রবিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১০:৪২

টিউলিপকে মন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে সরাতে চাপ

টিউলিপকে মন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে সরাতে চাপ

বাংলাদেশের পরমাণু বিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে ৪০০ কোটি পাউন্ড আত্মসাতের অভিযোগে নাম এসেছে ব্রিটিশ নগর মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিকের। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইল জানিয়েছে এই খবর।

এর ফলে ব্রিটেনের দুর্নীতিবিরোধী কাজের দায়িত্ব থেকে সরে আসার জন্য চাপে পড়ছেন তিনি। ডেইলি মেইল বলছে, বাংলাদেশে নির্মিত রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করে রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি রোসাটম।

কিন্তু টিউলিপের তত্ত্বাবধানে থাকা ‘ফিন্যান্সিয়াল স্যাংশন ইমপ্লিমেন্টেশন’ অফিস ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে রোসাটমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোম্পানি ও ব্যক্তির ওপর অন্তত ৪৫টি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।

আর ফিন্যান্সিয়াল স্যাংশন ইমপ্লিমেন্টেশন সংশ্লিষ্ট কাজের দেখভালের দায়িত্বে রয়েছেন স্বয়ং টিউলিপ।

রোসাটমের সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে এখনো নিয়মিতভাবে তথ্য পর্যালোচনা করতে হবে তাকে। যার ফলে টিউলিপের দায়িত্বে থাকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

কনজারভেটিভ পার্টির স্বরাষ্ট্র বিষয়ক মুখপাত্র ম্যাট ভিকার্স বলেন, টিউলিপের ব্যক্তিগত লেনদেন সম্পর্কিত প্রশ্নের উত্তর না মেলা পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা ও দুর্নীতিবিরোধী নীতিগত সিদ্ধান্তের দায়িত্ব থেকে অবশ্যই তাকে সরিয়ে রাখতে হবে কিয়ার স্টারমারকে।

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বলছে, অর্থ আত্মসাতের যে অভিযোগ উঠেছে, তা ঘটেছে ২০০৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে। যখন টিউলিপের খালা শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দোর্দণ্ড প্রতাপে বাংলাদেশ শাসন করছিলেন।

ডেইলি মেইল বলছে, শতাধিক আন্দোলনকারী নিহত হওয়ার পর গত আগস্টে টিউলিপের মা শেখ রেহানার সঙ্গে বাংলাদেশ ছেড়ে পালিয়ে যান হাসিনা।

৪২ বছর বয়সী টিউলিপ মোট ১০ বিলিয়ন পাউন্ডের পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তিতে ‘মধ্যস্থতাকারী’ হয়ে থাকতে পারেন বলে অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশের হাইকোর্ট।

২০১৩ সালে ক্রেমলিনে তৎকালীন লেবার কাউন্সিলর টিউলিপের উপস্থিতিতে শেখ হাসিনা ও ভ্লামিদির পুতিনের মধ্যে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তি সই হয়। সেই ছবিও এখন ঘুরে ফিরে আসছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমে।

দুদকের অভিযোগে বলা হয়েছে, রূপপুর প্রকল্পের জন্য অতিরিক্ত ব্যয় দেখিয়ে ১২ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের চুক্তির মাধ্যমে শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় এবং ভাগ্নি টিউলিপ সিদ্দিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ‘আত্মসাৎ’ করেছেন।

এসব ‘পাচার করা হয়েছে’ মালয়েশিয়ার বিভিন্ন অফশোর ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে। যদিও টিউলিপ সমস্ত অভিযোগ জোরালোভাবে অস্বীকার করেছেন। লেবার নেতারা বলেছেন, দাবির সমর্থনে কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়নি।

কিন্তু ডেইলি মেইল পরমাণু তদন্তের বিষয়টি প্রকাশ করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ব্রিটেনের মন্ত্রিপরিষদ দপ্তরের প্রোপ্রাইটি অ্যান্ড এথিকস দলের একজন অভিযোগ নিয়ে ইতোমধ্যে টিউলিপকে জিজ্ঞাসাবাদও করেছে। সেখানে ওই অভিযোগকে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলেছেন শেখ হাসিনার ভাগ্নি।

