রাজনীতি ডেস্ক: আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা এখন বিশ্বনেতায় পরিণত হয়েছেন। তাঁর রাজনৈতিক বিচক্ষণতা, দূরদৃষ্টি এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের সক্ষমতা দেশে-বিদেশে প্রশংসিত এবং সমাদৃত। এই মুহুর্তে শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বে সেরা সরকার প্রধানদের মধ্যে তিনি অন্যতম।
শেখ হাসিনা এখন বাংলাদেশের রাজনীতিতে অপ্রতিদ্বন্দ্বী। তাঁর প্রধান প্রতিপক্ষ দু’বছরের বেশি সময় ধরে কারাগারে রয়েছে এবং বেগম খালেদা জিয়ার রাজনীতি এখন অস্তমিত সূর্যের মতোই।
প্রশ্ন হলো যে, শেখ হাসিনা কিভাবে রাজনীতির চূড়ায় উঠলেন? কিভাবে তিনি সবাইকে ছাপিয়ে এই অনন্য উচ্চতায় নিজেকে আসীন করলেন?
গবেষণা করলে দেখা যায় দশটি সিদ্ধান্ত শেখ হাসিনার রাজনৈতিক জীবনের বাঁক ঘুরিয়ে দিয়েছে। এই সিদ্ধান্তগুলো শেখ হাসিনাকে অনন্য উচ্চতায় ধাপে ধাপে রাজনীতির স্বর্ণশেখড়ে নিয়ে গেছে। দেখে নেয়া যাক, কি ছিল সে সব সিদ্ধান্তগুলো:
রাষ্ট্রায়াত্ত এবং সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি থেকে সরে আসা
১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগ সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করে দেশে ফিরেছিলেন শেখ হাসিনা এবং দেশে ফেরার পরপরই আওয়ামী লীগকে সমাজতান্ত্রিক চিন্তার আদর্শ থেকে সরিয়ে আনেন। রাষ্ট্রায়াত্ত এবং সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক যে আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রের ঘোষণাপত্র ছিল, তা পরিবর্তন করে তিনি মুক্তবায়ু অর্থনীতির পক্ষে দলকে প্রতিস্থাপন করেন। এই সিদ্ধান্তের ফলে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে আওয়ামী লীগ গ্রহণযোগ্যতা পায়।
১৯৯১ এর নির্বাচনে পরাজয়ের পরেও সংসদীয় গণতন্ত্রের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান
১৯৯১ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ আকস্মিকভাবে পরাজিত হয় কিন্তু এই পরাজয়ের ধাক্কা সামলে নিতে কুণ্ঠাবোধ করেননি আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। বরং এই নির্বাচনের পরেও তিনি সংসদীয় নির্বাচনের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান করেন এবং শেষ পর্যন্ত তৎকালীন ক্ষমতাসীন দল বিএনপিকে সংসদীয় গনতন্ত্রে যেতে বাধ্য করেন। আর সংসদীয় গণতন্ত্রের যাওয়ার কারণে শেখ হাসিনার গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে একটি নতুন মাইলফলক তৈরি করতে সক্ষম হন।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার
১৯৯৪ সালে শহীদ জননী জাহানার ইমামকে দিয়ে তিনি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবির সূচনা করেন। এটা ছিল তাঁর অনন্য সিদ্ধান্ত। এর প্রেক্ষিতে গণআদালত গঠিত হয় এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিকে একটি জনপ্রিয় দাবি হিসেবে শেখ হাসিনা প্রতিষ্ঠিত করেন। যার ফল হিসেবে ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর তিনি যুদ্ধাপরাধীদের বিভার কাজ করতে পারেন।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা স্থাপন
দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলেই যে নির্বাচনে কারচুপি হয় এবং জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়না- সেই উপলব্ধি প্রথম করেছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। আর একারনেই তিনি নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা উপস্থাপন করেছিলেন এবং তীব্র গণ আন্দোলনের মাধ্যমে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ওই দাবি বাস্তবায়নে বিএনপি সরকারকে বাধ্য করেছিলেন। এটা ছিল বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত।
