ব্রিটেনের রাজার রাজ্যাভিষেকের বছর লন্ডন ব্যুরো অফ টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের মর্যাদাকর সিভিক অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত হয়েছেন মানবিক ও সেবামূলক কাজে সম্পৃক্ত লেখক, সাংবাদিক ও সংগঠক মো. আব্দুল মুনিম জাহেদী ক্যারল।
কমিউনিটির কল্যাণে অসামান্য অবদান রাখার স্বীকৃতি স্বরূপ মঙ্গলবার (২ মে) বিকেলে পূর্ব লন্ডনের দ্য আর্টস প্যাভিলিয়নে টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের উদ্যোগে তাঁকে এ অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়।
এক জমকালো অনুষ্ঠান আয়োজনের মধ্য দিয়ে বিশিষ্ট কমিউনিটি অ্যাক্টিভিস্ট ও লন্ডন এডুকেশন ট্রাস্ট এর প্রেসিডেন্ট সাংবাদিক মো. আব্দুল মুনিম জাহেদী ক্যারলের হাতে অ্যাওয়ার্ড তুলে দেন অতিথিবৃন্দ।
সন্ধ্যা ৭টায় বারার স্পিকার কাউন্সিলার শাফি আহমেদের স্বাগত বক্তব্যের শুরু হওয়া উক্ত অ্যাওয়ার্ড প্রদান অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন লন্ডন ব্যুরো অফ টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের ডেপুটি মেয়র কাউন্সিলর মায়ূম তালুকদার, ইন্টারমিন চীফ এক্সিকিউটিভ স্টিফেন হালসি, জিএলএ মেম্বার উমেষ দেসাই, লিড মেম্বার কাউন্সিলর, কাউন্সিলারসহ অন্যান্য কাউন্সিলারগণ আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
সাংবাদিক ক্যারল বিভিন্ন সামাজিক ও ইসলামিক সংগঠনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তিনি অনেক বছর যাবৎ কমিউনিটির কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন।
বিশেষ করে বৈশ্বিক করোনা মহামারীর সময় কাউন্সিল অফ মস্ক টাওয়ার হ্যামলেটসের মাধ্যমে জার্নালিজম ও কমিউনিটি এক্টিভিস্ট এর মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনের জন্য ব্রিটেনে বাংলাদেশীদের পরিচিত মুখ সাংবাদিক মো. আব্দুল মুনিম জাহেদী ক্যারলকে এই সম্মানে ভূষিত করে কর্তৃপক্ষ।
এ বছর বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে মোট ১২ জনকে এ সম্মাননা প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে স্পিকার ও অতিথিবৃন্দ বিভিন্ন ক্যাটেগরিতে অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্তদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে কমিউনিটির উন্নয়নে অবদান রাখায় ভূয়সী প্রশংসা করে তাদের হাতে অ্যাওয়ার্ড তুলে দেন।
উল্লেখ্য যে, টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের সিভিক অ্যাওয়ার্ড সবচেয়ে প্রেসটিজিয়াস (অতি সম্মানজনক) অ্যাওয়ার্ড। প্রতি বছর একটি নিরপেক্ষ বোর্ডের মাধ্যমে সামাজিক, সাংস্কৃতিক, সাংবাদিকতা এবং চ্যারিটি কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ এই অ্যাওয়ার্ড মনোনয়ন করা হয়।
সংক্ষিপ্ত জীবনবৃত্তান্ত
স্বপ্নবান তারুণ্যের উজ্জ্বল প্রতিনিধি মো. আব্দুল মুনিম জাহেদী ক্যারল। ডাক নাম ক্যারল। জন্মের পর তাঁর পিতা প্রথম নাম রাখেন আব্দুল মুনিম জাহেদী। এরপরে বিলেতে ব্যারিস্টারি পড়ুয়া চাচা আব্দুর রাজ্জাক আদর করে নাম রাখেন ক্যারল। বর্তমানে এই নামেই সবার কাছে পরিচিত।
তাঁর পিতা মোঃ আব্দুর রহিম জাহেদী ও মাতা রেজিয়া খানম। ১৯৬৬ খ্রীস্টাব্দের নভেম্বরের রবিবার ছিল তাঁর পৃথিবীতে আবির্ভাব দিবস। এই দিনে পরিবারে নতুন এক সূর্যোদয় আলোকিত করে আপন আঙিনায় তার আগমন ঘটে গোলাপগঞ্জ উপজেলাধীন হিলালপুর গ্রামে। তিনি পেশায় একজন সফল ব্যবসায়ী ও সরকারি চাকুরীজীবি।
আত্হারিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে মাধ্যমিক শিক্ষাজীবন শুরু হয় ১৯৭৮ সালে। তারও আগে প্রাথমিক শিক্ষার হাতে খড়ি নিজ গ্রামহিলালপুর বরায়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
