রবিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১০:০৬

সরকারের কাছে নিজেকে সঁপে দিলেন টিউলিপ

সরকারের কাছে নিজেকে সঁপে দিলেন টিউলিপ

যুক্তরাজ্যের সিনিয়র ট্রেজারি মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর তিনি নিজেকে তদন্তের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হাতে সঁপে দিয়েছেন।

বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত সরকরের সদস্যদের সঙ্গে যুক্ত এমন একাধিক সম্পত্তিতে বসবাস বা ভোগদখল করার   অভিযোগ উঠেছে লেবারপার্টির এই মন্ত্রীর বিষয়ে।  খবর দ্য গার্ডিয়ানের।

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের নগর ও দুর্নীতিবিরোধী মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক মন্ত্রীদের মানদণ্ড নির্ণয়বিষয়ক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা লরি ম্যাগনাসের কাছে তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্তের অনুরোধ করেছেন।

বিশেষ করে তিনি ব্রিটিশ মন্ত্রীদের জন্য নির্ধারিত নীতিমালা বা আচরণবিধি ভঙ্গ করেছেন কি না তা খতিয়ে দেখতে অনুরোধ করেছেন।

ম্যাগনাসের কাছে লেখা চিঠিতে টিউলিপ সিদ্দিক বলেন, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে আমি আমার আর্থিক বিষয় এবং বাংলাদেশের সাবেক সরকারের সাথে আমার পরিবারের সম্পর্ক নিয়ে গণমাধ্যমের প্রতিবেদনের বিষয়বস্তু হয়েছি, যার অধিকাংশই অসত্য।

এ বিষয়ে আমার অবস্থান স্পষ্ট যে, আমি কিছু ভুল করিনি। তবে, সন্দেহ দূর করার জন্য আমি চাই আপনি স্বাধীনভাবে এই বিষয়গুলোর সত্যতা নির্ধারণ করুন।

লেবার পার্টির নেতারা জানিয়েছেন, টিউলিপ সিদ্দিকের এই সপ্তাহে অর্থমন্ত্রী তথা চ্যান্সেলর অব এক্সচেকার র‍্যাচেল রিভসের নেতৃত্বে ট্রেজারি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে চীনে ভ্রমণ করার কথা ছিল। কিন্তু তদন্তে সহায়তা করার জন্য তিনি চীন সফরে যাচ্ছেন না।

উল্লেখ্য, কিংস ক্রসের কাছে দুই বেডরুমের একটি ফ্ল্যাট এবং হ্যাম্পস্টেডে একটি পৃথক বাড়ির ভোগদখল ও মালিকানা ইস্যুতে সম্প্রতি টিউলিপের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠতে শুরু করে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়, টিউলিপ সিদ্দিক ২০০৪ সালে কোনো অর্থ পরিশোধ না করেই কিংস ক্রস এলাকায় একটি দুই বেডরুমের ফ্ল্যাট পেয়েছিলেন।

জমির রেজিস্ট্রেশন নথি অনুযায়ী, ফ্ল্যাটটি উপহার দিয়েছিলেন আবদুল মুতালিফ নামে এক প্রোমোটর, যিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের সঙ্গে জড়িত।

ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, কিংস ক্রসের ফ্ল্যাটটি ২০০১ সালে ১ লাখ ৯৫ হাজার পাউন্ড দিয়ে কিনেছিলেন আবদুল মুতালিফ।  টিউলিপ ২০০৪ সালে কোনো মূল্য না দিয়ে সেই ফ্ল্যাটের মালিক হন।

ডেইলি মেইল জানিয়েছে, টিউলিপ আগে তাদের প্রতিবেদকদের জানিয়েছিলেন যে, ফ্ল্যাটটি তার বাবা-মা কিনে তাকে উপহার দিয়েছেন। পরে অভিযোগ ওঠে, তিনি মিথ্যা তথ্য দিয়ে পত্রিকাটিকে বিভ্রান্ত করেছিলেন।

দ্য সানডে টাইমস পরে জানায়, টিউলিপ হ্যাম্পস্টেডে একটি পৃথক সম্পত্তিতে বসবাস করেছেন। এই বাড়িটি কিনেছিলেন মইন গনি নামের এক আইনজীবী। এই আইনজীবী হাসিনা সরকারের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন এবং সম্পত্তিটি টিউলিপের বোনের কাছে হস্তান্তর করেছিলেন।

