শীর্ষবিন্দু নিউজ: বাংলাদেশ পরিস্থিতিতে প্রকাশ্যে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে বলে মনে হয়। কিন্তু বাস্তবে, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ভারতকে ক্রমাগত অস্বস্তিকর অবস্থায় ফেলছে। ভারত বিশ্বাস করে, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান যদি প্রয়োগ করা হয় তাহলে বাংলাদেশ ও এ অঞ্চলে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। গতকাল টাইমস অব ইন্ডিয়ায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে সৃষ্ট অচলাবস্থার অবসান ঘটাতে বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে নৈশভোজ ও আলোচনায় আমন্ত্রণ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে অটল। বিএনপি যে রাজনীতি ছুড়ে দিয়েছে সে বিষয়ে ভারত অধিক সচেতন। ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের ফারাক এখানেই। দৃশ্যত বিএনপি-জামায়াতের বিষয়ে বেশি স্বস্তি প্রকাশ করছে যুক্তরাষ্ট্র।
ইন্দ্রানী বাগচির লেখা ইন্ডিয়া, ইউএস অ্যাট অডস ওভার বাংলাদেশ পলিসি শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে আরও লিখেছেন, ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজিনা গত সপ্তাহে ভারতের সাউথ ব্লক সফর করেছেন। ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং ও সিনিয়র অন্য সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে দীর্ঘ সময় বৈঠক করেছেন তিনি। ঢাকার রাজনীতিতে যখন পিকেটিং চলছে, হরতাল চলছে, রাজপথে সহিংসতা চলছে তখন এর স্থিতিশীলতা নিয়ে অভিন্ন উদ্বেগ প্রকাশ করে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র।
বিএনপি ও জামায়াতের কট্টর রাজনীতির বিষয়টি এখন আর কোন গোপন বিষয় নয়। ভারত বিশ্বাস করে যদি বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসে তাহলে বাংলাদেশ হবে সম্পূর্ণ একটি ভিন্ন রাষ্ট্র। বিগত বছরগুলোতে বিএনপি ও জামায়াতের কট্টর রাজনীতি প্রকাশ পেয়েছে। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা পাকিস্তানভিত্তিক লস্করে তৈয়বা ও আল কায়েদার প্রভাব চিহ্নিত করেছে।
পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলো থেকে এসব গ্রুপকে দেয়া হয়েছে প্রচুর অর্থ। কিছুটা দেয়া হয়েছে পাকিস্তান থেকেও। শেখ হাসিনার সরকার নিয়ে তুলনামূলক কম স্বস্তিতে যুক্তরাষ্ট্র। বিশেষ করে, গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর দ্বন্দ্ব, পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থায়ন নিয়ে দুর্নীতি এবং যুদ্ধাপরাধ আদালত নিয়ে এই অস্বস্তি। যুক্তরাষ্ট্র সরকারি পর্যায়ে হয়তো ভাবা হতে পারে বিএনপি-জামায়াতের অধীনে বাংলাদেশ হবে অধিক মুক্ত বাজার। তারা ক্ষমতায় গেলে কট্টর ইসলামপন্থা থেকে বেরিয়ে আসবে।
২০০১ সালে মুখোমুখি সংঘাতে বিডিআর সদস্যরা ১৫ বিএসএফ সদস্যকে হত্যা করে পীরদিয়াহ এলাকায়। ওই সময় জামায়াত সরকারে স্থান করে নেয়। গুরুত্বপূর্ণ এই পদ পেয়ে তারা তাদের ইসলামী এজেন্ডা ছড়িয়ে দেয়া শুরু করে। ওই সময়ে জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ ও হুজির মতো সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো বিকশিত হয়। ভারত সে সব দিনে ফিরে যাওয়ার বিরোধিতা করছে। এর ওপর রয়েছে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা। বাংলাদেশেও রয়েছে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। তারা ও মিয়ানমারের সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার প্রেক্ষিতে নয়া দিল্লি মনে করে পরিস্থিতি বিপর্যয়ের দিকে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত।
বাংলাদেশে কট্টরপন্থি রাজনীতি বৃদ্ধি পেলে তার ভয়াবহ প্রভাব পড়বে মিয়ানমারের স্থিতিশীলতায়। রোহিঙ্গাদের মধ্যে লস্করে তৈয়বা ও আল কায়েদার অনুপ্রবেশের বিষয়টি বার বারই বলা হচ্ছে। কট্টরপন্থি রাজনীতির ফলে যে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হবে তা ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়তে পারে। ছড়িয়ে পড়তে পারে চীনের ইউনান প্রদেশেও।