৯৬ এর বিজয়ী হয়ে ঐক্যমতে সরকার গঠন
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হবার পর ২১ বছর পর ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। এই সময়ে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে নানাপ্রকার অপপ্রচার ছিল। তাই বাস্তবতাতে শেখ হাসিনা ঐক্যমতে সরকার গঠন করেন। সেসময় জাসদের আ স ম আব্দুর রব, জাতীয় পার্টির আনোয়ার হোসেন মঞ্জুকে মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করে তিনি ঐক্যমতের রাজনীতির এক নতুন দিগন্ত স্থাপন করেন এবং যেটি শেখ হাসিনাকে ব্যতিক্রম রাজনীতিবিদ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
২০০১ সালে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো
২০০১ সালের পহেলা অক্টোবরের নির্বাচনে বিএনপি বিজয়ী হয় এবং ওইদিন থেকে সারাদেশে তাণ্ডব শুরু করে বিএনপি। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী এবং সংখ্যালঘুদের উপরে শুরু হয় জুলুম-নির্যাতন-হত্যা। শেখ হাসিনা সেই সময়ে নির্বাচনের পরাজয়ের পরেও মুখ বুজে থাকেননি। বরং এইসব মানবতাবিরোধী অপরাধের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন এবং সারাদেশের মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সাহস জুগিয়েছেন। আর এই কারণেই শেখ হাসিনা একজন নতুন নেতা, বিশেষ করে নির্যাতিত মানুষের নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন।
গ্রেনেড হামলার পর মানসিক দৃঢ়তা
২০০৪ সালে শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশে তৎকালীন বিএনপি-জামায়াতের রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় চালানো হয় একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলা। তবে এই হামলার পর শেখ হাসিনা মুষড়ে পড়েননি, বরং যে মানসিক দৃঢ়তা দেখিয়েছেন তা তাকে অনন্য নেতার পর্যায়ে নিয়ে যায়।
তত্ত্ববধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল
২০০৮ সালে ওয়ান ইলেভেনের মাধ্যমে শেখ হাসিনা রাজনীতিতে এক অনন্য উচ্চতায় আসেন এবং এরপরে তিনি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় অগণতান্ত্রিক শক্তির হস্তক্ষেপ চিরতরে বন্ধ করার উদ্যোগ নেন। তারই পদক্ষেপ হিসেবে তিনি যেমন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করেন তেমনি অনির্বাচিত সরকারের ক্ষমতায় আসার সাংবিধানিক পথ চিরতরে রুদ্ধ করে দেন।
২০১৪ নির্বাচন
২০১৪ নির্বাচন ছিল শেখ হাসিনার জন্য এক অগ্নিপরীক্ষা। অত্যন্ত সাহস এবং দৃঢ়তার সঙ্গে শেখ হাসিনা এই নির্বাচন পদ্ধতি সামাল দেন। বিএনপির জ্বালাও-পোড়াও সহিংস রাজনীতির বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার নির্বাচনের পক্ষে অবস্থানকে জনগণ স্বাগত জানায়। এই নির্বাচন শেখ হাসিনাকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যায়।
জাতীয় পার্টিকে সঙ্গে রাখা
বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী বিরোধী শক্তিকে দ্বিখণ্ডিত করা শেখ হাসিনার এক অনন্য রাজনৈতিক কৌশল এবং সিদ্ধান্ত। জাতীয় পার্টিকে মহাজোটের মোড়কে তাদের পক্ষে রাখার ফলে তিনি আওয়ামী বিরোধী শক্তিকে খণ্ডিত করে দিতে সক্ষম হন এবং যেটা শেখ হাসিনাকে দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রে অনেক সুফল দিয়েছিল।
আর এই সমস্ত কারনে বাংলাদেশের রাজনীতিতে শেখ হাসিনা এখন অমরত্বের মর্যাদা পেয়েছেন।