টিউলিপ বর্তমানে পূর্ব ফিঞ্চলে এলাকায় ২১ লাখ পাউন্ড মূল্যের একটি বাড়ি ভাড়া নিয়েছেন। এই বাড়ির মালিক আবদুল করিম। তিনি আওয়ামী লীগের যুক্তরাজ্য শাখার কার্যনির্বাহী সদস্য।

শেখ হাসিনার পার্টি আওয়ামী লীগের সঙ্গে টিউলিপের সংযোগ অতীতেও তার জন্য রাজনৈতিক সমস্যার কারণ হয়েছে।

২০১৭ সালে আহমদ বিন কাসেম নামে এক আইনজীবীর বিষয়ে প্রশ্নের উত্তর দিতে অস্বীকার করেন টিউলিপ। ব্রিটেনে ব্যারিস্টারি পড়া আহমদ বিন কাসেম বাংলাদেশে কারাবন্দি ছিলেন।

তখন তিনি জোর দিয়ে বলেছিলেন যে, তার খালার সরকারের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই।  তিনি বলেন, আমি হ্যাম্পস্টেড ও কিলবার্নের লেবার পার্টির এমপি, আমি একজন ব্রিটিশ এমপি। খুব সতর্ক থাকুন। আমি বাংলাদেশি নই এবং আপনি যার বিষয়ে কথা বলছেন, তার মামলার বিষয়ে আমি কিছুই জানি না।

ফ্ল্যাটকাণ্ডে অভিযোগের ঘটনায় ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর নীতিশাস্ত্র উপদেষ্টার কাছে তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন দেশটির সিটি মন্ত্রী ও আর্থিক খাতে দুর্নীতি মোকাবিলার দায়িত্বে থাকা এমপি টিউলিপ সিদ্দিক।

ব্রিটিশ প্ৰধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্র বলছে, লন্ডনে টিউলিপ সিদ্দিকের সম্পত্তি ব্যবহারকে ঘিরে অভিযোগের ভিত্তিতে তিনি নিজেকে প্রধানমন্ত্রীর মন্ত্রীদের স্বার্থ সম্পর্কিত স্বাধীন উপদেষ্টার কাছে রেফার করেছেন।

চলতি সপ্তাহে টিউলিপের চীনে যাওয়া জন্য ট্রেজারি প্রতিনিধি দলে যোগ দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু নীতিশাস্ত্র উপদেষ্টার কাছে আত্মসমর্পণ করার কারণে তাকে ব্রিটেনেই থাকতে হচ্ছে। অভিযোগের বিষয়ে স্বাধীন উপদেষ্টাকে সহায়তা করার জন্য তাকে প্রয়োজন হবে।

প্রধানমন্ত্রীকে মন্ত্রিত্বমূলক কোড কার্যকর করার পরামর্শ দেন এমন একজন স্যার লরি ম্যাগনাস এখন লন্ডনে টিউলিপের বিরুদ্ধে দু’টি ফ্ল্যাট ব্যবহারের দাবিগুলো খতিয়ে দেখবেন।

টিউলিপের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো নিয়ে তিনি বলেছেন, আমি পরিষ্কার, আমি কোনো ভুল করিনি। এ নিয়ে স্যার লরি ম্যাগনাসকে একটি চিঠিও লিখেছেন টিউলিপ।

সেখানে তিনি লিখেছেন, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে আমি গণমাধ্যমের খবরের বিষয় হয়েছি। আমার আর্থিক বিষয় এবং আমার পরিবারের সঙ্গে আগের সরকারের সম্পর্কের তথ্যগুলোর বেশিরভাগই ভুল। আমি পরিষ্কার যে, আমি কিছু ভুল করিনি। যাই হোক, সন্দেহ এড়ানোর জন্য আমি চাই আপনি স্বাধীনভাবে এই বিষয়গুলো তদন্ত করুন।

এদিকে টিউলিপ সিদ্দিক ও তার পরিবার সেন্ট্রাল লন্ডনে অ্যাপার্টমেন্টটি কীভাবে অধিগ্রহণ করেছেন, তা খতিয়ে দেখার জন্য টোরি এমপিরা স্যার লরিকে আহ্বান জানিয়েছেন। একইসঙ্গে টিউলিপের পদত্যাগও দাবি করেছেন তারা।




Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫১৬
১৭১৮১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭২৮  
All rights reserved © shirshobindu.com 2012-2024