টানা শৈত্যপ্রবাহ ও কুয়াশায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে পঞ্চগড়। একদিন পর ফের তাপমাত্রার পারদ নামল ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এ তাপমাত্রায় জেলায় বইছে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ।
রোববার তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যাবেক্ষণাগারে সকাল ৯টায় পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এর আগে ভোর ৬টায় তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাব বলছে, জেলায় তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। তাপমাত্রা ৪ দশমিক ০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৬ দশমিক ০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়।
শুক্রবার তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল ৫ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাপমাত্রা রেকর্ডের তথ্যটি নিশ্চিত করেন তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যাবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল শাহ। তিনি বলেন, সকালে সূর্যের মুখ দেখা গেলেও কুয়াশা কেটে যাওয়ায় শীতের তীব্রতা বেড়েছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি শীত পড়ে ২০১৮ সালে। ওই বছরের ৮ জানুয়ারি পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় তাপমাত্রা নেমেছিল ২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বনিম্ন তাপমাত্রার রেকর্ড।
এদিকে তীব্র শীতে জরুরি কাজ ছাড়া এসব এলাকার লোকজন বের হচ্ছে না। শিশু ও বৃদ্ধরা ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। শীতের কারণে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে নিউমোনিয়া, অ্যাজমা, হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট ও ডায়রিয়াসহ শীতজনিত বিভিন্ন রোগ।
এসব রোগে আক্রান্ত হয়ে জেলা ও উপজেলার হাসপাতালগুলোর আউটডোরে চিকিৎসা নিচ্ছেন লোকজন। কামাই-রোজগার কমে যাওয়ায় অনেকে শীতজনিত রোগে টাকার অভাবে ওষুধপত্র কিনতে পারছেন না।
তীব্র শীতে নাকাল জনজীবনের পাশাপাশি ফসলের ক্ষতি নিয়েও কিন্তু উদ্বিগ্ন কৃষকরা। নিম্ন তাপমাত্রা ও কুয়াশাযুক্ত আবহাওয়ার কারণে বোরো ধান, আলু, ডাল ও শীতকালীন বেশ কিছু ফসল বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
সদর উপজেলার ধাক্কামারা ইউনিয়নের নোহলিয়াপাড়া, মালাদাম এলাকার বোরো চাষি আব্দুর রাজ্জাক, আমিনার রহমান, বরকত আলি জানান, চলতি মৌসুমে বোরো আবাদের জন্য জমি প্রস্তুত করেছেন তারা, কিন্তু বীজতলার অভাবে চারা রোপণ করতে পারছেন না। তীব্র শীত এবং ঘন কুয়াশার কারণে বীজতলা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, গাছ হলুদ হয়ে মরে যাচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, ঘনকুয়াশা ও তীব্র শীতের কারণে বোরোর বীজতলা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এক্ষেত্রে পলিথিন দিয়ে বীজতলা ঢেকে রাখার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বলে জানান পঞ্চগড় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক বাসুদেব রায়।
সিভিল সার্জন ডা. মোস্তফা জামান চৌধুরী জানান, শীতে হাসপাতালে শীতজনিত রোগ নিয়ে প্রচুর রোগী আসছেন। বিশেষ করে সর্দি-কাশি, শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হচ্ছে অনেক শিশু। শীত বাড়লে এসব রোগ আরও বাড়বে। শিশুদের গরম কাপড় পরিয়ে রাখতে হবে। পচাবাসী খাবার পরিহার করতে হবে।
সাধারণ সর্দি-কাশিতে যত্ন না হলে জটিলতা বাড়তে পারে। শীতে শিশুদের সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্টের প্রকোপ বাড়ে। একই সঙ্গে চর্মরোগ ও ডায়রিয়ার মতো রোগও বাড়ছে। শিশুদের ঠান্ডা থেকে দূরে রাখতে হবে।
ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিহিস্টামিন ও অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ানো যাবে না। শ্বাসকষ্ট হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা করতে হবে। এছাড়া পচাবাসী খাবার পরিহার, শিশুদের গরম কাপড় পরিয়ে রাখতে হবে।
জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, শীতপ্রবণ জেলা হিসেবে প্রতি বছর পঞ্চগড়ে সরকারি-বেসরকারিভাবে পর্যাপ্ত কম্বল বিতরণ করা হয়। এবারো প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল এবং ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয় থেকে এ পর্যন্ত কয়েক দফায় পাওয়া প্রায় ৩৬ হাজার শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে।
শীতবস্ত্রের চাহিদা জানিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে জরুরি চিঠি পাঠানো হয়েছে। আশা করছি শিগগিরই শীতবস্ত্র পাওয়া যাবে। তাছাড়া সরকারি-বেসরকারি ও ব্যক্তি উদ্যোগে শীতবস্ত্র বিতরণ অব্যাহত রয়েছে।
Leave a Reply