জিহাদি সমতা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত একজন ব্রিটিশ নাগরিক সমতা উল্লাহর প্যারোল মুক্তির আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। সাবেক এ বিমা কর্মকর্তা সারা বিশ্বে আইএস যোদ্ধাদের সাহায্য করতে চেয়েছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
ইউএসবি কাফলিঙ্কে করে সামরিক তথ্য সংরক্ষণ ও আইএসকে সহায়তা করতে চেয়েছিলেন এমন অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়ে সমতা ব্রিটেনের কারাগারে বন্দি আছেন। ব্রিটেনের পুলিশ ২০১৭ সালে তার দোষী সাব্যস্ত হওয়ার সময় এ ঘটানাকে তাদের দেখা সবচেয়ে বড় জঙ্গি পরিকল্পনার ষড়যন্ত্র হিসাবে বর্ণনা করেছে।
৩৪ বছর বয়সী সমতা উল্লাহ, কার্ডিফে তার বেডরুম থেকে সন্ত্রাসীদের জন্য একটি ‘ওয়ান স্টপ শপ’ তৈরি করেন। কীভাবে পুলিশ এবং নিরাপত্তা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দেওয়া যায় সে সম্পর্কে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা প্রদান করতেন তিনি।
লন্ডনের ওল্ড বেইলিতে বিচারে বলা হয়েছিল যে কেনিয়ায় একজন অ্যানথ্রাক্স আক্রমণের পরিকল্পনাকারী অভিযুক্তকে গ্রেফতার করার পর সেই সূত্র ধরে সমতা উল্লাহকে আটক করা যায়।
এফবিআই কর্তৃক গোয়েন্দা তথ্য পাওয়ার পর ব্রিটিশ কাউন্টার-টেররিজম পুলিশ তাকে ট্র্যাক করে। আর এজন্য কেনিয়ার কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে তথ্য দেওয়া হয়েছিল।
২০১৬ সালের অক্টোবরে সমতা উল্লাহর বাড়িতে অভিযান চালানো হয় এবং তাকে ৩০টি ধাতব কাফলিঙ্কসহ পাওয়া যায় যা চরমপন্থি সামগ্রী সংরক্ষণ করতে ব্যবহৃত হয়। আইএসকে সহায়তা দিতে ইউএসবি কাফলিঙ্কগুলোতে সামরিক তথ্য সংরক্ষণ করার অভিযোগ আনে পুলিশ
বিচারক জেরাল্ড গর্ডন সমতা উল্লাহকে আট বছরের কারাদণ্ড দেন। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে, ফিশমঙ্গার্স হল এবং স্ট্রেথাম সন্ত্রাসী হামলার পর জরুরি আইন প্রবর্তন করা হয়েছিল যা সন্ত্রাসীদের জন্য স্বয়ংক্রিয় ও প্রাথমিকভাবে মুক্তির সমাপ্তি ঘটায়।
এটি তাদের প্যারোল বোর্ডের দ্বারা মুক্তির জন্য বিবেচনা করার আগে তাদের মেয়াদের ন্যূনতম দুই-তৃতীয়াংশ কারাগারে কাটাতে বাধ্য করে। এখন ৪০ বছর বয়সী সমতা উল্লাহকে গত বছর তার প্রথম প্যারোল শুনানির জন্য আইনত যোগ্য বিবেচিত হন। কিন্তু, ২০০২ সালের সেপ্টেম্বরে বলা হয়, মুক্তি পাওয়ার জন্য তার আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে।
প্যারোল বোর্ডের সিদ্ধান্তগুলো কেবল একজন বন্দী মুক্তির পরে জনসাধারণের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য ঝুঁকির সৃষ্টি করবে কিনা তার উপর নির্ভর করে। প্যারোল বোর্ডের একজন মুখপাত্র গণমাধ্যমকে বলেছেন, আমরা নিশ্চিত করতে পারি যে প্যারোল বোর্ডের একটি প্যানেল মৌখিক শুনানির পর সমতা উল্লাহর মুক্তি প্রত্যাখ্যান করেছে।
বিচারিক আদালতের উদ্ধৃতি দিয়ে শনিবার (৭ অক্টোবর) ব্রিটেনের ডেইলি মেইল, ইভিনিং স্ট্যান্ডার্ড ও ডেইলি রেকর্ডের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সমতা উল্লাহ সাইবার খিলাফত আর্মি’ বলে একটি গ্রুপের সদস্য হয়েছিলেন।
ইউএসবি কাফলিঙ্ক, যেটি সমতা উল্লাহ একটি চীনা ওয়েবসাইট থেকে কিনেছিলেন, যার একটি পিডিএফ সংস্করণ ছিল। বইটির নাম ‘গাইডেড মিসাইল ফান্ডামেন্টালস’ এবং আরেকটি অ্যাডভান্সেস ইন মিসাইল গাইডেন্স, কন্ট্রোল এবং এস্টিমেশন।
ব্রিটিশ সরকারের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, বিশ্বজুড়ে ইন্টারনেট সরবরাহকারীদের সহায়তায় উল্লাহর বেশিরভাগ লেখা নেট থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। টুইটার অ্যাকাউন্টও মুছে ফেলা হয়েছে, তিনি বলেছিলেন।
উল্লেখ্য, ওয়েলসে বাংলাদেশি একটি পরিবারে জন্মগ্রহণ করে সমতা উল্লাহ। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে কার্ডিফে তাকে গ্রেফতার করার সময় ১০০ কর্মকর্তা মোতায়েন করা হয়েছিল। সে সময় সমতা উল্লাহ স্ত্রীর সাথে তালাক নিয়ে একাই বসবাস করছিলেন।
সমতা উল্লাহ একটি ওয়েবসাইটেও কাজ করেছিলেন যা মূলত ইংরেজিতে ছিল এবং ‘ইসলামিক স্টেট, ফতোয়া (ধর্মীয় বিধিবিধান) এবং নিবন্ধগুলো সম্পর্কে সবকিছুই প্রকাশ করেছিল।
Leave a Reply