নিউজ ডেস্ক: বিদেশি প্রতারকের ফাঁদ এখন সর্বত্র। বাংলাদেশে আসা শিক্ষার্থী, খেলোয়াড় ও ভিজিট ভিসায় এসে এসব বিদেশিরা প্রতারণায় জড়িয়ে পড়েছে।
এদের অধিকাংশই আফ্রিকা মহাদেশের নাগরিক। কিছু আছে মধ্য ইউরোপের। চক্রটি দেশের সাধারণ নাগরিকদের ফাঁদে ফেলে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। দিন দিন তাদের দৌরাত্ম্য বাড়ছে। এটিএম বুথের দিকে তাদের নজর।
গত বছর ঢাকাসহ দেশের একাধিকস্থানে এটিএম বুথ থেকে অভিনব কায়দায় টাকা তুলে পালিয়েছে একটি চক্র। ঢাকায় এমন ২০ জন প্রতারককে চিহ্নিত করেছে র্যাবসহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনী।
কয়েকজন ইতিমধ্যে দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। তারা যাতে আবার দেশে আসতে না পারে সেদিকে নজরদারি রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। চক্রটি ডিজিটাল কায়দায় এটিএম বুথ থেকে টাকা লুট, লটারির মাধ্যমে প্রতারণা ও জাল ডলার ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। চক্রটির সদস্যরা উত্তরা, বনশ্রী ও ধানমন্ডি এলাকায় বসবাস করে। কয়েকজন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে জেলখানায় গেলেও আইনের ফাঁকে আবারও তারা বাইরে বের হয়ে এসেছে। আবারও তারা জড়িয়েছে প্রতারণা পেশায়।
এ বিষয়ে র্যাব-১ এর অধিনায়ক শফিউল্লাহ বুলবুল মানবজমিনকে জানান, বিদেশি কিছু প্রতারকের উত্তরা এলাকায় আনাগোনা আছে। আমরা তথ্য পেলেই তাদের ধরে আইনের আওতায় আনবো।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ২০ জন বিদেশি প্রতারক দেশে সক্রিয়। এরমধ্যে ১৮ জনই আফ্রিকা মহাদেশের। আর ২ জন ইউরোপের নাগরিক। এরমধ্যে দুইজন আফ্রিকান নারী রয়েছেন।
আফ্রিকানরা হলো: ওতাংগ আবুল (৪০), গাম্বি সাবুজা (৪০) আশাচি লিনাস এনমনি (৩৭), অভি চিসম এনেস্ট (৩২), ওকাফার ওয়েসি ডেকর (৩২) জেম্স ওকেসিহা (৩০), লাইডাল ফাংচুরা (৪০), সিরোরো বাংচুরা (৪০), হোসনী ডাবলু (৪০), আলী ডাকার (৪০), সুরো বাংবোলা (৩০), গাবি তাহমাদি (৫০), হুব্বাব তারাবানো (৪০), আজিলি শামস (৪০), মানু আকবর (৩২), তাহেরা ডাকার (২৪), সুভি পারভা (২৫)। তাহেরা ডাকার ও সুভি পারভা দুইজন আফ্রিকান নারী। তারা জাল ডলার ব্যবসার সঙ্গে জড়িত।
ইউরোপিয়ানরা হলো, গ্রীসের ত্তরিং সান (৪০) ও নেদারল্যান্ডের জেমস এন্ডারফেকার (৫০)।
র্যাব সূত্রে জানা গেছে, এইসব প্রতারক দেশের নাগরিকদের তাদের পাতা ফাঁদে ফেলে প্রতারণা করে যাচ্ছে। কখনও মূল্যবান জিনিসপত্র, ওষুধ বিক্রির কথা বলে, কখনওবা ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে, কখনও বিদেশ যাত্রার প্রলোভন দেখিয়ে, আবার কখনও লটারি জেতার কথা বলে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা ও ডলার।
এরা শুধু জাল টাকা বা ডলারই নয়, মাদক ব্যবসার সঙ্গেও জড়িত। বু্ল আইশ ও কোকেন তারা বিদেশ থেকে এনে বাংলাদেশের একাধিক চক্রের কাছে সরবরাহ করে। বিমানবন্দরে তারা একাধিক কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে ওই মাদক বিদেশ থেকে দেশে নিয়ে আসছে। এছাড়াও সাগর পথে চট্রগ্রাম বন্দর থেকে মাদক নিয়ে আসছে তারা।
সূত্র জানায়, এই চক্রটি ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ড স্কিমিং ডিভাইসের মাধ্যমে জালিয়াতি করে বিভিন্ন ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে দফায় দফায় হাতিয়ে নিয়েছে লাখ লাখ টাকা। মাঝে মধ্যেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঢাকার কিছু বাসা, হোটেলে অভিযান চালিয়ে থাকে। কিন্তু, তারা দেশের চোরাকারবারিদের সঙ্গে শক্ত নেটওয়ার্ক থাকার কারণে অধরা থেকে যাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাত থেকে তাদের দেশীয় চক্রের সদস্যরা বাঁচিয়ে দিচ্ছে। এতে তারা পাচ্ছে লাখ লাখ টাকা। প্রতারক চক্রের সদস্যরা ঘন ঘন হোটেল ও বাসাবাড়ি পরিবর্তন করে। প্রতারণার ধরন পাল্টায়।
সূত্র জানায়, যে ২০ জন বাংলাদেশে অবস্থান করছে তারা এসেছে শিক্ষার্থী ও ভিজিট ভিসায়। প্র্রতারক চক্রের অধিকাংশই আফ্রিকার নাইজেরিয়া ও কঙ্গোর অধিবাসী। যে দুই নারী প্রতারণায় জড়িত তারা একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত।