বৃহস্পতিবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:০৩

করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে ৩৯ দেশে

করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে ৩৯ দেশে

শীর্ষবিন্দু আর্ন্তজাতিক নিউজ: চীন থেকে শুরু হয়ে নতুন করোনাভাইরাস ৩৯ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। রোগটি চীনের সীমান্ত পেরিয়ে ইউরোপ, আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকার বিভিন্ন দেশে থাবা বিস্তার করেছে। এতে বিশ্বজুড়ে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৮১ হাজারে।

প্রাণঘাতী এ ভাইরাসে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৭৬৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। শুধু চীনেই ২ হাজার ৭১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ভাইরাস প্রতিরোধে সতর্ক অবস্থায় বাংলাদেশ।

এ লক্ষ্যে তিন ধাপের প্রস্তুতি নিয়েছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউট (আইইডিসিআর)। ভাইরাসটির বিস্তার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না হলে যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশেও এটি মহামারী আকারে দেখা দিতে পারে বলে সতর্ক করেছে দেশটির জাতীয় স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান ‘সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল প্রিভেনশন (সিডিসি)।’ এদিকে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে টোকিও অলিম্পিক বাতিলের আশঙ্কা রয়েছে।

চীনের পর এশিয়ায় এ ভাইরাসের প্রকোপ মারাত্মক হয়ে উঠেছে দক্ষিণ কোরিয়ায়। সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা ১১শ’ অতিক্রম করেছে। এদিকে ইউরোপের ইতালিতে আক্রান্ত হয়েছে সোয়া তিনশ’ মানুষ। এছাড়া ইউরোপের সুইজারল্যান্ড, অস্ট্রিয়া ও ক্রোশিয়ার পাশাপাশি আফ্রিকার দেশ আলজেরিয়া এবং লাতিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিলে প্রথমবারের মতো করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর খোঁজ মিলেছে।

চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার দেশটির মূল ভ‚খণ্ডে ৪০৬ জনের শরীরে নতুন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। আগের দিন এ সংখ্যা ছিল ৫০৮ জন। সব মিলিয়ে চীনে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭৮ হাজার ৬৪ জনে। বিশ্বে এ সংখ্যা ৮০ হাজার ৯৭০ জনে দাঁড়িয়েছে বলে সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে। সোমবার চীনে মোট ৫২ জনের মৃত্যু হয়েছে রোগটিতে। চীনের মূল ভূখণ্ডের বাইরে আরও ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে মঙ্গলবার। সব মিলিয়ে চীনের বাইরে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৮ জনে। এ রোগে এরই মধ্যে ইরানে ১৫ জন, দক্ষিণ কোরিয়ায় ১২ জন, ইতালিতে ১১ জন, জাপানে ৫ জন, হংকংয়ে ২ জন এবং ফিলিপিন্স, ফ্রান্স ও তাইওয়ানে একজন করে মৃত্যু হয়েছে।

মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশ ইরানের সঙ্গে বিমান চলাচল স্থগিত রেখেছে। বন্ধ করে দিয়েছে সীমান্ত। কয়েকটি দেশ ইরান ভ্রমণের ওপর কড়াকড়ি আরোপ করেছে।

এদিকে দক্ষিণ কোরিয়ায় নতুন করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১৪৬ জনে। দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর দায়েগু ও চেওংডোকের সংখ্যালঘু খ্রিস্টানদের মধ্যেই এতদিন সংক্রমণের ঘটনা সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু এখন অন্যান্য অঞ্চলেও এ রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়ছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে সিএনএন।

চীনসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ায় নতুন করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সতর্ক বাংলাদেশ। প্রাণঘাতী এ ভাইরাস এখনও বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারেনি। যাতে ঢুকতে না পারে সেজন্য তিন ধাপের প্রস্তুতি নিয়েছে বলে জানিয়েছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউট (আইইডিসিআর)। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদফতর ও আইইডিসিআরের সমন্বয়ে এ প্রস্তুতির খসড়া তৈরি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা।

