আরিফা রহমান রুমা। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সেলর (পাবলিক ডিপ্লোম্যাসি)। বছর দুয়েক আগে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিচালক রুমাকে উক্ত পদে বদলি করা হয়।
যিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে ছাত্রলীগ এবং পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত হোন। রুমা গোপালগঞ্জ-১ আসন থেকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লড়তে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র কিনেছিলেন। তার পিতা গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি মুন্সি আতিয়ার রহমান বছরখানেক আগে জেলা পরিষদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।
তবে বাংলাদেশি এই কূটনীতিকের নতুন করে আলোচনায় আসার কারণ অবশ্য ভিন্ন। নির্বাচনকে সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও রাজনীতিকদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা কার্যকরে যুক্তরাষ্ট্রের সামপ্রতিক ঘোষণার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রুমার একটি পোস্ট ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।
বাংলাদেশ সময় ২৪শে সেপ্টেম্বর রাত ১১টা ২২ মিনিটে তিনি নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক আইডিতে লিখেন, একজন ঘুষখোর দুর্নীতিবাজের অভিযোগ আমলে নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সংঘটিত অন্যায্য আচরণ পুনর্বিবেচনা করা উচিত।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে ঢাকাস্থ দূতাবাস যেখানে বারবার পরিষ্কার করে বলছে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করা বা এ ধরনের বিষয়ে জড়িত থাকা ব্যক্তি এবং ক্ষেত্রবিশেষে তাদের পরিবারের সদস্যদের জন্যই ভিসা বিধিনিষেধ, সেখানে এই বিধিনিষেধ কীভাবে গোটা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে হলো- এ প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই। তাছাড়া এ ধরনের অপরাধীদের তিরস্কার করা কীভাবে ‘অন্যায্য আচরণ’ হয় সে প্রশ্ন করতেও ভুলছেন না তারা।
এক্সে (আগের টুইটার) রুমা ইংরেজিতে যা লিখেছেন সেটি বাংলা করলে দাঁড়ায়
বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অযৌক্তিক নিষেধাজ্ঞা সক্রিয় পুনর্বিবেচনার দাবি রাখে। কারণ এমন একজন ব্যক্তি কর্তৃক এটা জারি করা হয়েছিল যিনি এখন ঘুষ ও দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত। লক্ষণীয় যে, এখানেও তিনি ‘বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অযৌক্তিক নিষেধাজ্ঞা’ দেয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন।
অথচ, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র কেন, বিশ্বের অন্য কোনো দেশ নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বলে কারোই জানা নেই!
আরেকটি বিষয় বিশেষভাবে লক্ষণীয় যে, রুমা ফেসবুকে ‘একজন ঘুষখোর দুর্নীতিবাজের অভিযোগ আমলে নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সংঘটিত অন্যায্য আচরণ পুনর্বিবেচনা করা উচিত’- এমন দাবি করলেও এক্সে তিনি লিখেছেন, …এমন একজন ব্যক্তি কর্তৃক এটা জারি করা হয়েছিল যিনি এখন ঘুষ ও দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত।
অবশ্য পরে তিনি বাংলাদেশ সময় ২৪শে সেপ্টেম্বর রাত ১১টা ৫৩ মিনিটে ফেসবুক স্ট্যাটাস আপডেট (পরিবর্তন) করেও লিখেছেন, একজন ঘুষখোর এবং দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তির অভিযোগ আমলে নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সংঘটিত অন্যায্য আচরণ পুনর্বিবেচনা করা উচিত’।
রুমার স্ট্যাটাস পরিবর্তনের কারণ?
ধারণা করা হচ্ছে একজন ঘুষখোর দুর্নীতিবাজ বলতে রুমা মূলত যুক্তরাষ্ট্রের বর্ষীয়ান রাজনীতিক, নিউ জার্সি অঙ্গরাজ্যের ডেমোক্রেট দলীয় সিনেটর বব মেনেনডেজকেই বুঝিয়েছেন। রুমার পোস্টে বব মেনেনডেজকে নিয়ে তার ফেসবুক বন্ধুদের মন্তব্য এবং রুমার নীরবতা সে ইঙ্গিতই বহন করে।
কিন্তু, সমস্যা বাঁধে রুমা কর্তৃক সিনেটরকে ঘুষখোর দুর্নীতিবাজ সার্টিফিকেট দেয়া নিয়ে। কারণ, মেনেনডেজের বিরুদ্ধে ঘুষ-দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠার পর তিনি মার্কিন কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটের বৈদেশিক সম্পর্কবিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান থেকে পদত্যাগ করলেও উক্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
তার বিরুদ্ধে মামলার এখনো নিষ্পত্তি না হলেও রুমা তাকে ঘুষখোর দুর্নীতিবাজ আখ্যা দিয়ে বসেন। যাই হোক, পরবর্তীতে রুমা স্ট্যাটাস পরিবর্তন করে ‘ঘুষখোর দুর্নীতিবাজ’-এর স্থলে ‘ঘুষখোর এবং দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত’ লিখেন।
বব মেনেনডেজকে আক্রমণের কারণ
কিন্তু স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে, রুমা বব মেনেনডেজকে কেন আক্রমণ করছেন? কারণ অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০২০ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম আর নির্যাতনের অভিযোগে র্যাবের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিতে তৎকালীন ট্রাম্প প্রশাসনকে মার্কিন সিনেটের বৈদেশিক সম্পর্কবিষয়ক কমিটির যে ১০ সদস্য চিঠি দিয়েছিলেন ডেমোক্রেটিক পার্টির সিনেটর বব মেনেনডেজ ছিলেন তাদের অন্যতম। এর মাত্র বছরখানেক পর (বাইডেন প্রশাসন ক্ষমতায়) র?্যাব এবং এর সাতজন কর্মকর্তার উপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এসেছিল।
বব মেনেনডেজ ছাড়াও ডেমোক্রেটিক পার্টির সিনেটর বেন কার্ডিন, জিন শাহিন, ক্রিস মার্ফি, ক্রিস কোনস, জেফ মার্কলে, করি বুকার এবং রিপাবলিকান পার্টির সিনেটর টড ইয়াং, করি গার্ডনার, মার্কো রুবিও ওই চিঠিতে সই করলেও রুমা কেন শুধু একজনকেই (মেনেনডেজ) আক্রমণ করেছেন তার কারণ বোঝা যায় নি।
নেটিজেনদের অনেকেই প্রশ্ন রাখছেন, মেনেনডেজ ‘ঘুষ-দুর্নীতিতে জড়িত’ এমনটা যদি ভবিষ্যতে প্রমাণিত হয়-ও, তাহলে বাকি ৯ জন সিনেটরের বিষয়ে কি বলবেন রুমা? তাছাড়া, র?্যাবের উপর নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি একটি গণতন্ত্র সম্মেলনেও বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ না জানানো, ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ- এসব কিছুর জন্যও কি দায়ী একজন সিনেটর বব মেনেনডেজ?
Leave a Reply