বুধবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৩, ০৩:১৫

সূরা আত মুত্বাফ্‌ফিফীন‌ (আরাবী ভাষায় : المطفّفين)

সূরা আত মুত্বাফ্‌ফিফীন‌ (আরাবী ভাষায় : المطفّفين)

ইমাম মাওলানা নুরুর রহমান / ২৮৭
প্রকাশ কাল: শুক্রবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

আজ শুক্রবার। পবিত্র জুমাবার। আজকের বিষয় ‘সূরা আত মুত্বাফ্‌ফিফীন‌ (আরাবী ভাষায় : المطفّفين)’ শীর্ষবিন্দু পাঠকদের জন্য এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেনইসলাম বিভাগ প্রধান ইমাম মাওলানা নুরুর রহমান।

সূরা আত মুত্বাফ্‌ফিফীন‌ (আরাবী ভাষায় : المطفّفين‎) মুসলমানদের ধর্মীয় গ্রন্থ আল-কোরআনের ৮৩ তম সুরা, এর আয়াত অর্থাৎ বাক্য সংখ্যা ৩৬; তবে এতে কোন রুকু তথা অনুচ্ছেদ নেই। সূরা আত মুত্বাফ্‌ফিফীন‌ মককায় অবতীর্ণ হয়েছে।

নামকরণ
এই সূরাটির প্রথম আয়াতের وَيُلٌ لِّلْمُطَفِّفِيْنَ বাক্যাংশ থেকে এই সূরার নামটি গৃহীত হয়েছে; অর্থাৎ, যে সূরাটিতে المطفّفين (‘আত মুত্বাফ্‌ফিফীন’) শব্দটি রয়েছে এটি সেই সূরা।

নাযিলের সময়–কাল
এই সূরার বর্ণনাভংগী ও বিষয়বস্তু থেকে পরিস্কার জানা যায় , এটি মক্কা মু’আযযমায় প্রথম দিকে নাযিল হয়। সে সময় আখেরাত বিশ্বাসকে মক্কাবাসীদের মনে পাকা-পোক্তভাবে বসিয়ে দেবার জন্য একের পর এক সূরা নাযিল হচ্ছিল।

সূরাটি ঠিক তখনই নাযিল হয় যখন মক্কার লোকেরা পথে-ঘাটে-বাজারে-মজলিসে-মহফিলে মুসলমানদেরকে টিটকারী দিচ্ছিল এবং তাদেরকে অপমানিত ও লাঞ্ছিত করছিল। তবে জুলুম , নিপীড়ন ও মারপিট করার যুগ তখনো শুরু হয়নি। কোন কোন মুফাসসির এই সূরাকে মদীনায় অবতীর্ণ বলেছেন।

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) এর নিম্নোক্ত বর্ণনাটিই মূলত এ ভুল ধারণার পেছনে কাজ করছে। তিনি বর্ণনা করেছেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মদীনায় এলেন তখন এখানকার লোকদের মধ্যে ওজনে ও মাপে কম দেবার রোগ ভীষণভাবে বিস্তার লাভ করেছিল।

তখন আল্লাহ নাযিল করেন ( আরবী ——-) সূরাটি। এরপর থেকে লোকেরা ভালোভাবে ওজন ও পরিমাপ করতে থাকে। (নাসাঈ, ইবনে মাজাহ, ইবনে মারদুইয়া, ইবনে জারীর, বাইহাকী ফী শু’আবিল ঈমান) কিন্তু যেমন ইতিপূর্বে সূরা দাহারের ভূমিকায় আমি বলে এসেছি, সাহাবা ও তাবেঈগণ সাধারণত কোন একটি আয়াত যে ব্যাপারটির সাথে খাপ খেতো সে সম্পর্কে বলতেন, এ আয়াতটি এ ব্যাপারে নাযিল হয়েছে।

