শুক্রবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ১০:২১

ইতালিতে ৩০ লাখ টাকায় অবৈধভাবে যাওয়ার পথে নিখোঁজ দুই ভাই

ইতালিতে ৩০ লাখ টাকায় অবৈধভাবে যাওয়ার পথে নিখোঁজ দুই ভাই

ইতালিতে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হন দুই ভাই মিলন মুন্সি (৩৫) ও আল-আমিন মুন্সি (৩২)। গত সাত মাস আগে তাদের এ যাত্রা ছিল অবৈধভাবে দালালের মাধ্যমে। এরপর থেকেই তারা নিখোঁজ।

প্রথম দিকে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ থাকলেও চার মাস ধরে কোনো যোগাযোগ নেই দুই ভাইয়ের। এদিকে খবর এসেছে যে ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে তারা মারা গেছেন। সেই সংবাদের পর থেকে পরিবারে চলছে শোকের মাতম।

সিরাজ মুন্সির দুই ছেলে মিলন ও আল-আমিন এবং এক মেয়ে লিপি বেগম। বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। মিলন ও আল-আমিনও বিয়ে করেছেন। তাদের দুজনের ঘরেই ছেলে সন্তান আছে। বাবা সিরাজ অসুস্থ, তাই কোনো কাজ করতে পারেন না। অভাবের সংসারে এই দুই ছেলেই ছিল ভরসা।

নিখোঁজদের পরিবার জানায়, এই সুযোগকে কাজে লাগান ডাসারের গোপালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফরহাদ মাতুব্বর। তিনি একজন দালাল।

ইতালি নেওয়ার প্রলোভন দেখান মিলন ও আল-আমিনকে। তার প্রলোভন পড়ে জমি বিক্রি করে, ধান বিক্রি করে, আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে ধার করে ও বিভিন্ন এনজিও থেকে লোন নিয়ে ৩০ লাখ টাকা তুলে দেন ফরহাদ মাতুব্বরের হাতে।

এরপর মার্চ মাসে ভাগ্যের চাকা ঘুরাতে অবৈধভাবে সমুদ্রপথে ইতালির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন দুই ভাই। মাঝপথে লিবিয়া গিয়ে অবস্থান করেন। পরে ২৭ এপ্রিল লিবিয়া থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় অর্ধশত মানুষের সঙ্গে ইতালিদের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। এরপর থেকে তাদের আর পরিবারের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই। প্রায় চার মাস ধরে সন্ধান পায়নি পরিবার। বার বার ফরহাদ মাতুব্বরের কাছে গিয়েও সঠিক তথ্য জানতে পারেননি।

সবশেষ ৩ সেপ্টেম্বর রাতে একই উপজেলার তাতিবাড়ি এলাকার ইসরাফিল মিয়া নামে এক ব্যক্তির কাছে জানতে পারেন, ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে মিলন ও আল-আমিন মারা গেছেন। ইসরাফিল লিবিয়াতে এই দুই ভাইয়ের সঙ্গে ছিলেন।

মিলন মুন্সির স্ত্রী ফাতেমা বেগম বলেন, প্রতি মাসে ৪৭ হাজার টাকার কিস্তি দিতে হয়। ওরা যাওয়ার পর অনেক অসহায় হয়ে পড়েছি। সেই সঙ্গে প্রতিমাসে এতগুলো টাকা কিস্তি দেওয়া আমাদের জন্য কষ্টকর হয়ে পড়ছে।

গত চার মাস ধরে আমার স্বামী ও দেবরের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই। তাদের খোঁজ জানতে ফরহাদ মাতুব্বরের কাছে ঘুরতে ঘুরতে অসহায় হয়ে পড়েছি।

আল-আমিনের স্ত্রী ডালিয়া বেগম বলেন, আমার ছেলের বয়স ১৯ মাস। এখন তাকে নিয়ে আমি কি করবো। কীভাবে বেঁচে থাকবো। আমার স্বামী বেঁচে আছে না কি মরে গেছে, তাও সঠিকভাবে বলতে পারছি না। আমরা দালাল ফরহাদের বিচার চাই।

মিলন ও আল-আমিনের মা মায়া বেগম বলেন, ফরহাদ চেয়ারম্যান প্রলোভন দেখিয়ে আমাদের কাছ থেকে ৩০ লাখ টাকা নেন। তখন বলেছিল, সুন্দরভাবে দুই ছেলেকে ইতালি পাঠাবে। কিন্তু এভাবে আমার ছেলের মৃত্যুর খবর আসবে, তা ভাবতেও পারিনি।

তিনি বলেন, ধারদেনা করে ছেলেদের ফরহাদ মাতুব্বরের কাছে টাকা দিয়েছি। কিস্তির লোকজন বাড়ি এলে জঙ্গলে বা অন্যের বাড়ি লুকিয়ে থাকি। শাখ-পাতা খেয়ে কোনো রকম বেঁচে আছি।

চার মাস আগে ছেলেদের সঙ্গে কথা হলে তারা বলে, মা আর কয়েকদিন কষ্ট করো, একবার ইতালি যেতে পারলে আর কোনো কষ্ট থাকবে না। কিন্তু সেই ছেলে আমার বেঁচে আছে না কি মরে গেছে কিছুই বুঝতে পারছি না। ওই চেয়ারম্যান সব শেষ করে দিলো। তার বিচার চাই।

এদিকে মিলন মুন্সি ও আল-আমিন মুন্সির প্রতিবেশী খলিল খানের ছেলে শান্ত খানও নিখোঁজ। শান্ত খানও গত সাত মাস আগে ইতালি যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হন। গত চারমাস ধরে তার সঙ্গেও পরিবারের কোনো যোগাযোগ নেই।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, একই ইউনিয়নের মিলন মুন্সি, আল-আমিন মুন্সি, শান্ত খা, শাহিনসহ মোট ছয়জন নিখোঁজ।

নিখোঁজ শান্ত খায়ের বাবা খলিল খা বলেন, মিলন মুন্সি ও আল-আমিনের সাথেই আমার ছেলে শান্ত গেছে। দালাল ফরহাদ মাতুব্বরকে ১৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু গত চার মাস ধরে আমার ছেলের কোনো খোঁজ নেই।

এদিকে ঘটনা জানাজানি হলে অভিযুক্ত ফরহাদ মাতুব্বর পালিয়ে যান। ইউনিয়ন পরিষদে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। তার ব্যবহৃত মোবাইলে কল দিলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়। তাই তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

ডাসার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, খবরটি আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পেরেছি। তবে ভুক্তভোগীর পরিবার থেকে এখনো অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ডাসারের ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উত্তম কুমার দাশ বলেন, মিলন ও আল আমিনের পরিবার থেকে এখনো প্রশাসনকে জানায়নি। তবে খোঁজ নিয়ে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।




Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০৩১  
All rights reserved © shirshobindu.com 2012-2024