রাশিয়ার রাষ্ট্র মালিকানাধীন কোম্পানি রোসাটাম বাংলাদেশের রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করছে। দুর্নীতিবিরোধী কার্যালয় ফাইন্যান্সিয়াল স্যাংকশন ইমপ্লিমেন্টেশন দেখাশোনা করেন টিউলিপ।

কিন্তু এই অফিস ইউক্রেন যুদ্ধে রোসাটমের সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন কোম্পানি এবং ব্যক্তিবিশেষের কমপক্ষে ৪৫টি আর্থিক লেনদেনের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।

এতে বলা হয়, বাংলাদেশের রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প থেকে নিজ পরিবারের সদস্যদের ৪ বিলিয়ন পাউন্ড আত্মসাতে সহায়তা করেছেন বলে অভিযোগ তুলেছে বাংলাদেশ দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

এ বিষয়ে তদন্তও শুরু করেছে তারা। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে কাজ করেছে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানি রোসাটাম (রাশিয়ান ফেডারেশন স্টেট অ্যাটমিক এনার্জি করপোরেশন)।

ডেইলি মেইল বলছে, ফাইন্যান্সিয়াল স্যাংকশন ইমপ্লিমেন্টেশনের (আর্থিক নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন কার্যালয়) দায়িত্বে রয়েছেন টিউলিপ সিদ্দিক।

ইউক্রেনে হামলার সঙ্গে রোসাটামের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে এর সঙ্গে যুক্ত ৪৫টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বৃটেনের এই সরকারি দপ্তর।

এক্ষেত্রে রোসাটামের সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ে নিয়মিত পর্যালোচনা করার কথা টিউলিপের। তবে দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত হওয়ার দায়ে টিউলিপকে দুর্নীতিবিরোধী কার্যালয়ের দায়িত্ব থেকে অপসরণের জোর দাবি জানিয়েছেন বিরোধী দলীয় হোম অ্যাফেয়ার্সের মুখপাত্র ম্যাট ভিকার্স।

তিনি বলেছেন, ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমারকে দুর্নীতিবিরোধী সকল কর্মকাণ্ড থেকে টিউলিপকে প্রত্যাহার করে নিতে হবে। কেননা টিউলিপের ব্যক্তিগত লেনদেন সম্পর্কে স্বচ্ছ উত্তর পাওয়া যায়নি।

দুদক বলছে, ২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত আর্থিক দুর্নীতির সঙ্গে টিউলিপের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসময় তার খালা শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করেছেন।

আগস্টে শত শত মানুষ নিহত হওয়ার পর শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের তোপে শেখ রেহানাকে নিয়ে ভারতে পালিয়ে যান হাসিনা।

বাংলাদেশের হাইকোর্টে অভিযোগ উঠেছে যে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ১০ বিলিয়ন পাউন্ড সরাতে মধ্যস্থতা করেছিলেন টিউলিপ।

২০১৩ সালে ক্রেমলিনে টিউলিপের উপস্থিতিতে ওই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন হাসিনা ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।

শেখ রেহানার বিরুদ্ধেও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ তদন্ত করছে দুদক। হাসিনা এবং তার বোনের বিরুদ্ধে ৩.৯ বিলিয়ন পাউন্ড অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে।

বিভিন্ন ভুয়া কোম্পানির নামে এসব অর্থ মালয়েশিয়াতে পাচার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ডেইলি মেইল।

সম্প্রতি টিউলিপ এবং তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে ভিন্ন আটটি প্রকল্প থেকে ১.৪ বিলিয়ন পাউন্ড আত্মসাতের অভিযোগে তদন্তে নেমেছে দুদক।

বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকে টিউলিপ সিদ্দিক এবং তার পরিবারের আরও চারজনের অফশোর ব্যাংক অ্যাকাউন্টের নথি এবং রেকর্ড সরবরাহ করার নির্দেশ দিয়েছে দুদক।

এখন টিউলিপকে ফাইন্যান্সিয়াল স্যাংকশন ইমপ্লিমেন্টেশনের দায়িত্ব থেকে সরানো হবে কিনা, সে বিষয়ে জানতে চাইলে মন্তব্য করতে রাজি হননি সংশ্লিষ্টরা।




Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫১৬
১৭১৮১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭২৮  
All rights reserved © shirshobindu.com 2012-2024