আজ শুক্রবার। পবিত্র জুমাবার। আজকের বিষয় ‘সূরা আল জ্বিন (আরাবী : الجنّ)। শীর্ষবিন্দু পাঠকদের জন্য এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন ‘ইসলাম বিভাগ প্রধান’ ইমাম মাওলানা নুরুর রহমান।
সূরা আল জ্বিন (আরাবী : الجنّ) মুসলমানের ধর্মীয় গ্রন্থ আল-কোরান ৭২ তম সুরা; এর আয়াত অর্থাৎ বাক্য সংখ্যা ২৮ এবং রুকু তথা অনুচ্ছেদ সংখ্যা ২।
সূরা আল জ্বিন মককায় অবতীর্ণ হয়েছে। এই সূরায় জ্বিন সম্পরদায়রে কথা বলা হয়েছে।
নামকরণ
জিন অর্থ অদৃশ্য জাতি। রাসুল এর কাছে জিনেরা এসে কুরআন শ্রবন করত। এই সুসংবাদ মমিনদের কাছে পৌছানোর জন্য যে এই সুরাতে জিনদের আলোচনা হয়েছে বিধায় সুরাটির নাম করন করা হয়েছে জিন।
আল জিন এ সূরার নাম। এর বিষয়বস্তুর শিরোনামও আল জিন। কারণ এতে কুরআন শুনে জিনদের নিজেদের জাতির কাছে যাওয়া এবং তাদের মধ্যে ইসলামের তাবলীগ ও দাওয়াতের কাজ করার ঘটনা বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে।
নাযিল হওয়ার সময়-কাল
বুখারী ও মুসলিম হাদীস গ্রন্থে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কয়েকজন সাহাবীকে সাথে নিয়ে উকাযের বাজারে যাচ্ছিলেন। পথে নাখলা নামক স্থানে তিনি ফজরের নামাযে ইমামতি করেন।
সে সময় একদল জিন ঐ স্থান অতিক্রম করেছিলো। কুরআন তিলাওয়াতের শব্দ শুনে তারা সেখানে থেমে যায় এবং গভীর মনযোগসহ কুরআন শুনতে থাকে। এ সূরাতে এ ঘটনারই উল্লেখ করা হয়েছে।
এ বর্ণনার ভিত্তিতে অধিকাংশ মুফাস্সির মনে করেছেন যে,এটা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইতিহাস খ্যাত তায়েফ সফরের ঘটনা। ঘটনাটি ঘটেছিল হিজরাতের তিন বছর আগে নবুওয়াতের ১০ম বছরে।
কিন্তু কয়েকটি কারণে এ ধারণা ঠিক নয়। তায়েফের উক্ত সফরে জিন দের কুরআন শোনার যে ঘটনা ঘটেছিল তা সুরা আহকাফের ২৯ থেকে ৩২ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে। ঐ আয়াতগুলো একবার দেখলেই বুঝা যায়, সে সময় যেসব জিন কুরআন শুনে তার প্রতি ঈমান এনেছিল তারা আগে থেকেই হযরত মূসা এবং পূর্ববর্তী আসমানী কিতাবসমূহের প্রতি ঈমান পোষণ করতো।
পক্ষান্তরে এ সূরার ২থেকে ৭ পর্যন্ত আয়াত থেকে স্পষ্ট বুঝা যায় যে, এসময় যে জিনেরা কুরআন শুনেছিল তারা ছিল মুশরিক। তারা আখেরাত ও রিসালাত অস্বীকার করতো। তাছাড়াও এ বিষয়টি ইতিহাস থেকে প্রমাণিত যে তায়েফের সফরে যায়েদ ইবনে হারেসা ছাড়া আর কেউ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে ছিল না।
পক্ষান্তরে এ সূরায় উল্লেখিত সফর সম্পর্কে ইবনে আব্বাস বর্ণনা করেছেন যে, এ সময় কয়েকজন সাহাবী তাঁর সাথে ছিলেন। তা ছাড়াও অনেকগুলো বর্ণনা এ বিষয়ে একমত যে, সূরা আহকাফে বর্ণিত ঘটনায় জিনরা যখন কুরআন শুনেছিল তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তায়েফ থেকে মক্কা ফেরার পথে নাখলায় অবস্থান করেছিলেন।
আর ইবনে আব্বাসের বর্ণনা মতে এ সূরায় বর্ণিত সফরে জিনদের কুরআন শোনার ঘটন তখন ঘটেছিল যখন তিনি মক্কা থেকে উকায যাচ্ছিলেন। এসব কারণে যে বিষয়টি সঠিক বলে জানা যায় তা হলো, সূরা আহকাফ এবং সূরা জিনে একই ঘটনার উল্লেখ করা হয়নি । বরং এ ছিল ভিন্ন ভিন্ন সফরে সংঘটিত ভিন্ন ভিন্ন দুটি ঘটনা।
সুরা আহকাফ এ যে ঘটনার উল্লেখ করা হয়েছে তা যে দশম নববী সনে তায়েফ সফরের সময় সংঘটিত হয়েছিল সে ব্যাপারে রেওয়ায়াতসমূহে ঐক্যমত পোষণ করা হয়েছে। এখন প্রশ্ন হলো, এ দ্বিতীয় ঘটনাটি কখন সংঘটিত হয়েছিল?
