আজ শুক্রবার। পবিত্র জুমাবার। আজকের বিষয় ‘জয়নব বিনতে মুহাম্মাদ زينب بنت محمد’। শীর্ষবিন্দু পাঠকদের জন্য এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন ‘ইসলাম বিভাগ প্রধান’ ইমাম মাওলানা নুরুর রহমান।
মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর পুণ্যবতী স্ত্রী ছিলেন ১১/১৩ জন। এদের মধ্য থেকে মাত্র দুজন স্ত্রী খাদিজা বিনতে খুয়াইলিদ ও মারিয়া কিবতি (রা.)-এর ঘরে আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর তিন পুত্র ও চার কন্যাসন্তানের জন্ম হয়।
পুত্র ইবরাহিম জন্মগ্রহণ করেন মারিয়া (রা.)-এর গর্ভে, আর বাকি ছয় সন্তান পৃথিবীতে আসেন খাদিজা (রা.)-এর কোল জুড়ে। তাদের মধ্যে জয়নব বিনতে মুহাম্মাদ সংক্ষিপ্ত পরিচিতি উল্লেখ করা হলো।
মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর মেয়ে সায়্যিদা যায়নাব (রা.)-যিনি আল্লাহর রাস্তায় শাহাদাত বরণ করেন। উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়িশা (রা.) তাঁর সম্পর্কে রাসূলুল্লাহর (সা.)-এ বানী বর্ণনা করেছেনঃ
হযরত যায়নাবের (রা.) সম্মানিতা জননী উম্মুল মুমিনীন হযরত খাদিজাতুল কুবরা (রা.)।
যিনি মুহাম্মাদ (সা.)-এর রিসালাতের প্রতি সর্বপ্রথম ঈমান আনার অনন্য গৌরবের অধিকারিণী। তাঁর মহত্ব ও মর্যাদা এত বিশাল যে বিগত উম্মাত সমূহের মধ্যে কেবল হযরত মারইয়ামের (আ) সাথে যা তুলনীয়।
আবু আমর বলেন, যয়নাব (রা.) তাঁর পিতার মেয়েদের মধ্যে সবার বড়। এ ব্যাপারে কোন মতপার্থক্য নেই। আর যারা ভিন্ন মত পোষণ করেন তারা ভুলের মধ্যে আছেন। তাদের দাবীর প্রতি গুরুত্ব প্রদানের কোন হেতু নেই।
তবে মতপার্থক্য যে বিষয়ে আছে তা হলো, রাসূলুল্লাহর (সা.) ছেলে-মেয়েদের মধ্যে যায়নাব প্রথম সন্তান, না কাসিম? বংশবিদ্যা বিশারদদের একটি দলের মতে আল-কাসিম প্রথম ও যায়নাব দ্বিতীয় সন্তান। ইবনুল কালবী যায়নাবকে (রা.) প্রথম সন্তান বলেছেন। ইবনে সা‘দের মতে, যায়নাব (রা.) মেয়েদের মধ্যে সবার বড়। (তাবাকাত ৮/৩০)
রাসুল সাঃ তাঁর মোট ৩ পুত্র ও ৪ কন্যা ছিল। ইবরাহীম ব্যতীত বাকী ৬ সন্তানের সবাই ছিলেন খাদীজার গর্ভজাত। তিনি বেঁচে থাকা অবধি রাসূল (ছাঃ) দ্বিতীয় বিবাহ করেননি। মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর সাথে বিয়ের সময় খাদীজা পূর্ব স্বামীদ্বয়ের কয়েকজন জীবিত সন্তানের মা ছিলেন। তাঁর গর্ভজাত ও পূর্বস্বামীর সন্তানেরা সকলে ইসলাম কবুল করেন ও সকলে ছাহাবী ছিলেন।
খাদীজার গর্ভে রাসূল (ছাঃ)-এর প্রথম সন্তান ছিল ক্বাসেম। তার নামেই রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর উপনাম ছিল আবুল ক্বাসেম। অতঃপর কন্যা যয়নব, পুত্র আব্দুল্লাহ; যার লকব ছিল ত্বাইয়িব ও ত্বাহের। কারণ তিনি নবুঅত লাভের পর জন্মগ্রহণ করেছিলেন।
অতঃপর রুক্বাইয়া, উম্মে কুলছূম ও ফাতেমা। ক্বাসেম ছিলেন সন্তানদের মধ্যে সবার বড়। যিনি ১৭ মাস বয়সে মারা যান। নবুঅত লাভের পর আব্দুল্লাহ জন্ম গ্রহণের কিছু দিনের মধ্যেই মৃত্যুবরণ করায় ‘আছ বিন ওয়ায়েল প্রমুখ কুরায়েশ নেতারা রাসূল (ছাঃ)-কে আবতার’ বা নির্বংশ বলে অভিহিত করেন।
কেননা সে যুগে কারু পুত্র সন্তান মারা গেলে এবং পরে পুত্র সন্তান হ’তে দেরী হ’লে আরবরা ঐ ব্যক্তিকে ‘আবতার’ বলত। অতঃপর চার কন্যার মধ্যে কে সবার বড় ও কে সবার ছোট এ নিয়ে মতভেদ আছে। তবে প্রসিদ্ধ মতে যয়নব বড় ও ফাতেমা ছিলেন ছোট।
জয়নব বিনতে মুহাম্মাদ ছিলেন রাসুল সাঃ এবং খাদিজা বিনতে খুয়াইলিদের জ্যেষ্ঠ কন্যা। খাদিজার বিবাহের পঞ্চম বছরের সময়ে ৬০০ সিএ এর মধ্যে জন্ম হয়, যখন তিনি ত্রিশ বছরে পদার্পণ করেন। তিনি ৮ম হিঃ (৬২৯) সময়ে মৃত্যুবরণ করেন।
Leave a Reply