আজ শুক্রবার। পবিত্র জুমাবার। আজকের বিষয় ‘সূরা মূলক’। শীর্ষবিন্দু পাঠকদের জন্য এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন ‘ইসলাম বিভাগ প্রধান’ ইমাম মাওলানা নুরুর রহমান।
সুরা মূলক পড়লে কি আল্লাহ তাআলা কবর আজাব মাফ করে দেবেন? এই সুরা কি কেয়ামতের দিন পাঠকারীর জন্য সুপারিশ করবে?
সুরা মূলক বা সুরা আল-মূলক। পবিত্র কোরআন শরিফের ৬৭ তম সুরা। এই সুরার আয়াত সংখ্যা ৩০, রুকু ২টি। সুরা আল-মূলক মক্কায় অবতীর্ণ হয়। সুরা মুলকের নামের অর্থ সার্বভৌম কর্তৃত্ব। এই সুরা পবিত্র কোরআন শরিফের ২৯ নম্বর পারায়।
সূরা মূলক এর ফজিলত
সূরা মুলকের অনেকগুলো ফজিলত রয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য বেশ কয়েকটি ফজিলত বর্ণনা করব। সূরা মুলক এর ফজিলত এর মধ্য থেকে প্রথম ফজিলতটি হচ্ছে, এটি তার পাঠকের ব্যাপারে আল্লাহর কাছে সুপারিশ করতে থাকবে, যতক্ষণ না এর পাঠককে ক্ষমা করে দেওয়া হয়।
আল্লাহ তায়ালার কালাম যদি কোনো বান্দার সম্পর্কে তাঁর কাছে সুপারিশ করে। তাহলে আশা করা যায় আল্লাহ তায়ালা তার অনুগ্রহের সে বান্দাকে ক্ষমা করে দিবেন। আর সূরা মুলক এমন একটি সূরা, যা তার পাঠকের জন্য মাগফিরাতের সুপারিশ করবে।
সুরা আল-মুলকের পূর্ববর্তী সুরা হচ্ছে সুরা আত-তাহরিম। আর পরবর্তী সুরা হচ্ছে সুরা আল-কলম। সুরা মুলকের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ফজিলত রয়েছে। যে ব্যক্তি প্রতিরাতে সুরা মুলক পাঠ করবে, সুরা মুলক তার জন্য কেয়ামতের দিন সুপারিশ করবে । তাকে কবরের আজাব থেকে হেফাজত করবে। এই ফজিলত সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত।
রাসুল (সা.) হাদিস শরিফে ইরশাদ করেন, ‘কোরআনের মধ্যে ত্রিশ আয়াত বিশিষ্ট একটি সুরা আছে, যেটি কারো পক্ষে সুপারিশ করলে— তাকে মাফ করে দেওয়া হয়। এ সুরাটি হলো- তাবারাকাল্লাজি বিয়াদিহিল মুলক।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ১৪০০; সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২৮৯১)
আরেক হাদিসে এসেছে, ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘যে ব্যক্তি প্রতি রাতে তাবারাকাল্লাজি বিয়াদিহিল মুলক পড়বে, আল্লাহ তাআলা তাকে এই সুরার মাধ্যমে কবরের আজাব থেকে বাঁচিয়ে রাখবেন।’ (আমালুল ইয়াউমি ওয়াল লাইলাতি, নাসায়ি, হাদিস: ৭১১; সহিহুত তারগিব: ২/২৫৩, হাদিস: ১৫৮৯)
সুরা আল–মুলককে ৬টি অংশে ভাগ করা যায়
প্রথম অংশে (আয়াত ১-৪) আল্লাহর ক্ষমতা বর্ণনা করা হয়েছে এবং শেষ অংশে (আয়াত ২৮-৩০) আল্লাহর ক্ষমতার তুলনায় আমাদের দুর্বলতার কথা প্রকাশ করা হয়েছে।
দ্বিতীয় অংশে (আয়াত ৫-১৫) জাহান্নাম ও জান্নাতের কথা এসেছে। তৃতীয় অংশে (আয়াত ১৬-২২) বলা হয়েছে, বিপদ শিগগির আসন্ন। তার প্রস্তুতির জন্য কতটুকু সময় প্রয়োজন, সেটা বলা হয়েছে পরের অংশে, অর্থাৎ চতুর্থ অংশে (আয়াত ২৩-২৪)।
পঞ্চম অংশে (আয়াত ২৫-২৭) প্রকাশ করা হয়েছে যে মানুষ অবাধ্যবশত জানতে চায়, সে বিপদ কবে ঘটবে?
সুরা মুলক তেলাওয়াতের সময় সুরা মুলক রাতের বেলা পড়া উত্তম, তবে অন্য যেকোনো সময়ও পড়া যাবে। সুরাটি অর্থ বুঝে নিয়মিত পড়ায় রয়েছে অনন্য তাৎপর্য। এই সুরা নামাজের সঙ্গে পড়াও উত্তম। মুখস্ত না থাকলে দেখে দেখে অর্থ বুঝে পড়লে বিশেষ সাওয়াব পাওয়া যায়।
হাদিসে এসেছে-
– রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুরা মুলক তেলাওয়াত না করে রাতে ঘুমাতে যেতেন না।’ (তিরমিজি)
– হজরত জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আলিফ লাম মীম তানযিল ও তাবারাকাল্লাজি না পড়ে কখনো ঘুমাতে যেতেন না।’
– সুরা মূলক ৪১ বার (একচল্লিশ) তেলাওয়াত করলে সব বিপদ-আপদ হতে রক্ষা পাওয়া যায় এবং ঋণ পরিশোধ হয়। এ সুরা পাঠে কবরের আজাব থেকেও বাঁচা যায়।
উল্লেখ্য যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুরা মুলক না পড়ে ঘুমাতে যেতেন না মর্মে বর্ণনার উপর ভিত্তি করেই আলেম-ওলামা ও বুজুর্গানে দ্বীনগণ ইশার নামাজের পর সুরা মুলকের তেলাওয়াতের আমল করার কথা বলেন। সুতরাং রাতে ঘুমানোর আগে কিংবা ইশার নামাজের পরে বুঝে বুঝে সুরা মুলক পড়া যেতে পারে।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সুরা মুলকের আমল নিয়মিত করার তাওফিক দান করুন। হাদিসে ঘোষিত ফজিলত লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।
Leave a Reply