বাংলাদেশ সফররত বৃটিশ পররাষ্ট্র ও কনওয়েলথ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ব্যারনেস সাইদা ওয়ার্সি বলেন, বৃটেন কোন রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের পক্ষে নয়। শাহবাগের আন্দোলনকারীদের মূল দাবি জামায়াতে ইসলামী ও তাদের অঙ্গ সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করা, এ ব্যাপারে বৃটেনের অবস্থান জানতে চাইলে বৃটিশমন্ত্রী বলেন, আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। কোন দলের সঙ্গে রাজনৈতিক বিরোধ থাকলে তা আদর্শিকভাবেই মোকাবিলা করা উচিত।
তিনি আরো বলেন, যুক্তরাজ্য যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সমর্থন করে। তবে তার দেশ মৃত্যুদণ্ড সমর্থন করে না। যেসব দেশে মৃত্যুদণ্ডের সাজার বিধান চালু আছে, তা বাতিল করতে যুক্তরাজ্য ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তবে যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য অহিংস আন্দোলনের প্রতি যুক্তরাজ্যের সমর্থন রয়েছে বলে জানান তিনি। আগামী নির্বাচন দেশে-বিদেশে গ্রহণযোগ্যতার জন্য সব দলের অংশগ্রহণ প্রয়োজন বলে মনে করেন এ বৃটিশমন্ত্রী।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপুমনির সঙ্গে তার দপ্তরে প্রায় সোয়া ঘণ্টার বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, দীপুমনির সঙ্গে শাহবাগের আন্দোলন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, আগামী নির্বাচন, মানবাধিকার, বিশেষ করে রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।
বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপে নির্বাচন দেখতে চায় যুক্তরাজ্য। অতীতের মতো সুষ্ঠু নির্বাচন হলে যুক্তরাজ্য তাতে সহযোগিতাও করবে। গতকাল ঢাকায় যুক্তরাজ্যে গমনেচ্ছুদের ‘প্রাইম টাইম ভিসা সার্ভিস’-এর উদ্বোধনকালে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন সফররত যুক্তরাজ্যের দণি এশিয়া ও কমনওয়েলথ বিষয়ক সিনিয়র মন্ত্রী ব্যারোনেস সাঈদা ওয়ার্সি। পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ এই সিনিয়র মন্ত্রী হরতাল প্রসঙ্গে বলেন, প্রত্যেক মানুষেরই ধর্মঘট করার অধিকার আছে। আবার স্বাভাবিক জীবন যাপন করারও অধিকার আছে জনগণের। যুদ্ধাপরাধীদের বিষয় নিয়ে তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা অপরাধ করেছে তাদের অবশ্যই বিচার হওয়া উচিত। তবে বিচারটি যেন স্বচ্ছ ও উন্মুক্তভাবে পরিচালিত হয় এবং দেশের মানুষের কাছে যেন তা প্রশ্নবিদ্ধ না হয়; সেদিকে তীè নজর রাখতে হবে। যুক্তরাজ্য কোনো মৃত্যুদণ্ডকে সমর্থন করে না বলেও জানান এই মন্ত্রী। এর আগে সকাল ৮টায় তিন দিনের সফরে এমিরেটস এয়ারওয়েজের একটি ফাইটে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছেন তিনি।
বিরোধীদলীয় নেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সাথে বৈঠক করেন ব্যারনেস সাইদা ওয়ার্সি । বেগম খালেদা জিয়া ওই বৈঠককালে সাঈদা ওয়ার্সিকে বলেন, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার পাশাপাশি বিএনপিও মনে করে সরকারের গঠিত যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল আন্তর্জাতিক মানের নয়। বেগম খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে সন্ধ্যা ৬টায় এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে সাঈদা ওয়ার্সি সাংবাদিকদের বলেন, যুক্তরাজ্য মৃত্যুদণ্ডের বিধান সমর্থন করে না। যেসব দেশে এখনো সাজা হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে, তা বাতিল করতে যুক্তরাজ্য আন্তরিকতার সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি শাহবাগের জমায়েতকে অহিংস আন্দোলন বলে উল্লেখ করে এর প্রতি তার দেশের সমর্থন ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন অবাধ ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হোক, তাই চায় যুক্তরাজ্য। তবে তা তত্ত্বাবধায়কপদ্ধতিতে হবে কি না তা নির্ধারণ করবে এ দেশের জনগণ, রাজনৈতিক দলগুলো ও সরকার। তিনি আরো বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার সাথে বৈঠকে দুই দেশের পারস্পরিক সম্পর্কোন্নয়নের কৌশল নিয়ে আলোচনা হয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পাওয়ার পর এটি ব্যারোনেস সাঈদা ওয়ার্সির প্রথম বাংলাদেশ সফর। তিন দিনের সরকারী সফরে বাংলাদেশে অবস্থানকালে ওয়ার্সি সিলেট সফরেও যাবেন এবং সেখানে তিনি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সাথে মিলিত হবেন। যুক্তরাজ্যের সাথে পারিবারিক ও ব্যবসায়িক সম্পর্ক রয়েছে এমন ব্যক্তিরা এতে অংশ নেবেন বলে জানা যায়।
Leave a Reply