শনিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ০৬:৩৪

বাংলাদেশ সরকারের বিধি মতে, দায়িত্বে থেকে উপহার গ্রহণের নিয়ম কী?

বাংলাদেশ সরকারের বিধি মতে, দায়িত্বে থেকে উপহার গ্রহণের নিয়ম কী?

রাজনীতি ডেস্ক: বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতা ও প্রভাবশালী মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ব্যবহৃত ঘড়ি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা হচ্ছে।

গত মাসে সুইডেনভিত্তিক একটি অনুসন্ধানী ওয়েবসাইট নেত্র নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, মি. কাদের যে ঘড়িগুলো ব্যবহার করেন তার মধ্যে সাতটি বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ডের এবং ওই ঘড়িগুলোর বাজার মূল্য নয় থেকে ২৮ লাখ টাকা।

এতো ব্যয়বহুল ঘড়ির ব্যবহার, নির্বাচনের হলফনামায় দেওয়া তার সম্পদের বর্ণনার সাথে পুরোপুরি অসামঞ্জস্যপূর্ণ বলে অভিযোগ ওঠে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তার ব্যবহৃত দামি ঘড়িগুলো উপহার হিসেবে পেয়েছেন বলে জানান। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে গত বৃহস্পতিবার মি. কাদের সাংবাদিকদের বলেন, তার যত দামি ঘড়ি ও দামি পোশাক রয়েছে, তার সবই কর্মীরা ‘উপহার’ হিসেবে দিয়েছেন। তিনি নিজে কোনটা পয়সা দিয়ে কেনেননি।

মি. কাদেরের এমন ব্যাখ্যাকে অপর্যাপ্ত উল্লেখ করে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা-টিআইবি এক বিবৃতিতে প্রশ্ন তুলেছে যে, এসব সামগ্রী যদি উপহার হিসেবেই পাওয়া হয়ে থাকে, কেন সেগুলো রাষ্ট্রীয় তোশাখানায় জমা দেওয়া হল না?

কার থেকে কী পরিমাণ উপহার

সরকারি বিধি অনুযায়ী, একজন সরকারি কর্মকর্তা কী পরিমাণ উপহার নিজের কাছে রাখতে পারেন এবং কোন উপহারগুলো তোশাখানায় জমা দিতে হয়, সেটার প্রক্রিয়াই বা কী?

এ বিষয়ে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার বিবিসি বাংলাকে বলেন, সরকারি বিধি অনুযায়ী এই উপহারগুলো বা উপহারের সমপরিমাণ অর্থ যথাসময়ে তোশাখানায় জমা দেওয়ার কথা।

তিনি বলেন, একজন সরকারি কর্মকর্তার দেশের ভেতরে কারও থেকে কোন উপহার গ্রহণের নিয়ম নেই। তবে বিদেশে গেলে বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে উপাহার নেয়া যেতে পারে।

যদি বিদেশি কোন রাষ্ট্রদূত উপহার দেন, সেটা না নিলে সম্পর্কের অবনতি হতে পারে, তখন তাই সেই উপহার নেয়া যাবে। তবে সেটার মূল্য যদি নির্ধারিত পরিমাণের চাইতে বেশি হয় তাহলে সেটা সরকারি তোশাখানায় জমা দেয়ার জন্য মন্ত্রী পরিষদ সচিবের কাছে একটি চিঠি দিতে হবে। সেটা ব্যবহার করা যাবে না।

তোশাখানা বিধিতে কী বলা আছে

২০১২ সালের জুনে হালনাগাদ করা তোশাখানা বিধি ১৯৭৪ অনুযায়ী, শুধুমাত্র বিদেশি বিশিষ্টজনদের থেকে একজন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার ৩০ হাজার টাকা বা তার কম মূল্যের উপহার গ্রহণ করতে পারবেন।

প্রধানমন্ত্রী ও প্রেসিডেন্টের ক্ষেত্রে এই মূল্যমানের সীমা ৫০ হাজার টাকা এবং সংসদ সদস্যসহ অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের ক্ষেত্রে এই পরিমাণ পাঁচ হাজার টাকা নির্ধারণ করা আছে।