ইবনে আব্বাসের বর্ণনায় এর কোন জবার পাওয়া যায় না। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদল সাহাবীকে সাথে নিয়ে কখন উকাযের বাজারে গিয়েছিলেন অন্য আর কোন ঐতিহাসিক বর্ণনা থেকেও তা জানা যায় না।
তবে এ সূরার ৮ থেকে ১০ পর্যন্ত আয়াতগুলো সম্পর্কে গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করলে বুঝা যায় , এই নবূওয়াতের প্র্রাথমিক যুগের ঘটনা হবে। এসব আয়াতে বলা হয়েছে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রিসালাতের পূর্বে জিনরা উর্ধ জগতের খবর জানার জন্য আসমান থেকে কিছু না কিছু শুনে নেয়ার একটা সুযোগ পেয়ে যেতো। কিন্তু এরপর তারা হঠাৎ দেখতে পেলো সবখানে ফেরেশতাদের কড়া পাহারা বসে গেছে এবং উল্কার বৃষ্টি হচ্ছে।
তাই কোথাও তারা এমন একটু জায়গা পাচ্ছে না যেখানে অবস্থান নিয়ে কোন আভাস তারা লাভ করতে পারে। তাই একথা জানার জন্য তারা উদ্বিগ্ন হয়ে উঠলো যে, পৃথিবীতে এমন কি ঘটনা সংঘটিত হয়েছে বা হতে যাচ্ছে যার জন্য এ কঠোর সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে।
সম্ভবত তখন থেকেই জিনদের বিভিন্ন দল বিষয়টির অনুসন্ধান করে বেড়াচ্ছিল এবং তাদেরই একটি দল রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পবিত্র মুখ থেকে কুরআন মজীদের তিলাওয়াত শুনে এ সিদ্ধান্তে পৌছেছিল যে, এটিই সে বস্তু, যার কারণে জিনদের জন্য উর্ধ জগতের সমস্ত দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
জিনদের হাকীকত বা তাৎপর্য
মন-মগজ যাতে কোন প্রকার বিভ্রান্তির শিকার না হয় সে জন্য এ সুরা অধ্যায়নের আগে জিনদের তাৎপর্য সম্পর্কে জেনে নেয়া আবশ্যক। বর্তমান যুগের বহু লোক ও ভ্রান্তিতে নিমজ্জিত আছে যে, জিন বলতে বাস্তবে কিছু নেই।
বরং এটিও প্রাচীন কালের কুসংস্কার ভিত্তিক বাজে একটি ধারণা । তাদের এ ধারণার ভিত্তি কিন্তু এটা নয় যে, তারা গোটা বিশ্ব-জাহানের সবকিছুর তাৎপর্য ও বাস্তবতা জেনে ফেলেছে এবং এও জেনে ফেলেছে যে, জিন বলে কোথাও কিছু নেই। এমন জ্ঞান লাভের দাবী তারা নিজেরাও করতে পারে না।
কিন্তু কোন প্রমাণ ছাড়াই তারা ধরে নিয়েছে যে, গোটা বিশ্ব-জাহানে শুধু তা-ই বাস্তব যা অনুভব করা যায় বা ধরা ছোয়ার মধ্যে আনা যায়। অথচ সমুদ্রের তুলনায় এক বিন্দু পানির যে অবস্থা এ বিরাট বিশাল -বিশ্ব জাহানের বিশালত্বের তুলনায় মানুষের অনুভূতি ও ধরা ছোঁয়ার গণ্ডির অবস্থা তাও নয়। যে ব্যক্তি মনে করে যে, যা অনুভব করা যায় না তার কোন অস্তিত্ব নেই।
