শুক্রবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৫৬

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ঘুরে দাঁড়ানোর ছাপ

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ঘুরে দাঁড়ানোর ছাপ

শীর্ষবিন্দু নিউজ ডেস্ক: মহামারিতে বিশ্বজুড়ে লকডাউনের মধ্যে অর্ডার-ধসের পর ফের ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত। আর সেটিই ভূমিকা রাখছে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে।

দেশের প্রধান রপ্তানি শিল্প অর্থাৎ পোশাক খাতের কর্তাব্যক্তিরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও অন্য বড় বড় বাজার থেকে বড়দিনের অর্ডার পাবেন বলে আশা করছেন তারা। এছাড়া বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশী শ্রমিকদের পাঠানো রেমিট্যান্সের প্রবাহও বেড়েছে। ফলে মহামারির কারণে আধা-লকডাউন আরোপের কারণে দেশের অর্থনীতিতে যে চাপ তৈরি হয়েছিল, তা ধীরে ধীরে ছাড়তে শুরু করেছে। বার্তা সংস্থা এপি’র এক প্রতিবেদনে এমনটা বলা হয়েছে।

এতে বলা হয়, গত সপ্তাহেই এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) জানিয়েছে যে, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের গতি আশাজাগানিয়া। সংস্থাটি পূর্বাভাস দিয়ে বলছে, বর্তমান পরিস্থিতি ঠিক থাকলে এই অর্থবছরে বাংলাদেশের অর্থনীতি ৬.৮ শতাংশ বাড়বে, যাকে অত্যন্ত শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি হারই ধরে নেয়া হচ্ছে। এপ্রিল ও মে মাসের তুলনায় এই পরিস্থিতি অত্যন্ত সুখকর। এপ্রিল-মের দিকে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৩০০ কোটি ডলার সমমূল্যের পোশাক ক্রয়ের আদেশ বাতিল বা স্থগিত করেছিল বৈশ্বিক পোশাক ব্রান্ডগুলো। এতে করে প্রায় ৪০ লাখ শ্রমিক ও হাজার হাজার কারখানা বিপাকে পড়ে যায়।

পোশাক খাতের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সভাপতি রুবানা হক বলেন, এই মুহূর্তে আমরা বলতে পারি যে, তৈরি পোশাক শিল্প মার্চ-মে মাসের তুলনায় উর্ধ্বমুখী প্রবৃদ্ধির ধারায় ফিরতে সক্ষম হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘পশ্চিমা অর্থনীতিতে গতি ফিরে আসছিল। আর তখনই আমরা ক্রেতাদের আলোচনার টেবিলে ফেরাতে সক্ষম হয়েছি। এই কারণে বাতিল হওয়া ৩১৮ কোটি ডলারের ক্রয়াদেশের মধ্যে ৮০-৯০ শতাংশই পুনর্বহাল করা হয়েছে।’

যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে পোশাক রপ্তানির মাধ্যমে বাংলাদেশ বছরে ৩৫০০ কোটি ডলার আয় করে থাকে। বাংলাদেশের পোশাক খাত চীনের পর বিশ্বের সর্ববৃহৎ। জুলাই মাসে বাংলাদেশের সামগ্রিক রপ্তানি ০.৬% বেড়ে ৩৯০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে। অথচ এপ্রিলে ৮৩ শতাংশ কমে ৫২ কোটি ডলারে নেমে গিয়েছিল। সেখান থেকে মে-জুনের দিকে রপ্তানি ফের বাড়তে শুরু করে ৩৬ শতাংশ হারে। আগস্টেও আগের বছরের তুলনায় ৪.৩ শতাংশ বেশি রপ্তানি হয়েছে। মূলত পোশাক খাতের পণ্য চালানের কারণেই এই তেজীভাব। সরকারের রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর পরিসংখ্যান তা-ই বলছে। জুলাই ও আগস্টে গার্মেন্ট খাতের চালান গেছে ৫৭০ কোটি ডলার সমমূল্যের।

ঢাকার থিংকট্যাংক পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ. মনসুর বলেন, পোশাক খাত বেশ ভালোভাবেই ফিরছে। আমাদের কৃষিখাতও ভালো করছে। রেমিট্যান্সও ফিরছে। এগুলোর সবই অর্থনীতির জন্য ভালো লক্ষণ। তিনি আরও বলেন, পুনরুদ্ধারের গতি স্পষ্ট। তবে চ্যালেঞ্জও আছে। পশ্চিমে আগামী কয়েক মাস এই মহামারি কী ধরণের আচরণ করে তার ওপরই পুনরুদ্ধারের গতি নির্ভর করবে।

এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর মনমোহন প্রকাশ বলেন, সরকার এই সংকট ভালোভাবেই মোকাবিলা করেছে। তার মতে, যথাযথ অর্থনৈতিক উদ্দীপনামূলক পদক্ষেপ ও সামাজিক সুরক্ষামূলক কর্মসূচি এখানে বড় ভূমিকা পালন করেছে। তিনি বলেন, রপ্তানি ও রেমিট্যান্স বৃদ্ধির হার দেখে আমরা আশাবাদী। আমরা আশা করি যে, এই পুনরুদ্ধারের গতি অব্যাহত থাকবে, যা প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে সহায়ক হবে।

বৃহস্পতিবার নাগাদ বাংলাদেশ মোট ৩ লাখ ৪২ হাজার করোনাভাইরাস রোগী শনাক্ত করেছে। সরকারি হিসাবে মারা গেছেন ৪৮২৩ জন। ৮ই মার্চ দেশটিতে প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়।

অনেক বিশেষজ্ঞ অবশ্য বলছেন, সরকারি হিসাবের চেয়ে বাস্তবে আক্রান্তের সংখ্যা অনেক বেশি। তবে তৈরি পোশাক শিল্প সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন পূর্ব-সতর্কতার কারণে কারখানায় রোগীর হার কম। ২৬শে মার্চ সরকার দেশজুড়ে লকডাউন ঘোষণা করে। ৩ মাস বন্ধ ছিল গার্মেন্ট খাতও। তবে ধীরে ধীরে খুলতে শুরু করে কারখানা।




Comments are closed.



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০৩১  
All rights reserved © shirshobindu.com 2012-2024