আজ শুক্রবার। পবিত্র জুমাবার। আজকের বিষয় ‘হযরত শীশ (আ.) এর জীবনী’। শীর্ষবিন্দু পাঠকদের জন্য এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন ইমাম মাওলানা নুরুর রহমান।
হযরত শীশ (আ.) ছিলেন হযরত আদম (আ.)-এর পুত্র এবং পরবর্তী নবী। আমাদের উপমহাদেশে তার জন্ম এবং এ দেশেই তার ইন্তেকাল হয়েছিল বলে কোনো কোনো তাফসির গ্রন্থে উল্লেখ আছে। হযরত শীশ (আ.) স্বাভাবিকভাবেই জন্মগ্রহণ করেছিলেন।
৯৬০ বৎসর বয়সে হযরত আদম (আঃ) অসুস্থ হয়ে পড়েন। পীড়িত অবস্থায় তিনি ফলমূল খাবার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। পুত্রগন ফলমূল সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন জায়গায় চলে গেলে, শুধুমাত্র শীষ (আঃ) পিতার সেবা যত্নের জন্য পাশে ছিলেন। অনান্য পুত্রদের ফল আনতে দেরী দেখে হযরত আদম (আঃ) পুত্র শীষকে বললেন ”তুমি অমুক পাহাড়ে গিয়ে দোয়া কর, তা হলে তোমার দোয়ার বরকতে আল্লাহ পাক আমার জন্য ফলমূল পাঠিয়ে দেবেন”।
উত্তরে শীষ (আঃ) বললেন “হে পিতা আপনি দোয়া করলে আল্লাহ আপনার দোয়া কবুল করবেন এবং ফল পাঠিয়ে দেবেন”। আদম (আঃ) বললেন “গন্ধম খাওয়ার কারনে আমি ফলের জন্য আল্লাহর দরবারে হাত তুলতে লজ্জাবোধ করছি“। পিতার কথামত শীষ (আঃ) আল্লাহর দরবারে হাত তুলে দোয়া করলেন। দোয়া শেষে দেখতে পেলেন হযরত জিবরাইল (আঃ) এর সাথে মুখোশ পড়া একজন হুর রেকাবী ভর্তি ফলমূল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আদম (আঃ) বললেন “হে ফিরিশতা ?।
জিবরাইল (আঃ) বললেন ”আল্লাহ পাক জান্নাত থেকে এই হুরকে পাঠিয়েছেন শীষ (আঃ) এর স্ত্রী হিসাবে গ্রহণ করার জন্য, কেননা শীষ ব্যতিত আপনার সকল সন্তানই জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি হয়েছে”। তখন আদম (আঃ) বেহেশতের হুরের সাথে শীষ (আঃ)’র বিয়ে সম্পূর্ন করে দিলেন।
হযরত শীষ (আঃ) এর পুত্রগন আরবের জেদ্দায় বসতি গড়ে তুলেন। হযরত শীষের বংশ থেকেই হযরত ইবরাহিম (আঃ) জন্ম গ্রহন করেন। আমাদের শেষ নবী হযরত মোহাম্মদ (সঃ) হযরত ইবরাহিম (আঃ) পুত্র ইসমাইল (আঃ) এর বংশধর। হযরত আদম (আঃ)এর মৃত্যুর পর হযরত জিবরাইল (আঃ) জান্নাত থেকে মূল্যবান কাপড়, সুগন্ধিদ্রব্য নিয়ে এসে হযরত শীষ (আঃ) কে গোসল, দাফন ও কাফনের পদ্ধতি বলে দিলে, জিবরাইল (আঃ) এর নির্দেশ মত শীষ (আঃ) তা সম্পূর্ন করেন।
এ সময় আদম (আঃ) এর বংশধররা প্রায় চল্লিশ হাজার উপস্থিত ছিলেন। আদি পিতা হযরত আদম (আঃ) এর লাশ মোবারক আবু কুবাইস পর্বতের একটি গর্তে দাফন করা হয়।