কাজেই ইবনে আব্বাস ( রা)- এর রেওয়ায়াত থেকে যা কিছু প্রমাণ হয় তা কেবল এতটুকু যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হিজরতের পরে যখন মদীনার লোকদের মধ্যে এ বদঅভ্যাসটির ব্যাপারে প্রসার দেখেন তখন আল্লাহর হুকুমে তাদের এ সূরাটি শুনান এবং এর ফলে তারা সংশোধিত হয়ে যায়।

বিষয়বস্তু ও মূল বক্তব্য
এর বিষয়বস্তুও আখেরাত। ব্যবসায়ীদের মধ্যে যে সাধারণ বেঈমানীটির ব্যাপক প্রসার ঘটেছিল প্রথম ছ’টি আয়াতে সে জন্য তাদের পাকড়াও করা হয়েছে। তারা অন্যের থেকে নেবার সময় ওজন ও মাপ পুরো করে নিতো । কিন্তু যখন অন্যদেরকে দেবার সময় আসতো তখন ওজন ও মাপে প্রত্যেককে কিছু না কিছু কম দিতো।

সমাজের আরো অসংখ্য অসৎকাজের মধ্যে এটি এমন একটি অসৎকাজ ছিল যার অসৎ হবার ব্যাপারটি কেউ অস্বীকার করতে পারতো না। এ ধরনের একটি অসৎকাজকে এখানে দৃষ্টান্ত স্বরূপ পেশ করে বলা হয়েছে। এটি আখেরাত থেকে গাফেল হয়ে থাকার অপরিহার্য ফল।

যতদিন লোকদের মনে এ অনুভুতি জাগবে না যে, একদিন তাদের আল্লাহর সামনে পেশ হতে হবে এবং সেখানে এক এক পাইয়ের হিসেব দিতে হবে ততদিন তাদের নিজেদের কাজকারবার ও লেনদেনের ক্ষেত্রে পূর্ণ সততা অবলম্বন সম্ভবই নয়। সততা ও বিশ্বস্ততাকে “উত্তম নীতি” মনে করে কোন ব্যক্তি কিছু ছোট ছোট বিষয়ে সততার নীতি অবলম্বন করলেও করতে পারে কিন্তু যেখানে বেঈমানী একটি “লাভজনক নীতি” প্রমাণিত হয় সেখানে সে কখনই সততার পথে চলতে পারে না।

মানুষের মধ্যে একমাত্র আল্লাহর ভয়ে ও আখেরাতের প্রতি বিশ্বাসের ফলেই সত্যিকার ও স্থায়ী সত্যতা বিশ্বস্ততা সৃষ্টি হতে পারে। কারণ এ অবস্থায় সততা একটি “নীতি ” নয় , একটি “দায়িত্ব” গণ্য হয়ে এবং দুনিয়ায় সততার নীতি লাভজনক হোক বা অলাভজনক তার ওপর মানুষের সততার পথ অবলম্বন করা বা না করা নির্ভর করে না।

এভাবে নৈতিকতার সাথে আখেরাত বিশ্বাসের সম্পর্ককে অত্যন্ত প্রভাবশালী ও মনোমুগ্ধকর পদ্ধতিতে বর্ণনা করার পর ৭ থেকে ১৭ পর্যন্ত আয়াতে বলা হয়েছে, দুষ্কৃতকারীদের কাজের বিবরণী প্রথমেই অপরাধজীবীদের রেজিষ্টার (Black list) লেখা হচ্ছে এবং আখেরাতে তাদের মারত্মক ধ্বংসের সম্মুখীন হতে হবে।

তারপর ১৮ থেকে ২৮ পর্যন্ত আয়াতে সৎলোকদের উত্তম পরিণামের কথা বর্ণনা করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে , তাদের আমলনামা উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন লোকদের রেজিষ্টারে সন্নিবেশিত করা হচ্ছে। আল্লাহর নৈকট্যলাভকারী ফেরেশতারা এ কাজে নিযুক্ত রয়েছেন।




Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  
All rights reserved © shirshobindu.com 2023