সোমবার, ০৪ নভেম্বর ২০২৪, ০২:২০

করোনায় গণমানুষের ডাক্তারের চির বিদায়

করোনায় গণমানুষের ডাক্তারের চির বিদায়

শীর্ষবিন্দু নিউজ, সিলেট: ডা. মইনউদ্দিন ছিলেন এক ডাক্তার তবে সিলেটজুড়ে তার পরিচয় ছিল তিনি এক গণ মানুষের ডাক্তার। যার কাছে গরীব রোগীরাই প্রাধাণ্য পেত বেশি।

ডা. মইনউদ্দিনের জন্য কাঁদছে সিলেট। কাঁদছে মানুষ। মানবতার ডাক্তারের জন্য শোকাহত হয়ে পড়েছেন সবাই। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বইছে শোকের মাতম। পরিচিত জনেরা তো আর্তনাদ করছেন। সবখানেই নেমেছে পিনপতন নিরবতা।

নিজে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি রোগীর সেবায় ব্যস্ত ছিলেন। ওসমানীর ওয়ার্ড, ইবনে সিনার চেম্বার, গ্রামের বাড়িতে রোগী দেখা- সবখানেই ব্যস্ত ছিলেন তিনি। করোনা আতঙ্কে যখন ডাক্তাররা যখন সবাই ঘরে তখন তিনি অবিরাম সেবা দিয়ে গেছেন রোগীদের। আর সেবার কারনেই অজান্তে কোথাও থেকে নিজেই করোনা সংক্রমিত হয়েছিলেন তিনি। প্রাণঘাতি করোনা সব মায়াজাল বিচ্ছিন্ন করে নিয়ে গেলো পড়পাড়ে।

মেডিসিন, কার্ডিওলজি বিভাগ চষে বেড়াতে তিনি। ফলে রোগীদের কাছে পরিচিত হয়ে উঠেছিলেন। নিজের চেম্বার ছিলো ইবনে সিনায়। বিকেলে রোগী দেখতেন তিনি সেখানে। রাতে সব ডাক্তাররা যখন ঘরে ফিরে যেতেন তখন তিনি নীরবে এক ‘ঢু’ মারতেন ওসামানীর ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে। সেবা দিতে সময় মানতেন না তিনি। এখন তিনি কোথা থেকে সংক্রমিত হয়েছেন সেটি জানা যায়নি। ইতিমধ্যে তার সংস্পর্শে আসা ২০ জনের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয়েছে। সবার রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে।

ওসমানী হাসপাতালের সহকর্মীরা জানিয়েছেন- করোনার প্রার্দুভাব শুরু হওয়ার পর থেকে নব উদ্যোগে সক্রিয় হয়ে উঠেছিলেন ডা. মইনউদ্দিন। সিলেটের সিভিল সার্জনের নেতৃত্বে সিলেটে করোনা মোকাবেলায় যে কমিটি গঠন করা হয়েছিলো সেটির সদস্য ছিলেন তিনি। ফলে ওই কমিটির একজন সক্রিয় সদস্য হিসেবে তিনি করোনা মোকাবেলায় ফ্রন্টলাইনের যোদ্ধা হিসেবে কাজ করেন।

সিলেটে কী কী প্রস্তুতি নেওয়া প্রয়োজন সে ব্যাপারে তিনি কাজ করেন। মার্চ মাসের শুরু থেকেই সিলেটের অনেক ডাক্তার করোনার ভয়ে পিছু হটেন। বন্ধ করে দেন চেম্বার। হাসপাতাল, ক্লিনিক, চেম্বার সবখানেই তারা নিজেদের সংকোচিত করে ফেলেন। ব্যতিক্রম ছিলেন ডা. মইন। নিজে চেম্বার করেছেন ইবনে সিনায়। নির্ভরে রোগিদের সেবা দিয়ে গেছেন।

ওসমানীর মেডিসিন ও কার্ডিওলজি ওয়ার্ডে অনেক সিনিয়র ডাক্তার নিজেদের সংকোচিত করে ফেলেন। কিন্তু মইন ছিলেন অগ্রভাগে। অনেকটা একাই সামলে নেন দুটি ওয়ার্ড। দিনে তো ওয়ার্ডে গিয়ে রোগী দেখতেনই রাত হলে আবার ছুটে যেতেন। ফলে মার্চ মাসে রোগীদের কাছে একমাত্র নির্ভরতার প্রতীক ছিলেন তিনি।

সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায় জানিয়েছেন- ২রা এপ্রিল পর্যন্ত ওসমানী হাসপাতালে রোগী দেখেছেন ডা. মইন। তিনি সব সময় রোগীর সেবায় ব্যস্ত থাকতেন। যখন তিনি সর্দি, কাশি ও জ্বরে আক্রান্ত হন তখন নিজ থেকেই আইসোলেটেড হয়ে যান তিনি। বাসার একটি ঘরে বসবাস শুরু করেন। নিজে উদ্যোগী হয়ে করোনা টেস্ট করান। এরপর তার রিপোর্ট পজেটিভ আসে।

ডা. মইনের নিকটজনেরা জানিয়েছেন- ইবনে সিনায় চেম্বার করতে ডা. মইন। হাসপাতালে রোগী দেখতেন। গরীব ও অসহায় রোগীদের কাছ থেকে তিনি কখনোই ভিজিট নিতেন না। বরং যে কোনো সময় রোগীদের প্রয়োজনে তিনি সাড়া দিতেন। রোগীই ছিলো তার কাছে সব। গ্রামে বাড়ি ছাতকের নাদামপুরে সপ্তাহে একদিন ছুটে যেতেন তিনি। সেখানে গ্রামের মানুষদের সেবা দিয়ে গেছেন মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত। শহরে নামী ডাক্তার হলেও নিজ গ্রামের মানুষকে সেবা দিতে তিনি ছুটে যেতেন। তার মৃত্যুতে নাদামপুর গ্রামেও শোকের ছায়া নেমে এসেছে। বুধবার তার লাশ ঢাকা থেকে সিলেটে আনা হয়েছে। সেখানেই মা-বাবার পাশে কবরে শায়িত হবেন ডা. মইন।

ডা. মইনের বিদায় শোকের মাতম চলছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার পরিবারের দায়িত্ব নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। পরিবারকে দেওয়া হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত মৃত্যুকালীন ভাতাও।

প্রসঙ্গত: ডা. মইন উদ্দিন। সিলেটের সন্তান। নিজের স্বপ্ন ছিলো সিলেটের মানুষকে ঘিরে। এ কারনে উচ্চ গ্র্যাজুয়েশনের পরও তিনি সিলেটের মানুষকে সেবা দিতে থাকেন। আমৃত্যু ছিলেন ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক। সিলেট নগরীর হাউজিং এস্টেট এলাকায় বাড়ি তার। ডাক্তার স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে বাস করেন ওখানেই। গ্রামের বাড়ি ছাতকের নাদামপুরে। সিলেট শহরের একজন নামী ও পরিচিত ডাক্তার হওয়ার পরও তিনি নিজ গ্রামের সাধারন মানুষকে স্বাস্থ্য সেবা দিতে যেতেন।




Comments are closed.



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০  
All rights reserved © shirshobindu.com 2012-2024