ব্রিটিশ এই কিশোরীর বাবা বহুবছর আগে সিলেট থেকে লন্ডন গিয়ে ব্রিটেনের নাগরিকত্ব পেয়েছিলেন। বাবার সুবাদেই ওই কিশোরী ব্রিটেনের নাগরিকত্ব পান। তবে তার মা সিলেটে তাদের গ্রামের বাড়িতেই বসবাস করেন। খবর বিবিসির।
এবার বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এই ব্রিটিশ কিশোরী অভিযোগ করেছেন, সিলেটে তার মা তাকে জোর করে বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন এবং সে জন্য তিনি তার মায়ের বাড়ি থেকে অন্য জায়গায় আত্মগোপনে আছেন।
টেলিফোনে ওই কিশোরী গণমাধ্যমকে বলেছেন, জোরপূর্বক বিয়ে থেকে বাঁচতে তিনি পালিয়ে বেড়াচ্ছেন এবং ঢাকায় ব্রিটিশ হাইকমিশনসহ বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ করে তিনি এ ব্যাপারে সহযোগিতা চেয়েছেন।
এদিকে তার মা মেয়ে নিখোঁজ হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে স্থানীয় থানা পুলিশের কাছে সাধারণ ডায়েরি বা করেছেন। পুলিশ সেই জিডির অভিযোগ তদন্ত করছে বলে জানিয়েছে।
ব্রিটেনে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কম্যুনিটিতে মেয়েদের জোর করে বিয়ে দেওয়ার প্রবণতার বিরুদ্ধে আন্দোলন করেন, এমন এক মানবাধিকারকর্মী আকলিমা বিবি বলেছেন, ওই কিশোরীর নিরাপত্তার জন্য ঢাকায় ব্রিটিশ দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।
ওই কিশোরী গণমাধ্যমকে বলেছে, আমি ব্রিটিশ নাগরিক। তাই সাহায্যের জন্য ঢাকায় ব্রিটিশ হাইকমিশিনসহ বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করেছি। আমি এখন লন্ডনে যেতে চাই। আমার সাহায্য প্রয়োজন। মায়ের বিরুদ্ধে জোর করে বিয়ে দেয়ার অভিযোগ এনে ওই কিশোরী প্রথমে স্থানীয় এক সমাজকর্মীর সাহায্য নেন।
সেই সমাজকর্মী শারমিন আকতার জানিয়েছেন, অভিযোগ পাওয়ার পর তিনি কিশোরীকে নিয়ে সিলেটে ব্রিটিশ কনস্যুলেট অফিসে গিয়ে সাহায্য চাইলে তাদের ঢাকায় ব্রিটিশ হাইকমিশনে যোগাযোগ করতে বলা হয়। তখন শারমিন আকতার ওই কিশোরীর বক্তব্য বা অভিযোগের ব্যাপারে লন্ডনে বসবাসকারী এক মানবাধিকারকর্মী আকলিমা বিবির সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
লন্ডনের সেই মানবাধিকার কর্মীর সহায়তায় তারা ঢাকায় ব্রিটিশ হাইকমিশনে যোগাযোগ করে সাহায্য চেয়েছেন এবং তাতে আশ্বাস পেয়েছেন। শারমিন আকতার বলছেন, মেয়েটা আমাকে বলেছে, ওর মা ১০ লাখ টাকা নগদ, ১৫ লাখ টাকা কাবিন, ২০ ভরি স্বর্ণ এবং কিছু জমি নিয়ে তাকে বিয়ে দিতে চায়।
শারমিন আকতার আরও জানিয়েছেন, কিশোরী তার কাছে এসব অভিযোগ করলে সাহায্যের জন্য তারা ব্রিটিশ হাইকমিশনে যখন যোগাযোগ করেন, তখন ব্রিটিশ হাইকমিশন থেকে কিশোরীর বক্তব্য নেয়া হয় টেলিফোন কনফারেন্সের মাধ্যমে।
অন্যদিকে, ব্রিটিশ ওই কিশোরীর মা পিয়ারা বেগম সিলেটে একটি থানায় মেয়ে নিখোঁজ এই অভিযোগে জিডি করেছেন। জিডিতে পিয়ারা বেগম বলেছেন, তার মেয়েকে ওই সমাজকর্মী ও তার ছেলে মিলে লুকিয়ে রেখেছে গত ২৫ এপ্রিল থেকে। কিন্তু তিনি জোর করে বিয়ে দেয়ার চেষ্টার তার মেয়ের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
ব্রিটেনে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কম্যুনিটিতে মেয়েদের জোর করে বিয়ে দেয়ার প্রবণতা এখনও রয়েছে। কিশোরীর মায়ের জিডির ভিত্তিতে ওই কিশোরী এবং সাহায্যকারী সমাজকর্মীকে খোঁজা হচ্ছে বলে স্থানীয় পুলিশ জানিয়েছে।
প্রসঙ্গত, কয়েকবছর আগে কিশোরীর বাবাও বাংলাদেশে ফিরে গিয়ে সেখানে বসবাস করছেন। আর ১৫ বছর বয়সি ওই কিশোরী স্থানীয় একটি স্কুলে লেখাপড়া করেন। মায়ের বিরুদ্ধে কিশোরীর অভিযোগ, তার মা তাকে জোর করে বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু তার বয়স মাত্র ১৫ বছর। সেজন্য সে মায়ের বাড়ি থেকে অন্য জায়গায় গিয়ে আত্নগোপনে আছে।
Leave a Reply