বুধবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৩, ০১:২৭

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই ইন দ্য ইউকে’র উদ্যোগে সেমিনার অনুষ্ঠিত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই ইন দ্য ইউকে’র উদ্যোগে সেমিনার অনুষ্ঠিত

গবেষণা ও শিক্ষাদানের উৎকর্ষতা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার উপাদান - প্রফেসর মোহাম্মদ মুশফিক উদ্দিন

নিলুফা ইয়াসমীন হাসান, লন্ডন / ১৬৭
প্রকাশ কাল: শুক্রবার, ২ জুন, ২০২৩

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই ইন দ্য ইউকে’র উদোগে আয়োজিত “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক উৎকর্ষতা এবং একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ শীর্ষক রিসার্চ সেমিনার” (“Dhaka University ‘s Academic Excellence in the Contemporary World and Facing the 21st Century Challenges”) বক্তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে বিভিন্ন একাডেমিক পদে নিয়োগ পদ্ধতি পরিবর্তনের আহবান জানিয়েছেন।

রোববার ২৮শে মে পূর্ব লন্ডনের ব্রাডি আর্টস সেন্টারে অনুষ্ঠিত সেমিনারে প্রধান বক্তা ছিলেন লীডস বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর মোহাম্মাদ মুশফিক উদ্দিন। ভার্চুয়ালি আলোচনায় অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর এ কে এম মাকসুদ কামাল, ইউনিভার্সিটি অফ লিঙ্কনের এসোসিয়েট প্রফেসর ড. মাহফুজুর রহমান এবং বার্মিংহামের নিউম্যান ইউনিভার্সিটির হেড অফ বিজনেস ড. তৈমুর শরীফ।

সেমিনারে সভাপতিত্ব এবং পরিচালনা করেন সংগঠনের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা দেওয়ান গৌস সুলতান।সেমিনারের সূচনালগ্নে সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেইন এবং এডুকেশন এন্ড রিসার্চ সেক্রেটারি ও রিসার্চ টীমের আহ্বায়ক এরিনা সিদ্দিকী সুপ্রভা স্বাগত বক্তব্য রাখেন।

প্রধান বক্তা লীডস বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর মোহাম্মাদ মুশফিক উদ্দিন লিখিত বক্তব্যে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে বাংলাদেশের প্রধাণ একাডেমিক প্রতিষ্ঠান, যার রয়েছে একটি সমৃদ্ধ ও প্রভাবশালী ইতিহাস।

তিনি তাঁর সূচনা বক্তব্যে বলেন, ১৯২১ সালের পহেলা জুলাই প্রতিষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই বিভিন্নভাবে জাতির প্রতি অবদান রেখে যাচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাৰ্থী এবং শিক্ষকরা ১৯৫০ দশকের শুরুতে ভাষা আন্দোলনে এবং ১৯৬০ দশকের শেষ থেকে শুরু করে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধে অপরিমেয় ভূমিকা পালন করেছেন।

লীডস বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইনেনশিয়াল মেনেজমেন্ট বিভাগের চেয়ার এবং ডিপার্টমেন্টাল ডাইরেক্টর ফর ইন্টারন্যাশনালাইজেশন, প্রফেসর মুহাম্মাদ মুশফিক উদ্দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উল্লেখযোগ্য গ্রাজুয়েটদের মধ্যে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, প্রফেসর সত্যেন্দ্র নাথ বসু, আর্কিটেক্ট ফজলুর রহমান খান, নোবেল লরেট প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনুস, বিশিষ্ট একাডেমিক ডক্টর মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ প্রমুখের নাম উলেখ করেন।

তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে অগণিত রাজনীতিবিদ, আইন প্রণেতা, সিভিল সার্ভেন্ট এবং অন্যান্য পেশাজীবীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যারা জাতির বৃহত্তর মঙ্গলের জন্য বিভিন্ন জাতীয় নীতিমালা প্রণয়নে অবদান রেখেছে। প্রফেসর মোহাম্মদ মুশফিক উদ্দিন আরো বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজার হাজার গ্রাজুয়েট আন্তর্জাতিকভাবে বিখ্যাত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছেন এবং গ্লোবাল পর্যায়ে অবদান রাখছেন।

প্রফেসর মুশফিক উদ্দিন বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে রয়েছে ১৩টি ফ্যাকাল্টি এবং ৮৪টি বিভাগ। এই বিশ্ববিদ্যালয় আরো রয়েছে ১২টি ইনস্টিটিউশন এবং ৫০ টি রিসার্চ সেন্টার এবং ব্যুরো। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪৬ হাজার ছাত্র- ছাত্রী এবং ২ হাজার ২ শত একাডেমিক স্টাফ রয়েছে। অর্থাৎ, প্রতি ২০ জন ছাত্রের জন্য একজন একাডেমিক স্টাফ রয়েছে। এই অনুপাত যুক্তি সঙ্গত এবং গ্লোবাল মানসম্মত বলে তিনি উল্লেখ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরির সুবিধা এবং ছাত্র-ছাত্রীদের বাসস্থানের সুবিধা থাকলেও ক্রমবর্ধমান চাহিদার তুলনায় এগুলো যথেষ্ট নয় বলে তিনি উল্লেখ করেন।