বুধবার করোনাভাইরাস নিয়ে নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, বাংলাদেশে এবার অনেক আগে থেকেই করোনাভাইরাসের পূর্ব প্রস্তুতি নিয়ে আমরা কাজ শুরু করি। রোগী পাওয়া গেলে কী করা হবে, সেসব প্রস্তুতির খসড়াও আমরা তৈরি করেছি। সেটা চূড়ান্তের প্রক্রিয়া চলছে।

তিন ধাপে পরিকল্পনার বিষয়ে অধ্যাপক ফ্লোরা বলেন, একটা হচ্ছে অ্যালার্ট লেভেল- যখন কোনো রোগী নেই, এখন সেই কর্মসূচি আমরা পালন করছি। যখন বিদেশ থেকে রোগী পাওয়া যাবে, অল্প সংখ্যায়- সেটা আরেকটা লেভেল। আর শেষটা হল যদি অনেক রোগী হয়ে যায়, সেই লেভেল। তবে বাংলাদেশে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে না বলে আশা করলেও প্রতিরোধের প্রস্তুতির কোনো ঘাটতি নেই।

ডা. ফ্লোরা বলেন, আর যদি ১০০ বা ২০০ জন আক্রান্ত হন, সেক্ষেত্রে পরীক্ষার প্রয়োজন নেই বলে নির্দেশনা দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। প্রাথমিক উপসর্গ দেখা দিলে ধরে নিতে হবে, করোনাভাইরাসের রোগী তারা। সেই অনুযায়ী চিকিৎসা দিতে হবে।

চিকিৎসার বিষয়ে তিনি বলেন, করোনার আলাদা চিকিৎসা নেই। কমন কোল্ডের চিকিৎসা দিতে হবে, রোগীদের আইসোলেশনে রাখতে হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বরাত দিয়ে আইইডিসিআরের পরিচালক বলেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের ৮০ ভাগের বেশি মৃদু, ১৪ শতাংশের হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হয়েছে এবং ৬ শতাংশ জটিল অবস্থা নিয়ে আইসিইউ সাপোর্টে চিকিৎসায় রয়েছে।

তিনি জানান, বাংলাদেশে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন চারজনের নমুনা পরীক্ষাসহ সর্বমোট ৮৩ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হলেও তাদের কারও মধ্যে করোনাভাইরাসের জীবাণু পাওয়া যায়নি।

আফগানিস্তান, ওমান, বাহরাইন ও ইরাকেও সংক্রমণ ঘটেছে জানিয়ে ফ্লোরা বলেন, চীনের বাইরে সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, ইরান ও ইতালিকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে সেসব দেশে থাকা বাংলাদেশিদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। যে দেশগুলোতে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি এবং সুস্থ রোগীদের আক্রান্ত হওয়ার ইতিহাস রয়েছে, সেসব দেশে ভ্রমণের ক্ষেত্রে সতর্কতা এবং ভ্রমণ শেষে স্ক্রিনিংয়ের মধ্য দিয়ে আসার অনুরোধ করেন আইইডিসিআর পরিচালক।

এদিকে দক্ষিণ কোরিয়ায় নতুন করোনাভাইরাসের প্রকোপ মারাত্মক হয়ে উঠেছে। এখানে আক্রান্তের সংখ্যা পৌঁছছে ১১শ’র বেশি।

বুধবার দেশটিতে যুক্তরাষ্ট্রের এক সৈন্যসহ নতুন ২৮৪ জন ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়েছে বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে। এ নিয়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ায় ১২৬১ জনে। সংক্রমণ ছড়ানোর পর থেকে দেশটিতে কভিড-১৯ রোগে ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। কোরিয়ান রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (কেসিডিসি) জানিয়েছে, নতুন আক্রান্তদের মধ্যে ১৩৪ জন দায়েগু শহরের বাসিন্দা। যুগান্তর




Comments are closed.



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০৩১  
All rights reserved © shirshobindu.com 2012-2024