দেবব্রত মুখোপাধ্যায়: পাল্লেকেলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম থেকে হোটেল মহাবলী রিচ-এর দূরত্ব ঠিক ২১ কিলোমিটার। কিন্তু কাল পাকিস্তান-নিউজিল্যান্ড খেলার শেষ দিকে মনে হচ্ছিল, স্টেডিয়াম থেকে টের পাওয়া যাচ্ছে ওই হোটেলের কামরায় বসে থাকা বাংলাদেশি খেলোয়াড়দের উত্তেজনা, টেনশন জড়ানো নিশ্বাসের শব্দ! প্রাণপণে বাংলাদেশ কাল চাইছিল নিউজিল্যান্ডের জয়। তাহলে অন্তত একটু সহজ সমীকরণের সামনে থাকত বাংলাদেশ- শেষ ম্যাচে শুধু পাকিস্তানের বিপক্ষে জিতলেই হতো। তা হল না। উত্তেজনাময় ম্যাচে গতকাল রবিবার রাতে নিউজিল্যান্ডকে ১৩ রানে হারিয়ে নিজেদের সাম্প্রতিক ফর্ম ধরে রাখল পাকিস্তান। পাকিস্তানের এই জয়ের ফলে এখন বাংলাদেশের সমীকরণটা হল- শেষ ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে বিরাট ব্যবধানে জয় চাই। মহাবলী রিচে সেই স্বপ্ন কি কেউ দেখছেন?
ম্যাচটায় বাংলাদেশের স্বার্থ তো ছিল। তার চেয়ে কম ছিল না পাকিস্তানের প্রতিশোধ নেয়ার ব্যাপার। এই মাঠে গত ওয়ানডে বিশ্বকাপে তারা এই নিউজিল্যান্ডের কাছে হেরেছিল। ফলে কাল তার একটা শোধবোধ হয়ে গেল। পাকিস্তান আগে ব্যাট করে অধিনায়ক মোহাম্মদ হাফিজ ও নাসির জামসেদের চোখ ধাঁধানো দুই ইনিংসে ভর করে ২০ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ১৭৭ রান তুলেছিল। জবাবে ৯ উইকেটে ১৬৪ রানে থেকে যায় নিউজিল্যান্ডের ইনিংস।
শেষ ৫ ওভারে ৭০ রান দরকার ছিল নিউজিল্যান্ডের। ঠিক এই সময়ে গর্জে উঠেছিলেন ওয়ানডে বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের সেই জয়ের নায়ক রস টেলর নিজেই। ১১ বলে টেলর ২৬ রান করে মনে করিয়ে দিচ্ছিলেন, আরেকটি কিউইকাব্য গড়বেন তিনি। কিন্তু শেষের আগের ওভারে আউট হয়ে ফেরেন অধিনায়ক। শেষ ওভারে তাদের জয়ের জন্য দরকার ছিল ১৯ রান। টেলএন্ডার ব্যাটসম্যানরা বিশ্বসেরা সাঈদ আজমলের ঘূর্ণি সামলে আর ৫ রানের বেশি তুলতে পারেননি।
পাকিস্তানের জয়ের ভিত্তিটা তৈরি করে দিয়েছিলেন দুই ওপেনার হাফিজ ও ইমরান নাজির। ৫.৪ ওভারে ৪৭ রানের জুটি গড়ে ফেলেছিলেন তারা। ১৬ বলে ২৫ রান করে ইমরান আউট হয়ে গেলে শুরু হয় হাফিজ ও নাসির জামসেদের আক্রমণ। এই জুটিতে ওঠে আরও ৭৬ রান। জুটিতে নাসিরই বেশি আক্রমণাত্মক ছিলেন। ৩৮ বলে ৪৩ রান করে হাফিজ আউট হয়ে ফেরেন। তবে নাসির আউট হওয়ার আগে নিজের ফিফটি পূর্ণ করে গেছেন; ৩৫ বলে করেছেন ৫৬ রান।
শেষ দিকে উমর আকমলের ২৩ ও শহীদ আফ্রিদির ১২ রানে বড় স্কোরে পৌঁছে যায় পাকিস্তান। জবাব দিতে নেমে নিউজিল্যান্ড একেবারেই টি-টোয়েন্টি সূলভ ব্যাটিং করতে পারেনি। তাদের ওপেনার নিকোল আউট হওয়ার আগে ৩৩ রান করেছেন ৩৩ বলের বিনিময়ে। সবচেয়ে অবাক করেছেন বাংলাদেশের বিপক্ষে দানবীয় ইনিংস খেলা ব্রেন্ডন ম্যাককালাম। ৩১টি বল খরচ করে এই মারকুটে ব্যাটসম্যান মাত্র ৩২ রান করেন। ওখানেই কার্যত নিউজিল্যান্ড ম্যাচ হেরে যায়।
তারপরও রস টেলরের বীরত্ব তাদের সাহস দেখাচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত স্বপ্নভঙ্গ হল নিউজিল্যান্ডের। বাংলাদেশেরও কী স্বপ্নভঙ্গ হল?
Leave a Reply