তীব্র অর্থনৈতিক মন্দা ও জীবনযাপনের অসহনীয় ব্যয় বৃদ্ধির মধ্যে রাজার অভিষেকের অনুষ্ঠান সম্পন্ন হলো।
ব্রিটেনে স্থানীয় সরকার নির্বাচন ও যুক্তরাজ্যের রাজার অভিষেক অনুষ্ঠান প্রায় একযোগে অনুষ্ঠিত হলো।
নতুন রাজার অভিষেকে নতুনত্ব ছিল রাজতন্ত্রবিরোধী প্রতিবাদ আর প্রতিবাদকারীদের দমাতে পুলিশি গ্রেফতার।
দেশটির স্থানীয় সরকারের ২৩০ কাউন্সিলের ৮০০০ কাউন্সিলর পদের জন্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো গত ৪ মে।
আগামী বছর অনুষ্ঠেয় ব্রিটেনের জাতীয় সাধারণ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচন ছিল একটা রিহার্সেল। এমন মত ব্রিটেনের রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।
ব্রিটেনে বসবাস করছেন কয়েক দশক ধরে; পর্যবেক্ষণ করছেন ব্রিটেনের রাজনীতি। এমন একজন জানান, টোরি পার্টি আগামী সাধারণ নির্বাচন হারবে, সেটা অনেকটাই নিশ্চিত, তবে খুবই বাজেভাবে যেন ভরাডুবি না ঘটে, সেই মরিয়া চেষ্টায় প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক।
এবারের কাউন্সিল নির্বাচনে ২৩০টির মধ্যে লেবার পার্টি ৭১টি (যা আগের চেয়ে ২২টি বেশি), কনজারভেটিভ পার্টি ৩৩টি (আগের চেয়ে ৪৮টি কম), লিবডেম ২৭টি (আগের চেয়ে ১২টি বেশি), স্বতন্ত্র ১৩টি আসন পেয়েছে।
৯১টি কাউন্সিলে কোন দলই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। এবারের নির্বাচনে কনজারভেটিভের ১০৬৮জন প্রার্থী পরাজিত হয়েছেন অর্থাৎ ১০৬৮টি সিট কমে গেছে। পক্ষান্তরে লেবার ও লিবডেম এর ৫৩২টি এবং ৪০৯টি সিট বৃদ্ধি পেয়েছে।
নির্বাচনী ফলাফলে লেবার নেতৃত্ব উচ্ছ্বসিত হলেও দলের নেতৃত্ব ডানে সরছেন ক্রমাগতই। ফার রাইটিস্ট ব্লকের পলিসির দিকে ঝুঁকছে দলটি।
জেরেমী করবিনের পথ ধরে দলে বামপন্থীদের নানাভাবে কোণঠাসা করে রাখার প্রবণতাই মুখ্য হয়ে উঠছে দলে। ট্রেড ইউনিয়ন নেতাদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত লেবার দলের বর্তমান নেতার দূরত্ব ক্রমাগতই বাড়ছে ট্রেড ইউনিয়নিস্টদের সঙ্গে।
লেবার পার্টি আসন্ন নির্বাচনে ক্ষমতায় যাবে, এমন সম্ভাবনা আমি দেখি না। লেবারের সঙ্গে কনজারভেটিভের রাজনীতির পলিসিগত তেমন তারতম্য দেখি না।
আগামী বছর অনুষ্ঠেয় সাধারণ নির্বাচনে লেবার জয়ী হলেও তানা সাধারণ মানুষের জীবনযাপনের ব্যয় লাঘবে স্বস্তি আনতে আদৌ পারবেন কি না, সেটি বড় প্রশ্ন।
কারণ, অর্থবহ ইতিবাচক কোনও পরিবর্তনের রূপরেখা এখনও লেবার পার্টি দেখাতে পারেনি। ব্রিটেনের লেবার নেতৃত্বে এখন ধনিক শ্রেণিরই প্রতিনিধিত্ব, এমন মত বহু মানুষের।
প্রিন্স হ্যারি রাজপরিবারের বাইরে মুক্ত মানুষ হিসেবে এবং ভালোবাসার মানুষের সঙ্গে যুগল জীবনযাপনের জন্য রাজপ্রতিনিধিত্ব ত্যাগ করেছেন স্বেচ্ছায়, হয়েছেন বিরাগভাজনও। ভালোবাসার জন্য তার এক পূর্বপুরুষের কাছেও রাজদণ্ড তুচ্ছ ছিল।
প্রিন্স হ্যারির এক ছেলের জন্মদিন ছিল। তাই সংক্ষিপ্ত উপস্থিতির পরই ত্বরিত ফিরে গিয়েছেন ক্যালিফোর্নিয়ায়, স্ত্রী-ছেলে-মেয়ের কাছে, ভালোবাসার মানুষের কাছে।
রাজার অভিষেক উপলক্ষে সোমবার (৮ মে) বাড়তি একটা ব্যাংক হলিডে (সাধারণ ছুটি)। দেশজুড়ে ব্যাপক আয়োজনের মধ্যে স্ট্রিট পার্টিও ছিল। ’
একই সঙ্গে দেশটিতে অসহনীয়ভাবে বাড়ছে জীবনযাত্রার ব্যয়। এরই মাঝে শেল এনার্জি কোম্পানি মুনাফা করেছে প্রত্যাশার চেয়ে অতিরিক্ত ১ বিলিয়ন পাউন্ডেরও বেশি।
মুদ্রাস্ফীতি রোধে ব্যাংক অব ইংল্যান্ড সুদের হার আবারও বাড়াতে পারে আগামী সপ্তাহে। কয়েক দফা সুদের হার বাড়ায় বহু মানুষের লোন, ঘরের মর্টগেজ পেমেন্টও বেড়ে গেছে এরই মধ্যে অসহনীয়ভাবে।
এমনিতেই ব্রেক্সিটের কারণেও ব্রিটেনে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের ঘাটতি লেগেই আছে। যেসব রাজনীতিক অতীতে ব্রেক্সিটের পক্ষে জনমত গঠনে ছিলেন। এখন তারাই অর্থনৈতিক সংকটের দোহাই দিচ্ছেন ইউক্রেন নিয়ে জটিলতাকে।
১৯৮৩ সালে সৃষ্ট রাজতন্ত্রবিরোধী রিপাবলিকান ক্যাম্পেইন গ্রুপের সিইও-কেও আটক করেছে পুলিশ। ক্ষমতাশীন কনজারভেটিভ পার্টি কিছুদিন আগেই প্রতিবাদী বিক্ষোভ সমাবেশ দমাতে পুলিশি ব্যাপক ক্ষমতা দিয়ে নতুন আইনও ব্রিটেনের সংসদে পাস করিয়েছে।
যদিও এই মুক্তমত প্রকাশের স্বাধীনতাকে বাধাগ্রস্ত করাকে অনেক এমপি, ক্যাম্পেইন গ্রুপ প্রতিবাদ করছে যুক্তরাজ্যের ঐতিহ্যের পরিপন্থী অভিহিত করে।
Leave a Reply