একজন ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে দেশ-বিদেশে ব্যাডমিন্টন, ক্রিকেট ও ফুটবল খেলায় সফল আয়োজক তিনি। খেলাধুলার সামগ্রীও খেলার মান উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও কর্মশালার আয়োজন করে অনেক উন্নতমানের খেলোয়াড় সৃষ্টি করে বেশ খ্যাতি অর্জন করেছেন।
ক্রীড়াক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য তাকে লন্ডনের বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হয়। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে তিনি দেশ-বিদেশে আরো অনেকগুলি সম্মাননা পদক পেয়েছেন।
আব্দুল মুনিম ক্যারল ছোট বেলা থেকেই সাহিত্য-সংস্কৃতির সাথে জড়িত। সাহিত্য সংগঠক হিসেবেও তার সুখ্যাতি রয়েছে।
তিনি সুরমা ইয়ং রাইটার্স গ্রুপ ও নিউ মুন ইয়ং রাইটার্স এন্ড আর্টিস্ট গ্রুপের প্রতিষ্টাতা সভাপতি, সংলাপ সাহিত্য-সংস্কৃতি ফ্রন্টের প্রেসিডিয়াম মেম্বার, সংহতি সাহিত্য পরিষদ, বাংলাদেশ সাহিত্য পরিষদ, রেনেসাঁ সাহিত্য মজলিশ, মুসলিম সাহিত্য সংসদ সিলেট, মোবাইলপাঠাগার সিলেট সহ বিভিন্ন সংগঠনের দাতা ও আজীবন সদস্য।
মানুষের অত্যন্ত প্রিয়ভাজন সদা অমায়িক, ভদ্র, সজ্জন ও পরোপকারী আব্দুল মুনিম ক্যারল সব সময় প্রাণখোলা হাসিতে মুখটা সকালের আলোর মতো উদ্ভাসিত করে এগিয়ে আসেন উজাড় করা ভালোবাসায়। ব্যক্তিগত জীবনে আবিদা লাকি তার জীবনসঙ্গী। তাদের দুই মেয়ে ও এক ছেলে। বড় মেয়ে মুনিমা সুলতানা রাফা সেকেন্ডারি স্কুলের সাইন্স শিক্ষক, ছোট মেয়ে মায়মুনাহ মুনিম রিয়া ইউনিভার্সিটিতে অধ্যয়নরত ও একমাত্র ছেলে মো. আব্দুল মুহাইমিন রাফি ডিগ্রী করে একটি আন্তর্জাতিক কোম্পানিতে ডাটা এনালাইসিস হিসাবে চাকুরি করছে।
পরিবারে দুই ভাই ও দুই বোনের মধ্যে আব্দুল মুনিম ক্যারল দ্বিতীয়, বড়বোন রেহানা বেগম ও ছোটবোন রোহানা বেগম বিবাহিত। একমাত্র ছোটভাই আব্দুল মুকাব্বির জাহেদ।
পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে আব্দুল মুনিম ক্যারল ও তার ভাইবোনেরা মানবতার কল্যাণে বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসা ও এতিমখানা প্রতিষ্ঠায় এবং গরিব অসহায় মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছেন অবিরাম।
এই সিভিক অ্যাওয়ার্ড পাওয়ার পর এক প্রতিক্রিয়ায় মো. আব্দুল মুনিম জাহেদী ক্যারল বলেন, কোন স্বীকৃতি পাওয়ার আশায় আমরা সমাজের জন্য কাজ করি না। বিগত চল্লিশ বছর ধরে, কমিউটির কল্যাণের জন্য কাজ করছি শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ও কমিউনিটির মানবতার কল্যাণে।
একমাত্র মানবতার সেবায় নিয়োজিত করেছি সারাজীবন, কোন পুরস্কার বা স্বীকৃতির প্রত্যাশা ছাড়াই কাজ করে যাচ্ছি অবিরাম। আমার প্রয়াত বাবাও ছিলেন সমাজকল্যাণের একজন নিবেদিত প্রাণ এবং তিনি তার পুরো জীবন বিলীন করেছেন মানুষকে সাহায্য ও কল্যাণের জন্য, বিনিময়ে কিছু নেননি, শুধু দিয়েই গেছেন। একজন আদর্শ পিতার শিখানো পথে এগিয়ে যাচ্ছি।
আমি তাঁর অনুসরণ করার এবং তাঁর শিক্ষা ও মূল্যবোধকে সমুন্নত রাখার চেষ্টা করি। আমার স্ত্রী এবং পরিবারের অটল সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞ, মাননীয় স্পিকার, মেয়র এবং যারা আমাকে মনোনয়ন দিয়েছেন এবং ভোট দিয়েছেন সিভিক অ্যাওয়ার্ড দেওয়ার জন্য, তারা সবার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।
এই স্বীকৃতি একটি মহান সম্মান এবং এটি নিঃসন্দেহে অনেক সমমনা ব্যক্তিকে নতুন উদ্যমে সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং চ্যারিটি কাজে নিযুক্ত হতে অনুপ্রাণিত করবে।
তিনি বলেন, যারা আমাকে কমিউনিটির সেবার জন্য আমার আবেগকে অনুসরণ করতে সক্ষম করার জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। আমি এই ক্ষেত্রে আমার কৃতিত্বের জন্য গর্বিত এবং আমি সম্প্রদায়ের প্রার্থনা এবং সমর্থনে আমার বাকি জীবন মানুষের সেবা চালিয়ে যাওয়ার আশা করি। তারপরও কাজের এমন স্বীকৃতি শুধু আনন্দেরই নয়, এটা অন্যদেরও অনুপ্রাণিত করে।
Leave a Reply