ব্রেক্সিট বা ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্য বের হয়ে যাওয়ার পর বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে এমএলএটি চুক্তি সইয়ের জন্য দেশটিকে অনুরোধ জানাল বাংলাদেশ। পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন গত সোমবার এ বিষয়ে যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পারমানেন্ট সেক্রেটারি ম্যাথিউ রাইক্রফটের সঙ্গে ভার্চ্যুয়ালি বৈঠক করেন।
যুক্তরাজ্যে বসে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচারকারীদের আইনের আওতায় আনতে দেশটির সঙ্গে পারস্পরিক আইনি সহায়তা চুক্তি করতে চায় সরকার। এ বিষয়ে যুক্তরাজ্যকে পারস্পরিক আইনি সহায়তা চুক্তি (এমএলএটি) সইয়ের অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ।
ওই বৈঠকে অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থাসহ নিরাপত্তা সহযোগিতা, উগ্রপন্থীদের মোকাবিলায় সহায়তা, যুক্তরাজ্যে অবৈধভাবে অবস্থানরত লোকজনকে ফেরাতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) আদলে চুক্তিসহ বিভিন্ন বিষয়ে তাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে।
যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পারমানেন্ট সেক্রেটারির সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে মাসুদ বিন মোমেন গণমাধ্যমকে বলেন, গত মাসে লন্ডনে ও নিউইয়র্কে এই বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। শেষ পর্যন্ত গত সোমবার ভার্চ্যুয়ালি আমাদের মধ্যে নানা বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আলোচনায় বিভিন্ন বিষয়ের পাশাপাশি একপর্যায়ে তাঁকে বলেছি, যুক্তরাজ্যের যে উদারনীতি রয়েছে, সেটির অপব্যবহার করা হচ্ছে।
বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যারা অপপ্রচার চালাচ্ছে, তাদের আইনের আওতায় আনা যায় কি না, সেটি তুলে ধরে আমরা এমএলএটি সইয়ের বিষয়ে তাঁকে অনুরোধ জানিয়েছি। এ ক্ষেত্রে কীভাবে কাজ করা যায়, তা নিয়ে আমাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকার ২০১৮ সালে নতুন করে তৎপরতা শুরু করে। ওই বছর যুক্তরাজ্যের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসনের সঙ্গে আলোচনায় সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী তারেক রহমানকে দেশে ফেরানোর প্রসঙ্গটি তোলেন। তখন বরিস জনসন ২০০৩ সালের আসামি প্রত্যর্পণ আইনের আওতায় নতুন করে চিঠি লেখার পরামর্শ দিলে সেই অনুযায়ী যুক্তরাজ্যকে চিঠি পাঠায় বাংলাদেশ। এখন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর পদে আছেন বরিস জনসন।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, আসামি প্রত্যর্পণ আইনের আলোকে নতুন করে চিঠি লিখলেও তারেক রহমানকে ফেরানোতে বেশ জটিলতা রয়েছে। প্রথমত, এখন পর্যন্ত দুই দেশের মধ্যে আসামি প্রত্যর্পণের কোনো চুক্তি নেই। এখন পর্যন্ত দুই দেশ সুনির্দিষ্ট ব্যক্তি ধরে একে অন্যকে সহযোগিতা করে। আসামি প্রত্যর্পণ আইন অনুযায়ী কোনো অভিযুক্ত ব্যক্তিকে তাঁর দেশে ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্রে অনেক শর্ত মানতে হয় যুক্তরাজ্যকে। এ ছাড়া অভিযুক্ত ব্যক্তিকে তাঁর দেশে পাঠানোর বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেন যুক্তরাজ্যের আদালত।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, আসামি প্রত্যর্পণের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে ভারতের আদলে এমএলএটি সই করার বিষয়টি বাংলাদেশ তখন সামনে আনে। যুক্তরাজ্যে অবৈধভাবে যাঁরা অবস্থান করছেন, তাঁদের ফেরত পাঠাতে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করতে চায় দেশটি। তবে বাংলাদেশ ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে যে চুক্তি করেছে, তার আদলে যুক্তরাজ্য থেকেও একইভাবে লোকজনকে ফেরাতে আগ্রহী।
পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, গত সোমবারের আলোচনায় অনিয়মিত হয়ে পড়া লোকজনকে ফেরাতে যুক্তরাজ্য নতুন একটি পদ্ধতির কথা তোলে। তখন আমাদের পক্ষ থেকে বলেছি, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে যে পদ্ধতি রয়েছে, সেটি শুরুতে ভালো কাজ না করলেও সাম্প্রতিক সময়ে তাতে ভালো অগ্রগতি হচ্ছে। একই প্রক্রিয়া অনুসরণ করে যুক্তরাজ্যের সঙ্গেও কাজটি করা যায়। পরে যুক্তরাজ্যও বিষয়টি বুঝতে পেরে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে।
প্রসঙ্গত, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এক যুগের বেশি সময় ধরে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন। একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলাসহ কয়েকটি মামলায় বাংলাদেশের আদালতে দণ্ডপ্রাপ্ত তিনি। এখন যুক্তরাজ্যের কাছে এমএলএটির বিষয়টি আবার তুলে ধরার পেছনে তারেক রহমানকে আইনের আওতায় আনার প্রচেষ্টার যোগসূত্র থাকতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন। বিশেষ করে গত মাসে বিএনপি নেতাদের সঙ্গে তারেক রহমানের রুদ্ধদ্বার বৈঠকের পর বাংলাদেশের অনুরোধের বিষয়টিকে তাৎপর্যপূর্ণ হিসেবে দেখছেন তারা।
Leave a Reply