শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০২:৪৯

তীব্র গরমে এসি বিক্রি বেড়েছে তিনগুণ

তীব্র গরমে এসি বিক্রি বেড়েছে তিনগুণ

শীর্ষবিন্দু নিউজ, ঢাকা / ৯৯
প্রকাশ কাল: রবিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৪

গরমের তীব্রতায় বিপর্যস্ত হয়ে ওঠে জনজীবন। চলতি মাস এপ্রিলের শুরু থেকেই সারা দেশে বাড়ছিল গরম। মাসের মাঝামাঝিতে এসে তা রুপ নেয় তীব্র তাপপ্রবাহে।

এমন অসহনীয় তাপমাত্রায় স্বস্তি পেতে রাজধানীর সচ্ছল মানুষেরা ছুটছেন শীতাতপ নিয়ন্ত্রক (এসি) যন্ত্র কিনতে। গরমের অসহ্য যন্ত্রণা থেকে বাঁচতে অনেকে কিস্তিতেও এসি কিনছেন।

খুচরা পর্যায়ে ও বিভিন্ন ব্রান্ডের শো-রুমের কর্মকর্তারা জানান, প্রচণ্ড গরমের কারণে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় এখন এসি বিক্রি তিনগুণ পর্যন্ত বেড়েছে। অনেক ব্রাঞ্চে এসি স্টক আউট। বেশিরভাগ এসি কেনা হচ্ছে বাসাবাড়ির জন্য।

রাজধানীর গুলিস্তান, নিউমার্কেট, বায়তুল মোকাররম মসজিদ মার্কেটে ইলেকট্রনিক পণ্যের পাইকারি দোকান; নবাবপুর রোডের পাইকারি ইলেকট্রনিক্স দোকান; পুরান ঢাকার লক্ষীবাজারের বিভিন্ন ব্র্যান্ডের শোরুমগুলোয় ঘুরে দেখা যায়, প্রায় সব দোকানেই ক্রেতাদের ভিড় চোখে পড়ার মতো।

তারা এসি, সিলিং ফ্যান, স্ট্যান্ড ফ্যান, চার্জার ফ্যান ও এয়ারকুলার কিনছেন। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের শো-রুমে এসি ক্রেতার সংখ্যা বেশি। গরমের তীব্রতা থেকে রক্ষা পেতে লক্ষীবাজারের ওয়ালটন শোরুমে এসি কিনতে আসেন তাইমুর রহমান।

তিনি বলেন, আল্লাহ আমাকে চলার মতো অবস্থা দিয়েছেন। আমি এসি কিনতে এসেছি বলে এমন না যে আমি অনেক বড়লোক। তিন রুমের ভাড়া বাসায় আমরা সাত জন থাকি। এতো বেশি গরম পড়ছে যে গরমে বাচ্চাগুলোর অবস্থা খুব খারাপ। ফ্যানের হাওয়া গায়ের ওপর দিয়ে চলে যায়। তাই সিদ্ধান্ত নিলাম কিস্তিতে হলেও একটা এসি কিনবো। এখানে আসলাম এক টনের একটা এসি কিনতে।

কিন্তু এক টনের এসি স্টক আউট। তাই দেড় টনের একটা কেনার সিদ্ধান্ত নিলাম। দামের বিষয়ে এই ক্রেতা বলেন, এসির দাম বেড়েছে নাকি কমেছে সেটা আমি জানি না। কারণ আগে তো কেনার অভিজ্ঞতা নেই। যেহেতু কিস্তিতে এসি কিনছি, তাই দাম যাই আসে তাই দিতে হবে।

র‌্যাংগস ই-মার্ট থেকে এসি কিনতে আসা হামিদ মুন্সী বলেন, এক টন এসির একেক জায়গায় একেক দাম। কোম্পানিভেদে ও ক্ষেত্র বিশেষে এক টন এসির ক্ষেত্রে ৮-১০ হাজার টাকা ব্যবধান। সুযোগ-সুবিধাও ভিন্ন ভিন্ন।

তবে সুযোগ-সুবিধার কথা চিন্তা না করে ভালো মানের এসি কিনতে এসেছি। বিষয়টা হচ্ছে দাম যেটার বেশি মানুষ এটাকে একটু বেশি ভালো মনে করে। তাই বলে বেশি দামে এসি বিক্রি করলেই কিন্তু এসির মান ভালো হয়ে যায় না। গরমে এসির চাহিদা বাড়ায় স্টক আউট হয়ে গিয়েছে।