এর বেশি মূল্যমানের উপহার বা উপহারটি যদি দুর্লভ বস্তু যেমন: পুরানো ছবি বা প্রাচীন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হয় তাহলে সেটা সাথে সাথে মন্ত্রীপরিষদ বিভাগকে জানিয়ে তোশাখানায় জমা দিতে হবে। কোন অবস্থাতেই নিজের কাছে রাখা যাবে না বা ব্যবহার করা যাবে না।

সাধারণত প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ে যে তোশাখানা আছে সেখানে এই উপাহারগুলো সাজিয়ে রাখার নিয়ম আছে, যেন সাধারণ মানুষ দেখার সুবিধা পায়।

এছাড়া রাষ্ট্রপতি যেসব উপহার পান সেগুলো বঙ্গভবনে সংরক্ষিত থাকে। কিছু উপহার যেমন বিভিন্ন তৈজসপত্র বা যন্ত্রপাতি সরকারি দাপ্তরিক কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে।

এছাড়া অব্যবহৃত কিছু উপহার যেগুলো ফেলে রাখলে নষ্ট হয়ে যাবে কিংবা মূল্য হারিয়ে ফেলবে সেগুলো নিলামে তোলা যেতে পারে, যার অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হবে।

তবে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, দুর্লভ ছবি বা ভিডিওর মতো অমূল্য সম্পদগুলো জাতীয় জাদুঘরে পূর্ণ নিরাপত্তা বলয়ে রাখতে বিধিতে বলা হয়েছে।

কিছু পণ্য যদি বেশ মূল্যবান হয় এবং তোশাখানা থেকে গায়েব হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে তাহলে প্রসিদ্ধ ব্যাংকের লকারে সরকারি অর্থায়নে সেগুলো সংরক্ষণ করতে হবে।

তোশাখানার জিম্মাদার দায়িত্ব পালন করে মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ। তারা মূলত ওইসব উপহার সংগ্রহ, মূল্য নির্ধারণ ও সংরক্ষণের যাবতীয় দায়িত্ব পালন করে থাকে। এবং সার্বিক কাজে তাদের সহায়তা করে তোশাখানা মূল্যায়ন কমিটি।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের যুগ্ম সচিব এই কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে থাকেন। এছাড়া সদস্য হিসেবে থাকেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের দুজন উপসচিব, এবং অর্থনীতি বিভাগ ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব।

দুর্নীতি উস্কে দিচ্ছে

মি. কাদেরের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে সেটা সমাজের দুর্নীতিকে আরও উস্কে দিয়েছে বলে মনে করেন দুর্নীতিবিরোধী প্রচারণায় সংশ্লিষ্ট সুলতানা কামাল।

তিনি বলেন, যারা নীতি নির্ধারনী পর্যায়ে আছেন, যারা নিয়ম বানান এবং যারা এসব নিয়ম মানার জন্য অন্যের ওপর কর্তৃত্ব প্রয়োগ করতে পারে, তারা যখন নিয়ম মানেন না সেটা একটা নেতিবাচক দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। এতে তাদের নৈতিকতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়।

দেশের শীর্ষ ক্ষমতায় থেকে প্রচলিত নিয়ম নীতি না জানাকেও অন্যায় হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কেউ যদি জেনেশুনে এমন অপরাধ করে থাকেন তাহলে সাধারণ মানুষ মনে করবে যে তারাও আইন না মেনে, দুর্নীতি করে চলতে পারবে। এটা মানুষকে সামাজিক অবক্ষয়ের দিকে মানুষকে ধাবিত করে।

নিয়ম লঙ্ঘণকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা কী

এখন কেউ এসব নিয়ম না মানলে তার বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হবে সেটা তোশাখানা বিধিতে স্পষ্ট করে বলা নেই।

তবে তথ্য গোপন এবং হলফনামায় দেয়া তথ্যের সঙ্গে এসব উপহারের অসামঞ্জস্যতা পাওয়া গেলে দুর্নীতির অভিযোগ তোলা যেতে পারে বলে জানিয়েছেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।

এর আগে হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ রাষ্ট্রপতি থাকাকালে যেসব উপহার পেয়েছিলেন সেগুলো রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা না দেয়ার কারণে, ঢাকার বিশেষ জজ আদালত তাকে তিন বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিল। যদিও হাইকোর্ট পরে সেই মামলা বাতিল করে দেয়।




Comments are closed.



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০৩১  
All rights reserved © shirshobindu.com 2012-2024