আর যার অস্তিত্ব আছে তা অবশ্যই অনুভুত হবে সে আসলে নিজের বুদ্ধি বিবেকের সংকীর্ণতারই প্রমাণ দেয়। এ ধরনের চিন্তাধারার অবলম্বন করলে শুধু এক জিন নয় বরং এমন কোন সত্যকেই মানুষ মেনে নিতে পারবে না যা সরাসরি তার অভিজ্ঞতা ও পর্যবেক্ষণে ধরা পড়ে না এবং অনুভব করা যায় না এমন কোন সত্যকে মেনে নেয়া তা দূরের কথা আল্লাহর অস্তিত্ব পর্যন্তও তাদের কাছে মেনে নেয়ার মত থাকে না।
মুসলমানদের মধ্যে যারা এরূপ ধ্যান-ধারণা দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে কিন্তু কুরআনকেও অস্বীকার করতে পারেনি তারা জিন, ইবলীস এবং শয়তান সম্পর্কে কুরআনের ষ্পষ্ট বক্তব্যকে নানা রকম ব্যাখ্যা -বিশ্লেষণের বিষয়ে পরিণত করেছে।
তারা বলেনঃ জিন বলতে এমন কোন অদৃশ্য মাখলুক বুঝায় না যাদের স্বতন্ত্র কোন অস্তিত্ব আছে। বরং কোথাও এর অর্থ মানুষের পাশবিক শক্তি যাকে শয়তান বলে অভিহিত করা হয়েছে। কোথাও এর দ্বারা ঐ সব লোকদের বুঝানো হয়েছে যারা গোপনে কুরআন শুনতো।
কিন্তু এ ব্যাপারে কুরআন মজীদের বক্তব্য এত স্পষ্ট ও খোলামেলা যে, এ ধরনের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের সামান্যতম অবকাশও তাতে নেই।কুরআন মজীদে এক জায়গায় নয় বহু জায়গায় এমনভাবে জিন ও মানুষের উল্লেখ করা হয়েছে যা থেকে বুঝা যায়, এরা স্বতন্ত্র দুটি মাখলুক।
উদাহরণ স্বরূপ দেখুন সুরা আরাফ আয়াত ৩৮; হূদ,১৯; সুরা হামিম সাজদাহ আয়াত ২৫ ও ২৯; পুরাটাই এ ব্যাপারে এমন অকাট্য প্রমাণ যে, জিনদের এক প্রকার মানুষ মনে করার কোন অবকাশই নেই।
সূরা আল আরাফের ১২ আয়াত, সুরা হিজির এর ২৬ ও ২৭ আয়াত এবং সুরা আর রাহমান এর ১৪ও ১৫ আয়াতে ষ্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, মানুষ সৃষ্টির মৌলিক উপাদান হলো মাটি আর জিন সৃষ্টির মৌলিক উপাদান হলো আগুন।সূরা হিজরের ২৭ আয়াতে পরিষ্কার ভাষায় বলা হয়েছে যে, মানুষ সৃষ্টির পূর্বে জিনদের সৃষ্টি করা হয়েছে।
কুরআন মজীদের সাতটি স্থান আদম ও ইবলীসের কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে। এর সবগুলো স্থানের বর্ণনা থেকে প্রামানিত হয় যে, মানুষের সৃষ্টির সময় ইবলীস বর্তমান ছিল। এ ছাড়াও সূরা কাহফের ৫০ আয়াতে বলা হয়েছে যে, ইবলীস জিনদেরই একজন।
সূরা আ’রাফের ২৭ আয়াতে পরিষ্কার ভাষায় বলা হয়েছে যে, জিনরা মানুষকে দেখতে পায় কিন্তু মানুষ জিনদের দেখতে পায় না।
সূরা হিজরের ১৭ থেকে ১৮, সূরা সাফ্ফাতের ৬ থেকে ১০ এবং সুরা মুলুক এর ৫ আয়াতে বলা হয়েছে, জিনেরা উর্ধ জগতের দিকে উঠতে সক্ষম হলেও একটি নির্দিষ্ট সীমার ওপরে তারা যেতে পারে না। এর উর্ধে যাওয়ার চেষ্টা করলে এবং উর্ধজগতে বিচরণকারী ফেরেশতাদের কাথাবার্তা শুনতে চাইলে তাদের থামিয়ে দেয়া হয়। গোপনে দৃষ্টির অগোচরে শুনতে চাইলে উল্কাপিণ্ড ছুড়ে মেরে তাড়িয়ে দেয়া হয়।
