নিউ ইয়র্ক টাইমসের নাম সবারই জানা। তবে বয়সে প্রবীণ আর শক্তিশালী গণমাধ্যম হওয়া সত্ত্বেও বাণিজ্যিক প্রতিযোগিতার তোপে অনেকটাই বেসামাল হয়ে পড়ে এ প্রভাবশালী গণমাধ্যম। ঘুরে দাঁড়ানোর চ্যালেঞ্জে অনলাইনমুখী হয়ে কমাসের মধ্যেই ব্যবসা সফল হয়েছে নিউ ইয়র্ক টাইমস। মুনাফাতেও গড়েছে এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ রেকর্ড।
নব্য ধারার ওয়েসাইটে পেওয়্যাল যুক্ত, অনলাইন বিজ্ঞাপনের কাটতি এবং প্রিন্ট সংস্করণের সংকোচিত করে অনলাইন পাঠকের ১৩ ভাগ প্রবৃদ্ধি এ সাফল্য এসেছে। এমনটাই বললেন গণমাধ্যমের বাজার বিশেষজ্ঞেরা। অর্থনৈতিক চাপে পড়া এ প্রতিষ্ঠানটি ২০১২ সালের সবশেষ ত্রৈমাসিকে এসে ১১ কোটি ২০ লাখ ডলার মুনাফা অর্জন করেছে। কিন্তু গত বছরও এ আয় ছিল ৫ কোটি ৯০ লাখ ডলার। অনেকটা দৈবধনে পাওয়া এ সাফল্যকে আরও সুসম্প্রসারিত এবং টেকসই করতে এখন নানামুখী প্রচেষ্টায় ব্যস্ত আছে নিউ ইয়র্ক টাইমস। এতে অনলাইননির্ভর চাকরির বাজারে দক্ষ কর্মীদের চাহিদা হুট করে বেড়ে গেছে।
সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনের সক্রিয় টুলসের (সিএসই) সুবাদে অনলাইন বিজ্ঞাপনের বাজার এখন দ্রুতই তার গন্ডি ছাড়িয়ে যাচ্ছে। ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বব্যাপী। এ ধারায় নিউ ইয়র্ক টাইমসের মালিকানাধীন ইন্টারন্যাশনাল হেরাল্ড ট্রিবিউন মুনাফার অঙ্ক ঘরে তুলেছে। বলতে গেলে গত বছরের লোকসান কাটিয়ে এ বছর মুনাফায় ফিরেছে হেরাল্ড ট্রিবিউন। প্রসঙ্গত, ২০১১ সালে হেরাল্ড ট্রিবিউন ৪ কোটি ডলার লোকসান গুনেছে। কিন্তু ২০১২ সালের একেবারে শেষভাগে এসে ১৩ কোটি ৩০ লাখ ডলার মুনাফা ঘরে তুলেছে একই ঘরানার এ অনলাইন সংবাদমাধ্যম। নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রধান নির্বাহী মার্ক থম্পসন জানান, ইতিহাসে এমনটা প্রথম যে সার্কুলেশনের আয় বিজ্ঞাপনী আয়কে ছাড়িয়ে গেছে। আর তা সম্ভব হয়েছে অনলাইনমুখী বাস্তবতার কারণে। বিবিসি ছেড়ে আসা থম্পসন এখন বেশ গুছিয়েই এগিয়ে নিচ্ছেন নিউ ইয়র্ক টাইমসকে।
তবে শুরুতেই অপ্রত্যাশিত চাকরি ছাটাইয়ে বিষয়ে তিনি খুব বেশি কিছু বলেননি। তবে সময়ের প্রয়োজেনই বিয়োজনের এ প্রক্রিয়া থেকে আবারও সংযোজনের ধারাতেই ফিরবে নিউ ইয়র্ক টাইম। হুট করে অনলাইননির্ভর কর্মীর কারণেই এমনটা করতে হয়েছে বলে থম্পসন অভিমত প্রকাশ করেন। প্রসঙ্গত, ২০০৪ সাল থেকে থম্পসন বিবিসিতে কাজ করে আসছিলেন। থম্পসনের ভাষ্যমতে, এ মুহূর্তে প্রিন্ট এবং অনলাইন এ দুই মিডিয়াতেই বিজ্ঞাপনের বাজার বেশ টালমাটাল। বলতে গেলে দারুণ চ্যালেঞ্জ আছে এ বাজারে। আবার অপেক্ষাকৃতভাবে প্রিন্টের চেয়ে অনলাইন বিজ্ঞাপন এগিয়ে গেছে। এটা সত্য। আর এ ধারা অব্যাহত থাকবে। বিশ্বব্যাপী এ বছর স্মার্টফোন আর ট্যাবে ছেড়ে যাবে। দামের তুলনামূলক চিত্রে আসবে সহজলভ্যতা। আর অ্যাপের তোড়ে সব কিছুই অসীম হয়ে পড়ছে। এখানে যেন ‘স্কাই ইজ দ্য লিমিটি’ এ সত্যটাই সবচে বেশি প্রযোজ্য।
এ আলোচ্য বছরেই ৩০০ কোটি পাঠক স্মার্টফোন আর ট্যাবে সংবাদ পড়বে। এ জন্য মানসম্পন্ন আর নির্ভরযোগ্য সংবাদের প্রয়োজনীতা আছে। তেমনি গুণগত মান আর জীবননির্ভর তথ্যও অনেক বেশি চাহিদা তৈরি করবে। এ চাহিদার কল্যণেই ই-কমার্স গুটি গুটি পায়ে এগোচ্ছে। আধুনিক জীবনের বিকিকিনি আর বিজ্ঞাপনের বাজার তৈরিতে এ মাধ্যমটি সত্যিই পুরো বিশ্বের সেকেলে ধারাকে দ্রুতই বদলে দিয়েছে। অনলাইন বিজ্ঞাপনের এ সুদিনে তাই বিখ্যাত সংবাদমাধ্যমগুলো নিজেকে এ চলমান ধারার সঙ্গে পুরোপুরি সম্পৃক্ত করছে। আর এ ধারায় গোঁড়ামি করে পিছিয়ে থাকার সুযোগ আর থাকছে না।
Leave a Reply