তাই অনেকে ম্যানেজ করে দিতে পারবে বলে দু তিন হাজার টাকা বেশি রাখে। দুদিন আগে হাইসেন্স আর স্যামসাংয়ের দুইটা এসি দেখে গেলাম। আজ শুনি স্টক আউট। অন্য যেগুলো আছে সেগুলোর দাম আবার এই দুইটার তুলনায় একটু বেশি।

লক্ষ্মীবাজারে ওয়ালটন ব্রাঞ্চের ম্যানেজার বলেন, আগের তুলনায় ওয়ালটন এসির বিক্রি তিনগুণ বেড়েছে। ধরেন আগে যদি আমার এই শোরুমে দৈনিক পাঁচটা এসি বিক্রি করতাম, এখন করছি ১৫টা।

গরমের তীব্রতায় মানুষ ধারকর্য করে হলেও এসি কিনছে। আগে আমরা নির্দিষ্ট টাইমে দোকান খুলতাম ও বন্ধ করতাম। এখন বিক্রির চাপ এতটা বেড়েছে যে আমাদের কম বেশি সবার ওভারটাইম করা লাগছে।

এসির দাম বাড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, গত তিন বছরে আমাদের এসির দাম বাড়েনি। গরম বেড়েছে, তাই বলে যে আমরা এসির দাম বাড়াবো বিষয়টা এমন না।

অনলাইনে ও শোরুমে এসি কেনার পার্থক্যের বিষয়ে তিনি বলেন, অনেকে শোরুমে না এসে অনলাইনে এসি অর্ডার করছেন। সেক্ষেত্রে দামের কিছুটা পার্থক্য আছে। তবে বেশি না সর্বোচ্চ দু’তিন হাজার টাকা।

পুরান ঢাকার লক্ষীবাজারের বাটারফ্লাই ব্রাঞ্চের ম্যানেজার বলেন, আমাদের এখানে গত দুই সপ্তাহে প্রচুর বেচাকেনা হয়েছে। সত্যি বলতে আমাদের এখন এসি বিক্রি নেই। কারণ ইকো ও হায়ার এসির স্টক আউট। আমার এখানে এখন শুধু এলজি কোম্পানির এসি আছে। এ

টার তুলনামূলক দাম বেশি। তাই একটু কম সেল হয়। হেড অফিসে ক্রেতাদের চাহিদা এবং এসির স্টক আউটের বিষয়ে জানিয়েছি। তারা হয়তো কিছু একটা করবেন।

এসির চাহিদা কেমন বেড়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে এই ম্যানেজার বলেন, গত তিন মাসে যত টাকার এসি বিক্রি করেছি এই মাস এখনও শেষ হয়নি, তার চেয়ে বেশি বিক্রি করেছি। স্টক আউট না হলে হয়তো আরও বেশি বিক্রি হতো।

এসি বিক্রির বিষয়ে পুরান ঢাকার র‌্যাংগস ই-মার্ট ব্রাঞ্চের ম্যানেজার আশরাফুল বলেন, আমাদের এখানে স্যামসাং, এলজি, ডাইকিং, হাইসেন্স এবং তোসিন এই পাঁচটি কোম্পানির এসি বিক্রি করা হয়। আগের তুলনায় বেচাবিক্রি অনেক ভালো।

পূর্বের তুলনায় বিক্রি কত শতাংশ বেড়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে এই ম্যানেজার বলেন, আমরা দিনে বা সপ্তাহে কয়টি এসি বিক্রি করেছি সেই হিসাব করি না। তবে কত টাকা সেল করেছি সেই হিসাবে করি। এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে আমরা ২০ লাখ টাকার এসি বিক্রি করেছি। দ্বিতীয় সপ্তাহে ২১ লাখ টাকা। তৃতীয় সপ্তাহে সেটা প্রায় ৪০ লাখ টাকার কোটায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে।

আর এপ্রিলের চতুর্থ সপ্তাহে আমরা প্রায় ৬০ লাখ টাকার এসি বিক্রি করেছি। বলা চলে গত মাসের তুলনায় চার থেকে পাঁচ গুণ বেশি সেল করেছি। এই তাপদাহ যদি আরও এক সপ্তাহ চলমান থাকে তাহলে হয়তো পূর্বের বেচাকেনার সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে।

এসির পাশাপাশি বিক্রেতারা বলছেন, গরম বাড়ায় সিলিং ফ্যান ও চার্জার ফ্যানের চাহিদাও বেড়েছে। চাহিদার তুলনায় জোগানেও টান পড়েছে। ব্র্যান্ডের কোম্পানিগুলো চাহিদা অনুযায়ী স্থানীয় দোকানগুলোয় ফ্যান দিচ্ছে না।