এ কথার মাধ্যমে আরবের মুশরিকদের একটি ধারণার প্রতিবাদ করা হয়েছে। তাদের ধারণা ছিল জিনেরা গায়েবী বিষয়ের খবর জানে অথবা খোদায়ীর গোপন তত্বসমূহ জানার কোন উপায় তাদের জানা আছে।
সূরা সাবার ১৪ আয়াতেও এ ভ্রান্ত ধারণা প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে।সুরা বকারার ৩০ থেকে ৩৪ আয়াত এবং সুরা কাহাফ এর ৫০ আয়াত থেকে জানা যায় যে, আল্লাহ তা’আলা পৃথিবীর খেলাফত দিয়েছেন মানুষকে। এও জানা যায় যে, মানুষ জিনদের চেয়ে উত্তম মাখলুক যদিও জিনদের কিছু অস্বাভাবিক ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। আমরা সূরা নামলের ৭ আয়াতের এর একটি দৃষ্টান্ত দেখতে পাই। কিন্তু মানুষের তুলনায় পশুরাও কিছু অধিক ক্ষমতা লাভ করেছে। কিন্তু এর দ্বারা প্রমাণিত হয় না যে, পশুরা মানুষের চেয়ে অধিক মর্যাদার অধিকারী।
কুরআন একথাও বলে যে, জিনরাও মানুষের মত একটি মাখলুক। তাদেরকেও মানুষের মত স্বাধীনভাবে কাজ করার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। ইবলীসের কাহিনী এবং সূরা আহকাফ ও সূরা জিনে উল্লেখিত কিছু সংখ্যক জিনের ঈমান আনার ঘটনা এর সুষ্পষ্ট প্রমাণ।
কুরআনের বহু জায়গায় এ সত্যটিও বর্ণনা করা হয়েছে যে, আদমকে সৃষ্টি করার মুহূর্তেই ইবলীস এ মর্মে দৃঢ় সংকল্প করেছিল যে, সে মানব জাতিকে গোমরাহ, বিভ্রান্ত ও পথভ্রষ্ট করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে। সেসময় থেকেই জিনদের শয়তানরা মানুষকে গোমরাহীর মধ্যে ঠেলে দেয়ার চেষ্টায় লেগে আছে।
কিন্তু মানুষের ওপর আধিপত্য বিস্তার করে জবরদস্তিমূলকভাবে কোন কাজ করিয়ে নেয়ার সামর্থ তারা রাখে না। বরং তারা তা মনের মধ্যে সন্দেহ -সংশয় সৃষ্টি করে, তাদের বিভ্রান্ত করে এবংঅন্যায় ও গোমরাহীকে তাদের সামনে শোভনীয় করে পেশ করে।
দৃষ্টান্ত স্বরূপ নিম্ন বর্ণিত আয়াতগুলো পাঠ করুন। সূরা নিসা, আয়াত ১১৭ থেকে ১২০; আ’রাফ ,১১ থেকে ১৭ পর্যন্ত; ইবরাহীম ২২; আল হিজর ৩০ থেকে ৪২; আন নাহল, ৯৮ থেকে ১০০ এবং বনী ইসরাঈল, ৬১ থেকে ৬৫ আয়াত পর্যন্ত।
কুরআন শরীফে একথাও বলা হয়েছে যে, আরবের মুশরিকরা জাহেলী যুগে জিনদেরকে আল্লাহর সাথে শরীক করতো, তাদের ইবাদত বা পূজা-অর্চনা করতো এবং তাদেরকে আল্লাহর বংশধর বা সন্তান-সন্তুতি মনে করতো। দেখুন, সূরা আল আন’আম, আয়াত ১০০; সাবা,আয়াত ৪০থেকে ৪১ এবং আস সাফ্ফাত আয়াত ১৫৮।
এসব বিশদ আলোচনা থেকে একথা স্পষ্ট হয়ে থাকে যে, জিনরা একটা স্বতন্ত্র বহিঃসত্তার অধিকারী এবং তারা মানুষের থেকে ভিন্ন প্রজাতির আরেকটি অদৃশ্য সৃষ্টি। তাদের রহস্যজনক গুণাবলী ও বৈশিষ্টের কারণে অজ্ঞ লোকেরা তাদের অস্তিত্ব ও শক্তি-সামর্থ সম্পর্কে কিছু অতিরঞ্জিত ধারণা পোষণ করে আসছিল এমনকি তাদের পূজা করতে শুরু করেছিল।
