শীর্ষবিন্দু আর্ন্তজাতিক নিউজ: জাতিসংঘের উদ্বাস্তু বিষয়ক হাইকমিশনারে (ইউএনএইচসিআর) যাকাত তহবিলে অনুদান রেকর্ড পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই অর্থ বিতরণ করা হয়েছে সারা বিশ্বের ২০ লাখ উদ্বাস্তুর মাঝে।
পূর্ববর্তী চার বছরের তুলনায় ২০২০ সালে সংস্থাটির সর্বশেষ ইসলামিক ফিলানথ্রপি রিপোর্টে দেখা গেছে, ২০২০ সালে এই তহবিলে জমা পড়েছে ৬১.৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। যা আগের বছরগুলোর চেয়ে অনেক বেশি। ২০১৬-২০১৮ সালে সংস্থাটির যাকাত তহবিল থেকে সহযোগিতা পেয়েছে ৩৪ হাজারের বেশি মানুষ। কিন্তু গত বছর যাকাত, সদকা ও সদকায়ে জারিয়া মিলে যে অর্থ জমা পড়েছে তা থেকে উপকৃত হয়েছে প্রায় ২১ লাখ সুবিধা বঞ্চিত মানুষ।
ইউএনএইচসিআরের রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে ১২.৫ শতাংশ বেশি যাকাত জমা পড়েছে, আর এর থেকে উপকারভোগীর সংখ্যা বেড়েছে ৫৯ শতাংশ। রিপোর্টে আরো বলা হয়েছে, ২০২০ সালে ১০টি দেশে ইউএনএইচসিআরের সহযোগিতা কার্যক্রমের ২০ শতাংশই পরিচালিত হয়েছে যাকাত তহবিল থেকে।
সংস্থাটি জানিয়েছে, সারা বিশ্বের উদ্বাস্তু ও শরণার্থী সংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি ওআইসি ভূক্ত দেশগুলোতে। সব মিলে বিশ্বে উদ্বাস্তুর সংখ্যা ৮০ মিলিয়নেরও বেশি। করোনা মহামারির সময়ে তাদেরকে আরো কঠিন পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে যাকাত তহবিলে অনুদান বেড়ে যাওয়কে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে ইউএনএইচসিআর। সংস্থাটির রিপোর্টে বলা হয়েছে, মহামারির আর্থ-সামাজিক প্রভাবের কারণে মানুষের সাহায্যের প্রয়োজনীয়তা বেড়েছে। এই সময়ে আমাদের যাকাত তহবিলে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের উদারতাও ছিলো অবিশ্বাস্য।
জাতিসংঘের এই সংস্থাটির যাকাত তহবিলের অর্থ ব্যয় করা হয় প্রধানত রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু ও সিরিয়ার উদ্বাস্তুদের মাঝে। এছাড়া ইয়েমেন ও ইরাক যুদ্ধের উদ্বাস্তুদেরও সহযোগিতা করা হয় এই অর্থ দিয়ে। মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের বড় অংশই আশ্রয় নিয়েছে বাংলাদেশের কক্সবজারে। এছাড়া ভারতসহ আরো কয়েকটি দেশেও রয়েছে রোহিঙ্গারা। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে উদ্বাস্ত হওয়া প্রায় ৪০ লাখ মানুষ আশ্রয় নিয়েছে তুরস্কে। ইয়েমেন আর ইরাকেও লাখ লাখ মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছে।
ইউএনএইচসিআর তাদের যাকাত তহবিলের জন্য বিশেষ সফটওয়ার ব্যবহার করে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ ইন্টানেটে এর প্রচারণা চালায়। ২০২০ সালের রমজানে তাদের ‘এভরি গিফট কাউন্টস’ নামের একটি উদ্যোগ ব্যাপক সাড়া ফেলে। ৪১ হাজারের বেশি মানুষ উদ্যোগটিতে সাড়া দেয়। ‘গিভজাকাত’ নামের একটি মোবাইল অ্যাপ রয়েছে তাদের। যার মাধ্যমে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান অল্প সময়ে নিজেরাই যাকাতের পরিমাণ হিসাব করতে পাবে। সংস্থাটির রিপোর্টে এ বিষয়ে বলা হয়েছে, দাতারা এই অ্যাপের মাধ্যমে যাকাত প্রদান করে সেটি কোথায় কিভাবে ব্যয় হয় তাও জানতে পারবেন।
এছাড়া এককালীন অনুদান ও মাসিক সদকাও প্রদান করা যায় এই অ্যাপের মাধ্যমে। পাশাপাশি সংস্থাটির যাকাত তহবিল সংক্রান্ত বিভিন্ন ফতোয়াও যাচাই করা যাবে। জাতিসংঘের এই সংস্থাটি যাকাত তহবিল বিষয়ে মুসলিম স্কলারদের মতামত নিয়ে থাকে। ২০২০ সালে ওআইসির প্রতিষ্ঠান জেদ্দাভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ফিকাহ অ্যাকাডেমি ও মুসলিম ওয়ার্ল্ড লিগের প্রতিষ্ঠান মক্কাভিত্তিক ইসলামিক ফিকাহ কাউন্সিল এই সংস্থাটিতে যাকাত দেয়া প্রসঙ্গে দুটি ফতোয়া দিয়েছে। দুটি সংস্থাই ইউএনএইচসিআর-এর যাকাত সংগ্রহ ও বিতরণকে যথাযথ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে বলে রিপোর্টে উল্লেখ রয়েছে।
ইউএনএইচসিআর বলেছে, ২০২০ সালে যাকাত সংগ্রহ রেকর্ড পরিমাণ বৃদ্ধি পেলেও চলতি বছর অন্তত ২.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রয়োজন। জর্দান, লেবানন, ইয়েমেনে, ইরাক, মৌরিতানিয়া, মিসর, বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, ইরান, নাইজেরিয়া, বুরকিনা ফাসো ও সোমলিয়ার মতো দেশগুলোতে উদ্বাস্তুদের সহযোগিতার জন্য প্রয়োজন এই পরিমাণ অর্থ।
ওআইসির ইন্টারন্যাশনাল ফিকাহ অ্যাকাডেমির সেক্রেটারি জেনারেল কুতুম মোস্তফা সানো বলেন, মুসলিম সম্প্রদায় ইউএনএইচসিআরের যাকাত ফান্ডে ব্যাপক সাড়া দিয়েছে, বিশেষ করে করোনার এই দুঃসময়ে। তবে বাস্তব চাহিদা আরো অনেক গুণ বেশি।
Leave a Reply