নন-ব্র্যান্ডের টাইফুন ফ্যানগুলোর দাম এখন ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা। অথচ গত মাসেও এগুলোর দাম ছিল ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা। ১২ ইঞ্চি ফ্যান কোথাও বিক্রি হচ্ছে ৭ হাজার টাকা, কোথাও ৬ হাজার ৫০০ টাকা।

বাজার ঘুরে দেখা যায়, ছোট স্ট্যান্ড (৯-১০ ইঞ্চি) বা টাইফুন ফ্যান বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ১৬০০ টাকা। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের স্ট্যান্ড ফ্যান বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ২০০ থেকে ৮ হাজার টাকায়।

এ ছাড়া দেশি ব্র্যান্ডের সিলিং ফ্যান ১৭০০ থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকা, বিদেশি ব্র্যান্ডের সিলিং ফ্যান বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ৫০০ থেকে ১০ হাজার টাকায়।

পুরান ঢাকার পাটুয়াটুলি থেকে সিলিং ফ্যান কিনতে আসা একজন জানান, সিলিং ফ্যানের পাশাপাশি চার্জার ফ্যানের দাম দুইশো আড়াই’শ টাকা বেড়ে গেছে। যেই সিলিং ফ্যান গত বছর ছিল ২২০০ এখন সেটার দাম ৩০০০ টাকা।

এমনিতে দোকানদাররা দাম বাড়ার কথা স্বীকার করে না। অথচ সিলিং ফ্যানে ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা দাম বেড়েছে। আমরা যদি বিক্রেতাদের প্রশ্ন করি দাম কেন বেড়েছে তারা আমাদের বলে কোম্পানি যে রেটে বিক্রি করে আমরা তার থেকে সামান্য লাভে বিক্রি করি। এখানে যদি ভোক্তা অধিকার একটা অভিযান পরিচালনা করতো যে আসলেই তাদের ক্রয় মূল্য কত আর বিক্রি করছে কত টাকায় তাহলে খুব ভালো হতো।

লক্ষীবাজারের সনি ব্রাঞ্চের ম্যানেজার নয়ন বলেন, সবাই বেশ ভালো বেচাকেনা করছে। আমার এই ব্রাঞ্চেও ভালো বেচাকেনা হচ্ছে। তবে তুলনামূলক কম। আমার এখানে এসির স্টক আউট। অন্যান্য যে প্রোডাক্ট আছে সেগুলো বিক্রি করছি।

তিনি জানান, সনির সিলিং ফ্যানের চাহিদাও বেড়েছে। দাম বাড়ার বিষয়ে ম্যানেজার বলেন, অন্যান্য দোকানে হয়তো দাম বাড়তে পারে, তবে আমাদের কোম্পানির সিলিং ফ্যানের দাম বাড়েনি। গত দুই বছরে যে দামে বিক্রি করেছি এখনও সেই দাম রয়েছে।

পুরান ঢাকার ইসলামপুর রোডে সিলিং ফ্যান বিক্রেতা আব্দুল মতিন, চাহিদা বাড়ায় ডিলাররা ফ্যান দেওয়া কমিয়ে দিয়েছে। একইসঙ্গে দামও বাড়িয়ে দিয়েছে। পাইকারিতে এক-একটা ফ্যান ৫০-৬০ টাকা বাড়তি দামে কেনা লাগছে আমাদের। ভালো ব্র্যান্ডের ফ্যানগুলোর দাম ২০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

তাহলে বলেন আমরা কীভাবে আগের দামে বিক্রি করবো। আমাদের না ধরে কোম্পানিকে ধরে আপনি যদি প্রশ্ন করেন দাম বেড়েছে কেন, তাহলে মনে হয় সবচেয়ে ভালো হয়। আমরা খুচরা বিক্রেতা যারা আছি তারা যেই দামে পণ্য কিনি তার চেয়ে একটু বেশি দামে লাভ করে সেটা বিক্রি করি।

উল্লেখ্য, গত বছরের তুলনায় এবার ব্র্যান্ডের এসি ও এয়ারকুলারের দাম বেশি বলে মনে করেছেন অনেক ক্রেতা। তবে ওয়ালটন, যমুনা, এলজি ও হায়ার এসির বিক্রেতারা বলছেন, চলতি মৌসুমে এসির দাম বাড়ানো হয়নি। নানা অফার ও ইএমআইতে সাশ্রয়ী দামে পাওয়া যাচ্ছে এসিসহ বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স পণ্য। দেশি ব্র্যান্ডের ১ টনের এসি  ৪১ হাজার ৪০০ টাকায়ও পাওয়া যাচ্ছে।




Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০৩১  
All rights reserved © shirshobindu.com 2012-2024