কিন্তু কুরআন তাদের ব্যাপারে প্রকৃত সত্য একেবারে খোলাসা করে বলে দিয়েছে যা থেকে তারা কি এবং কি নয় তা ভালভাবে জানা যায়।
বিষয়বস্তু ও মূল বক্তব্য
জিনদের একটি দল কুরআন শুনার পর তার কি প্রভাব গ্রহণ করেছিল এবং ফিরে গিয়ে নিজ জাতির অন্যান্য জিনদের কি কি কথা বলেছিল, এ সূরার প্রথম আয়াত থেকে ১৫ আয়াত পর্যন্ত তা-ই বলা হয়ছে। এ প্রসংগে আল্লাহ তা’আলা তাদের সব কথাবার্তা এখানে উল্লেখ করেননি।
বরং উল্লেখযোগ্য বিশেষ বিশেষ কথাগুলোই উল্লেখ করেছেন। তাই বর্ণনাভঙ্গী ধারাবাহিক কথাবার্তা বলার মত নয়। বরং তাদের বিভিন্ন উক্তি এমনভাবে তুলে ধরা হয়েছে যে, যারা এরূপ কথা বলেছে।
জিনদের মুখ থেকে উচ্চারিত এসব উক্তি যদি মানুষ গভীর মনোযোগ সহকারে পড়ে তাহলে সহজেই একথা বুঝা যাবে যে, তাদের ঈমান আনার এ ঘটনা এবং নিজ জাতির সাথে কথোপকথন কুরআন মজীদে বিশেষ কোন উদ্দেশ্যেই উল্লেখ করা হয়েছে।
আয়াতের ব্যাখ্যায় আমি যে টীকা লিখেছি তাতে তাদের উক্তিসমূহের যে ব্যাখ্যা পেশ করেছি এ উদ্দেশ্য বুঝাতে তা আরো অধিক সাহায্য করবে।
তারপর ১৬ থেকে ১৮ পর্যন্ত আয়াতে লোকদের বুঝানো হয়েছে যে, তারা যদি শিরক পরিত্যাগ করে এবং সঠিক পথে চলার ক্ষেত্রে অবিচল থাকে তাহলে তাদের প্রতি অজস্র নিয়ামত বর্ষিত হবে।
অন্যথায় আল্লাহর পাঠানো এ উপদেশবাণী থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়ার পরিণামে তারা কঠিন আযাবের মধ্যে নিপতিত হবে। অতপর ১৯ থেকে ২৩ পর্যন্ত আয়াতে মক্কার কাফেরদের তিরষ্কার করা হয়েছে।
কারণ আল্লাহর রসূল যখন আল্লাহর দিকে উচ্চকণ্ঠে আহবান জানান তখন তারা তার ওপরে হামলা করতে উদ্যত হয়। অথচ আল্লাহর বাণী পৌছিয়ে দেয়াই রসূলের দায়িত্ব। তিনি তো এ দাবী করেছেন না যে, মানুষের ভালমন্দ এবং কল্যাণ ও অকল্যাণ তারই ইখতিয়ারে।
এরপর ২৪ থেকে ২৫ আয়াতে কাফেরদের এ মর্মে হুঁশিয়ার করে দেয়া হয়েছে যে, আজ তারা রসূলের বন্ধুহীন ও অসহায় দেখে অবদমিত করে রাখার চেষ্টা করছে। কিন্তু এমন এক সময় আসবে যখন তারা জানতে পারবে , প্রকৃতপক্ষে বন্ধুহীন ও অসহায় কারা?
সে সময়টি দূরে না নিকটে রসূল তা জানেন না। কিন্তু সেটি অবশ্যই আসবে। সব শেষে লোকদের জানিয়ে দেয়া হয়েছে ,’আলেমুল গায়েব’ বা গায়েবী বিষয়ের জ্ঞান একমাত্র আল্লাহরই আছে। রসূল শুধু ততটুকুই জানতে পারনে যতটুকু আল্লাহ তাঁকে জানান।
এ জ্ঞানও হয় রিসালাতের দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন সম্পর্কিত বিষয়ে। এমন সুরক্ষিত পন্থায় রসূলকে এ জ্ঞান দেয়া হয় যার মধ্যে বাইরে থেকে হস্তক্ষেপের আদৌ কোন সম্ভবনা থাকে না।
Leave a Reply