সিলেটের বহুল আলোচিত রায়হান হত্যা মামলা আপস করতে বাদী পক্ষকে ৫০ লাখ টাকার লোভ আসামীদের পক্ষ থেকে দেখানো হয় হয় বলে জানা যায়।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০২০ সালের ১০ অক্টোবর মধ্যরাতে সিলেট মহানগর পুলিশের বন্দরবাজার ফাঁড়িতে তুলে নিয়ে রায়হান আহমদকে নির্মম নির্যাতন করা হয়। ১১ অক্টোবর তার মৃত্যু হয়।
এ ঘটনায় ওইদিন রাতেই পুলিশি হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে মামলা করেন রায়হানের স্ত্রী। পরে মহানগর পুলিশের একটি অনুসন্ধান কমিটি তদন্ত করে। তারা ফাঁড়িতে নিয়ে রায়হানকে নির্যাতনের সত্যতা পায়।
এ ঘটনায় ফাঁড়ির ইনচার্জের দায়িত্বে থাকা এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়াসহ চারজনকে ১২ অক্টোবর সাময়িক বরখাস্ত ও তিনজনকে প্রত্যাহার করা হয়। এরপর পুলিশি হেফাজত থেকে কনস্টেবল হারুনসহ তিনজনকে গ্রেফতার করে মামলার তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
এসআই আকবরকে ৯ নভেম্বর সিলেটের কানাইঘাটে ভারতীয় সীমান্ত থেকে গ্রেফতার করা হয়। ২০২১ সালের ৫ মে আলোচিত এ মামলার অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেয় পিবিআই। অভিযোগপত্রে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ওই সময়ে ইনচার্জের দায়িত্বে থাকা এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়াকে (৩২) প্রধান অভিযুক্ত করা হয়।
অন্যরা হলেন সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আশেক এলাহী (৪৩), কনস্টেবল হারুন অর রশিদ (৩২), টিটু চন্দ্র দাস (৩৮), ঘটনার সময় ফাঁড়ির টু-আইসি সাময়িক বরখাস্তকৃত এসআই হাসান উদ্দিন (৩২) ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সংবাদকর্মী আবদুল্লাহ আল নোমান (৩২)।
এদের মধ্যে হাসান ও নোমানের বিরুদ্ধে মামলার আলামত নষ্ট করার অভিযোগ আনা হয়েছে। গত বছরের ১৮ এপ্রিল অভিযোগ গঠনের মধ্যদিয়ে মামলার বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়।
এছাড়া পরবর্তী সময়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করা পিবিআই পরিদর্শক আওলাদ হোসেন, মুহিদুল ইসলাম, সিলেট কোতোয়ালি থানার সাবেক এসআই আবদুল বাতেন এবং সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকের সাক্ষ্য দেওয়ার কথা রয়েছে।
মামলায় অভিযুক্ত এক পুলিশ সদস্য উচ্চ আদালতের নির্দেশে জামিনে রয়েছেন। তবে মামলায় একমাত্র অভিযুক্ত আসামি সংবাদকর্মী আবদুল্লাহ আল নোমান বিদেশে পালিয়ে গেছেন। বাকি চার আসামি কারাগারে রয়েছেন।
আবদুল্লাহ আল নোমানের বিষয়ে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ ও মালামাল ক্রোকের আদেশ তামিল করেছে পুলিশ। এদিকে মামলার প্রধান অভিযুক্ত সিলেটের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির তৎকালীন এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়া তার আইনজীবীর মাধ্যমে গত ১০ সেপ্টেম্বর ব্যক্তিগত অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে আদালতে হাজিরা থেকে অব্যাহতির আবেদন করেছেন।
রায়হান হত্যা মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার এম এ ফজল চৌধুরী বলেন, মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণ শেষের দিকে রয়েছে। সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে যুক্তিতর্ক ও আসামি পরীক্ষা শেষ করে রায় ঘোষণা করা হবে। আশা করছি, বিচারপ্রক্রিয়া শেষে অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি হবে।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, মামলার ৬৯ জন সাক্ষীর মধ্যে রায়হানের মা সালমা বেগম ও স্ত্রী তাহমিনা আক্তার সাক্ষ্য দিয়েছেন। গত ৭ সেপ্টেম্বর মামলায় সবশেষ সাক্ষ্য দিয়েছেন সিলেট মেট্রোপলিটন চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৩ এর বিচারক শারমিন খানম।
১২ অক্টোবর সাক্ষ্য দেওয়ার কথা রয়েছে সিলেট মেট্রোপলিটন চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দ্বিতীয় আদালতের বিচারক সাইফুর রহমানের।
Leave a Reply