শীর্ষবিন্দু আর্ন্তজাতিক নিউজ ডেস্ক: আমি মুসলমান নই, কিন্তু বিক্ষোভ চালিয়ে যাবো বলে মন্তব্য করেছেন জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী।
টেলিভিশনে দেয়া সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, আমি ভাবতাম, শিক্ষার্থীদের জন্য দিল্লি নিরাপদ স্থান। আর এটা তো কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়। আমি মনে করতাম, শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ স্থান হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়। এখানে তাদের ওপর কিছু হবে না। কিন্তু আমাদের ওপর যে নির্মমতা চালানো হয়েছে, আমি সারারাত কেঁদেছি।
এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, ভারতের বর্ণবাদী ও মুসলিমবিদ্বেষী নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের প্রতিবাদে দেশটির বিভিন্ন ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে
জামিয়ার শিক্ষার্থীরা ইতিমধ্যে হল ছাড়তে শুরু করেছেন। ওই শিক্ষার্থী আরও বলেন, আমি এখন এই দেশটাকে নিরাপদ ভাবছি না। আমি জানি না, আমরা কোথায় যাচ্ছি। আমরা নির্মম হত্যার শিকার হতে যাচ্ছি। আমি জানি না, কাল সকালে আমার বন্ধুর ভারতীয় নাগরিকত্ব থাকবে কিনা।
নাগরিকত্ব আইন প্রণয়নের পরেই দেশটির একটি অংশে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে। এই আইনানুসারে, প্রতিবেশী বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের অমুসলিমরা ভারতের নাগরিকত্বের আবেদন করতে পারবেন।
ওই শিক্ষার্থী বলেন, আমি মুসলমান না। কিন্তু প্রথমদিন থেকেই বিক্ষোভকারীদের সামনে রয়েছি। কিন্তু কেন? কারণ আমার পরিবারের ওপর যা ঘটছে, সে জন্যই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা যদি ন্যায়সঙ্গত অধিকারের পক্ষেই দাঁড়াতে না পারি, তবে এই পড়াশুনা দিয়ে কি করবো।
পুলিশ ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘাত ছড়িয়ে পড়লে জামিয়ায় বিক্ষোভও তীব্রতর হয়ে যায়। কোনো অনুমতি না নিয়েই পুলিশ ক্যাম্পাসে ঢুকে শতাধিক শিক্ষার্থীকে আটক করে নিয়ে যায়। যদিও পরবর্তীতে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
জামিয়ার ক্যাম্পাসে পুলিশ যখন লাঠিপেটা ও হামলা শুরু করেন, তখন কী ঘটেছিল– সেই বিবরণ উঠে এসেছে আরেক শিক্ষার্থীর ভাষায়। ছাত্র-ছাত্রীদের পুলিশ একজায়গায় জড়ো করে তাদের ক্যাম্পাস ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে।
তিনি বলেন, এই বিভৎসতা যখন শুরু হয়, তখন আমরা লাইব্রেরিতে। সুপারভাইজারের কাছ থেকে ফোন পেলাম যে পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে। আমাদের লাইব্রেরি ছেড়ে চলে যেতে বলা হয়। কিন্তু বাইরে পুলিশের হামলা শুরু হলে শত শত শিক্ষার্থী এখানে এসে আশ্রয় নেন। আধঘণ্টার ভেতর পুরো লাইব্রেরি শিক্ষার্থীতে ভরে যায়।
লাইব্রেরির দরজা-জানালা কেঁপে উঠতে শুরু করেছে তখন। আমরা ভয়াবহ ধরপাকড়ের শব্দ শুনতে পাচ্ছিলাম বলে তিনি জানান।
জামিয়ার ওই শিক্ষার্থী বলেন, কয়েকজন রক্তাক্ত শিক্ষার্থীকে দেখলাম। পুলিশ ভেতরে ঢুকে অকথ্য গালাগাল শুরু করে। তারা সবাইকে বের হয়ে চলে যেতে বলে।
এরপর বের হয়ে হলের রাস্তা ধরে হাঁটা শুরু করলে আরেক ভয়াবহ দৃশ্য চোখে পড়ে বলে তিনি জানান। তারা ভাষায়, ছেলেদের শরীর থেকে অনবরত রক্ত ঝরছে। তারা অজ্ঞান-অচেতন অবস্থায় রাস্তায় পড়ে আছেন।
তিনি বলেন, হোস্টেলের দিকে যাওয়ার সময় আমাদের হাত উপরে তুলে রাখতে বাধ্য করা হয়েছে। একসময় হোস্টেলে পৌঁছালাম। তখন কিছু ছেলে আমাদের হোস্টেলের দিকে দৌড়ে আসেন। বললেন– নারী পুলিশ আমাদের পেটাতে এদিকে আসছে। এরপর আশপাশের ঝোপ-জঙ্গলে লুকিয়ে পড়লাম।
‘শেষ পর্যন্ত হোস্টেলে যখন পৗঁছালাম। তখন বহু শিক্ষার্থীর শরীরে রক্ত দেখেছি।’
জ্যেষ্ঠ পুলিশ অফিসার চিন্ময় বিসওয়াল বলেন, শিক্ষার্থীরা পাথর নিক্ষেপ ও সহিংসতা শুরু করলে পুলিশ ভেতরে ঢোকে।