির মতো বর্বর সব অপরাধের সঙ্গে যুক্ত ছিল আইএস সদস্যরা। নিজেদের দখলকৃত এলাকায় প্রতিষ্ঠা করেছিল মধ্যযুগীয় বর্বর শাসন ব্যবস্থা। তবে দীর্ঘদিন টিকেনি তাদের সাম্রাজ্য। নানামুখী আক্রমণে এ বছরের প্রথমদিকেই পতন ঘটে ইসলামিক স্টেটের সর্বশেষ ঘাঁটির।
তবে দখলকৃত কোনো এলাকা না থাকলেও টিকে আছে আইএস। অন্যান্য জঙ্গি সংগঠনের মতোই চালিয়ে যাচ্ছে সন্ত্রাসী কার্যক্রমও। তাই আইএসকে থামাতে সংগঠনের প্রধান বাগদাদি ছিল যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার প্রধান টার্গেট। দেশ দুটি এর আগেও বেশ ক’বার বাগদাদিকে হত্যার দাবি করলেও শেষ পর্যন্ত এর কৃতিত্ব নিয়ে নিলো যুক্তরাষ্ট্রই। তবে প্রশ্ন উঠছে এর মধ্যদিয়ে কী আসলেই আইএসকে থামিয়ে দেয়া যাবে?
লন্ডনের কিংস কলেজের প্রতিরক্ষা বিষয়ক অধ্যাপক আর্নেস ক্রিগ বলেন, বাগদাদির মৃত্যু হচ্ছে মূলত একটি প্রতীকী বিজয়। ইসলামিক স্টেট বলতে আমরা যে সংগঠনকে চিনি এটি হচ্ছে একটি ভার্চুয়াল বা ইন্টারনেটভিত্তিক জিহাদি সংগঠন। এর অনুসারীরা বিশ্বব্যাপী আইএসের নামে হামলা চালাতে পারে। অর্থাৎ কাউকে সরাসরিভাবে আইএসের সঙ্গে যুক্ত থাকতে হয় না শুধু তাদের মতবাদে বিশ্বাস করলেই চলে। ফলে এই বিশাল নেটওয়ার্ক একরকম নেতাবিহীনভাবেই পরিচালিত হয়ে থাকে।
আইএসের কাজ হচ্ছে শুধু ইন্টারনেটে তাদের উগ্র আদর্শের প্রচার। তাই সার্বিকভাবে বাগদাদিকে হত্যায় আইএসের এই ধরনের কার্যক্রম তেমনভাবে প্রভাবিত হবে না। একইসঙ্গে তাদের তথাকথিত খেলাফতের পতনের পরেও আইএস যেভাবে আফগানিস্তান, আফ্রিকার একাংশ ও মধ্যপ্রাচ্যে টিকে ছিল এখনো সেভাবেই তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে যাবে।
আইএস এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের ‘খলিফা’ বাগদাদির মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেনি। তবে ইরাকি রাজনৈতিক বিশ্লেষক হিওয়া ওসমান বলেন, শিগগিরই তারা বিষয়টি মেনে নেবে এবং তাদের নতুন নেতার নাম ঘোষণা করবে। আল কায়েদা প্রধান আল-জারকায়িকে যখন হত্যা করা হলো সংগঠনটি দ্রুতই তাদের নতুন নেতার নাম ঘোষণা করেছিল। এমনকি ওসামা বিন লাদেনকে হত্যা করা হলে সংগঠনটি অল্প সময়ের মধ্যেই নতুন নেতা নির্বাচন করতে সমর্থ হয়। তাই আইএসের ক্ষেত্রেও একই বিষয় ঘটবে।
আইএসের পরবর্তী নেতা কে হবে তা নিয়ে একটা ধারণাও দেন এই রাজনৈতিক বিশ্লেষক। ইরাকের নিরাপত্তা বিশ্লেষক হিশাম আল-হাসেমির সঙ্গে একমত হয়ে তিনি দুইজনের নাম উল্লেখ করেন। এরমধ্যে রয়েছে, আইএস নেতা আবু ওসমান আল-তুনসি এবং আবু সালেহ আল-জুজরায়ি।
প্রথম জন একজন তিউনিশিয়ার নাগরিক এবং আইএসের শূরা কাউন্সিলের প্রধান। আর দ্বিতীয় জন একজন সৌদি নাগরিক। সে আইএসের নির্বাহী কমিটির প্রধান। বিশ্লেষকদের মতে এই দুজনের মধ্য থেকেই পরবর্তী নেতার নাম ঘোষণা করবে আইএস। তবে এতে সংগঠনের মধ্যে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হতে পারে বলেও মনে করছেন আল-হাশেমি।
তিনি বলেন, এতে আইএসের মধ্যে দলত্যাগের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। কারণ এ দুজনের মধ্যে কেউই সিরিয়া বা ইরাকের নাগরিক নন। ফলে ভূমিহীন আইএসের যুদ্ধে তাদের নেতৃত্বে অনেকেই আস্থা রাখতে পারবে না।
এদিকে এই দুজনের বাইরে আরেকজনের নাম জোরে শোরে উচ্চারিত হচ্ছে। আব্দুল্লাহ কারদাশ নামের ওই আইএস নেতা হচ্ছেন সাবেক ইরাকি সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তা। সে বাগদাদির সঙ্গে দীর্ঘদিন ইরাকি কারাগারে আটক ছিল। বাগদাদির মৃত্যুর অনেক আগে থেকেই এটা অনেকটা ‘ওপেন সিক্রেট’ ছিল যে, কারদাশই হচ্ছে সংগঠনটির পরবর্তী আইএস নেতা।
তবে বিশ্লেষকরা এখন আইএসে তার বর্তমান অবস্থান নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছেন। এমনকি সে বেঁচে আছে কিনা তাও নিশ্চিত নয়। গত এক বছরে সিরিয়া ও ইরাক থেকে আইএসের বড় নেতাদের বেশির ভাগকেই হত্যা করা হয়েছে। ইরাকি গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যানুযায়ী কারদাশকে ২০১৭ সালেই হত্যা করা হয়।
ফলে কারদাশের পরবর্তী নেতা হওয়া নিয়েও সন্দিহান সকলেই। বর্তমানে কারদাশের মেয়ে ইরাকি বাহিনীর হাতে বন্দি। সেও তার পিতার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।