একাডেমিক উৎকর্ষতা প্রসঙ্গে প্রফেসর মুশফিক বলেন, এর উৎকর্ষতা প্রধানত নির্ভর করে গবেষণা ও শিক্ষাদানের ওপর, যা কিনা আগত চ্যালেঞ্জ সমূহকে মোকাবিলা করবে এবং ঐসব চ্যালেঞ্জ সমূহকে দক্ষভাবে মোকাবিলা করার জন্য ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ভালোভাবে প্রস্তুত করে তুলবে। তাই, আমরা কি ধরনের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছি সে সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ঐগুলো মোকাবিলা করতে হবে।

একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ সমূহের মধ্যে প্রফেসর মুশফিক উদ্দিন পরিবেশগত, সামাজিক এবং অৰ্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ সমূহের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, দেশের প্রধান একাডেমিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল দায়িত্ত্ব হচ্ছে, উচ্চমানের গবেষণা এবং আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষাদান নিশ্চিত করে, বিভিন্ন সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমস্যাকে মোকাবিলা করা। তিনি আরো বলেন, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক ফান্ডিং সংস্থাগুলো থেকে গবেষণার তহবিল সংগ্রহের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসার্চ সক্রান্ত অনুষদ গুলোকে অবশ্যই আরো তৎপর হতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর এ কে এম মাকসুদ কামাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আ্যালামনাই ইন দ্য ইউ কে এর এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, এখানে অ্যালামনিদের মধ্যে পারস্পরিক সুসম্পর্ক থাকলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উপকৃত হবে। তিনি সকল অ্যালামনাইর ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহবান জানান।

নিউম্যান ইউনিভার্সিটির হেড অফ বিজনেস ড. তৈমুর শরীফ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশ্য হচ্ছে দেশের জন্য দায়িত্বশীল নাগরিক তৈরী করা। বাজেট নিয়ে সব সময়ই আমাদের অভিযোগ থাকে। সব সময়ই বলা হয়ে থাকে যে বাজেট যথেষ্ট নয়।

তিনি আরো বলেন, কিছু সুনির্দিষ্ট মানদন্ডের ভিত্তিতে একজন প্রভাষকের প্রমোশন পেতে হলে একটি সুনিদিষ্ট পদ্ধতির মধ্যে দিয়ে প্রমোশন পাওয়ার কথা। আমার মনে হয় , আমাদের দেশে ঐ পদ্ধতিটাই নাই। যেমন এখানে রয়েছে রিসার্চ এক্সসিলেন্ট ফ্রেমওয়ার্ক। প্রত্যেকটা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতি ৫/৬ বছর পর পর তাদের রিসার্চ সংক্রান্ত অবদান পেশ করে। এর ভিত্তিতেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর রেটিং নির্ধারিত হয়। দূৰ্ভাগ্যবশতঃ বাংলাদেশে এধরনের কিছু নেই।

ইউনিভার্সিটি অফ লিঙ্কনের এসোসিয়েট প্রফেসর ড. মাহফুজুর রহমান রিসার্চের ওপর গুরুত্বারোপ করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা বৃদ্ধির আহবান জানান।

ড. মাহফুজুর রহমান বলেন যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশিক্ষণ এবং প্লেসমেন্ট না থাকায় যারা ডিগ্রি নিয়ে ইউকেতে আসেন, তারা অন্যদের চেয়ে পিছিয়ে থাকেন।

সংগঠনের সভাপতি দেওয়ান গৌস সুলতানের সভাপতিত্বে এবং পরিচালনায় সেমিনারের শেষ পর্বে অনুষ্ঠিত হয় প্রশ্ন-উত্তর পর্ব।

জম-জমাট এই প্রশ্ন-উত্তর পর্বে সংগঠনের সদস্য এবং আমন্ত্রিত অতিথি অর্থাৎ কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ অংশ নেন।

সেমিনারে উপস্থিত তিন বক্তার হাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই ইন দ্য ইউকের ক্রেস্ট তুলে দেন সভাপতি দেওয়ান গৌস সুলতান, সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আব্দুর রাকিব, প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক মারুফ আহমেদ চৌধুরী এবং এডুকেশন এন্ড রিসার্চ সেক্রেটারি এরিনা সিদ্দিকা সুপ্রভা।

রিসার্চ টীমে কনভেনার ছাড়া আরো যারা সদস্য ছিলেন তারা হলেন প্রশান্ত পুরকায়স্থ, নিলুফা ইয়াসমীন হাসান, সৈয়দ হামিদুল হক, সৈয়দ ইকবাল, মাহারুন আহমেদ, মিজানুর রহমান, এম কামরুল হাসান এবং পদাধিকার বলে সভাপতি দেওয়ান গৌস সুলতান এবং সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন।

বিপুল সংখ্যক আ্যলামনাই এবং কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে সেমিনার ফলপ্রসু হয়েছে বলে সকলেই প্রশংসা করেছেন। একে সাফল্যমন্ডিত করতে যাঁরা সহযোগিতা করেছেন তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন এরিনা সিদ্দিকী। তাঁরা হলেন: মোহাম্মদ আবুল কালাম, সৈয়দ ইকবাল, মোহাম্মদ সামসুল আরেফিন, মোহাম্মদ কামরুল হাসান, মারুফ আহমেদ চৌধুরী, মেসবাহ উদ্দিন ইকো, সৈয়দ জাফর, ড. কামরুল হাসান, আবদুল মতিন চৌধুরী, সাহাব আহমেদ বাচ্চু এবং মির্জা আসাব বেগ। সেমিনার শেষে নৈশ ভোজে সবাইকে আপ্যায়ন করা হয়।




Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০৩১  
All rights reserved © shirshobindu.com 2023