বর্ণিত আছে যে, হযরত নুহ (আঃ) এর মহা প্লাবনের সময় আদম (আঃ) মৃতদেহ কবর থেকে উঠিয়ে একটি বাক্সে ভরে জাহাজে উঠিয়ে নেন। প্লাবন শেষ হলে পুনরায় তা যথাস্থানে দাফন করা হয়। শীষ (আঃ) এর পুত্রগণ আরবের জেদ্দায় বসতি স্থাপণ করেন। স্বামীর মৃত্যুতে বিবি হাওয়া (আঃ) মানসিক ভাবে দূর্বল হয়ে পড়েন। পুত্র শীষ (আঃ) কে সঙ্গে নিয়ে তিনি তৎকালীন বায়তুল মামুর তাওয়াফ করার জন্য মক্কায় আসেন। এরপর তিনি জেদ্দায় পুত্র নাতি নাতনীদের সাথে বসবাস শুরু করেন।
আদম (আঃ) এর মৃত্যুর এক বৎসর পর বিবি হাওয়া (আঃ) ইন্তেকাল করেন। তাকে জেদ্দাতেই দাফন করা হয়। হযরত শীষ (আঃ) এর এবং তাঁর হুর স্ত্রীর কবর ভারতের অযোদ্ধার ফাইযপুরে অবস্থিত। যেহেতু হুরদের মৃত্যু নেই তাই উনার স্ত্রী জীবিত আছেন এখনো। তবে উনার পার্থিব কবর রয়েছে হযরত শীষ (আঃ) এর কবরের পাশেই।
লেখক: ইসলাম বিভাগ প্রধান– শীর্ষবিন্দু নিউজ। ইমাম ও খতিব– মসজিদুল উম্মাহ লুটন, সেক্রেটারি– শরীয়া কাউন্সিল ব্যাডফোর্ড ও মিডল্যন্ড ইউকে। সত্যায়নকারী চেয়ারম্যান– নিকাহনামা সার্টিফিকেট ইউকে। প্রিন্সিপাল– আর রাহমান একাডেমি ইউকে, পরিচালক– আর–রাহমান এডুকেশন ট্রাস্ট ইউকে।
ভাই দলিল ভিত্তিক তথ্য ও কথা বল্লে ভাল হত। হুরের সাথে নবীর বিবাহ এবং সন্তান জন্মদান ও তার বেচে থাকা সবগুলো এলোমেলো লাগছে তাই হাদিস ও কোরআনের উদৃতি দিয়ে লিখলে পাঠক হিসাবে উপকৃত হব।
আলহামদুলিল্লাহ। জানার আগ্রহ থেকে এমন একটি প্রশ্নর উত্তর লেখার চেষ্টা করছিলাম।
আমি যতোটুকু জনি হযরত আদম (আঃ) এর সকল সন্তান জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি হয়েছিল শুধু মাত্র শীষ (আঃ) ছাড়া। তাই তাহার বিবাহ করার মতো কোন মেয়ে ছিল না। একদিন হযরত আদম (আঃ) তার ছেলে শীষ (আঃ) কে বললেন আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে। পিতার কথামত শীষ (আঃ) আল্লাহর দরবারে হাত তুলে দোয়া করলেন। দোয়া শেষে দেখতে পেলেন হজরত জিবরাইল (আঃ) এর সাথে মুখোশ পড়া একজন হুর রেকাবী ভর্তি ফলমূল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আদম (আঃ) বললেন “হে জিবরাইল এই হুরটি কে?। জিবরাইল (আঃ) বললেন ” আল্লাহ পাক জান্নাত থেকে এই হুরকে পাঠিয়েছেন শীষ (আঃ) এর স্ত্রী হিসাবে গ্রহণ করার জন্য।
সুতরাং শীষ (আঃ) এর স্ত্রী ছিলেন বেহেস্তের একজন হুর। (নামটা জানা যায় নি)
আল্লাহু আ’লামু