পূর্ব লন্ডনে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ইয়াসমিন বেগমকে (৪০) হত্যার ঘটনায় তার স্বামী কাইয়ুম মিয়াকে (৪১) দোষী সাব্যস্ত করেছেন ব্রিটেনের আদালত।
কাইয়ুম এর আগে চুরি ও দুটি প্রতারণার ঘটনায় আদালতে দোষী সাব্যস্ত হন বলে রবিবার (২১ মে) আদালতকে উদ্ধৃত করে ইস্ট লন্ডন এডভ্যাটাইজারের খবরে প্রকাশিত হয়।
ব্রিটিশ বাংলাদেশি দম্পতি কাইয়ুম ও ইয়াসমিন ঘটনার আগে থেকেই আলাদা বসবাস করছিলেন।
গত বছরের ২২ মার্চ পূর্ব লন্ডনের বেথনাল গ্রিন ওয়ার্ডের রজার স্ট্রিটের ফ্ল্যাট থেকে ছুরিকাঘাতে মারাত্মক জখম অবস্থায় পুলিশ উদ্ধার করে দুই সন্তানের জননী ইয়াসমিনের মরদেহ।
ইয়াসমিনকে খুনের ঘটনায় গত ১৭ মে লন্ডনের ওল্ড বেইলি আদালত হোমারটন হাই স্ট্রিটের বাসিন্দা কাইয়ুম মিয়াকে দোষী সাব্যস্ত করে। গত বছরের ৯ জুন থেকে জেলে রয়েছেন কাইয়ুম।
বোন হত্যার রায় নিয়ে নিহত ইয়াসমিনের ভাই আতিক জামান গণমাধ্যমকে বলেছেন, ঘাতক কাইয়ুম শুধু আর্থিক লাভের জন্য ইয়াসমিনকে হত্যা করে। যিনি ছিলেন একজন মমতাময়ী মা, সন্তান ও স্নেহশীল বোন। কাইয়ুম ইয়াসমিনের ঘরে ঢুকে তাকে খুন করে ৮০০ পাউন্ড ও গয়না লুটে নেয়।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, কাইয়ুম ও ইয়াসমিন বিবাহিত থাকলেও প্রায় এক বছর ধরে তারা আলাদা থাকছিলেন ও তাদের মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদের প্রক্রিয়া চলছিল।
ঘটনার দিন কাইয়ুম ও ইয়াসমিনের ঠিকানা ও তাদের আশপাশের সিসিটিভি ক্যামেরাগুলোর ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ঘাতককে শনাক্ত করে পুলিশ।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আদালতকে জানান, ঘরে ঢুকে অতর্কিতে ইয়াসমিনকে কুপিয়ে হত্যা করে ঘাতক ইয়াসমিনের ব্যাংক কার্ড ও গয়না লুটে নেয়।
এরপর ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করে ডাকাতি সাজাতে বাইরে থেকে দরজায় তালা দিয়ে পালিয়ে যান কাইয়ুম। ইয়াসমিনকে খুনের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে কাইয়ুম ইয়াসমিনের ব্যাংক কার্ড ব্যবহার করে ৮০০ পাউন্ড ব্যাংক বুথ থেকে তুলে নেন। বন্ধক রাখেন ইয়াসমিনের গয়নাও।
ইয়াসমিন নিহত হওয়ার পর স্থানীয় কাউন্সিলর রেবেকা সুলতানা জানান, ইয়াসমিন তার দুই ছেলেকে নিয়ে বসবাস করতেন। ইয়াসমিনের বড় ছেলে ইয়ার ফাইভ ও ছোট ছেলে ইয়ার ওয়ানের পড়তো।
অন্যান্য দিনের মতো ওই দিন সকালে তিনি তার দুই ছেলেকে ঘরের পাশের স্থানীয় বঙ্গবন্ধু স্কুলে পৌঁছে দেন। বিকালে স্কুল ছুটির পরও ছেলেদের নিতে না আসায় স্কুলের শিক্ষিকা পুলিশে খবর দেন।
পরে পুলিশ ইয়াসমিনের ঘরের দরজা ভেঙে ইয়াসমিনের ছুরিকাহত লাশ উদ্ধার করে।
ভবনের বাসিন্দা ও ইয়াসমিনের প্রতিবেশীরা জানান, ইয়াসমিন শান্ত স্বভাবের ছিলেন। দুই অবুঝ শিশু সন্তান ও নিহত ইয়াসমিনের কথা তারা কখনেও ভুলতে পারবেন না।
ঘটনার তদন্তকারী কর্মকর্তা লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশের ইন্সপেক্টর ল্যারি স্মিথ বলেছেন, কাইয়ুমের কাছ থেকে দূরে সরে ইয়াসমিন নতুন করে বাঁচতে চেয়েছিলেন।
তবে আসন্ন বিবাহবিচ্ছেদ নিয়ে হিংসার বশবর্তী হয়ে না ডাকাতির উদ্দেশ্যে কাইয়ুম ইয়াসমিনকে হত্যা করেছেন, সে প্রশ্নের কোনও স্পষ্ট জবাব তদন্ত কর্মকর্তাদের দেননি কাইয়ুম মিয়া।
Leave a Reply