উন্নত চিকিৎসার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া লন্ডনে পৌঁছেছেন। বাংলাদেশ সময় বুধবার বিকাল ২টা ৫৫ মিনিটে হিথ্রো বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান ছাড়া বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানাতে যানান যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এমএ মালিক, সাধারণ সম্পাদক কয়সর আহমেদ ও জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের পক্ষে কামাল উদ্দীন।
বিমানবন্দরে শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণের পর খালেদা জিয়াকে ভর্তি করা হতে পারে লন্ডন হাসপাতালে। এ জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে অ্যাম্বুলেন্স।
এর আগে মঙ্গলবার রাত ১১টা ৪৫ মিনিটে ঢাকা ছাড়ে খালেদা জিয়াকে বহনকারী এয়ার অ্যাম্বুলেন্স। লন্ডন পৌঁছানোর আগে প্রায় দীর্ঘ আট ঘণ্টার ভ্রমণে দোহায় যাত্রাবিরতি করেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
এদিকে খালেদার লন্ডন যাত্রা ঘিরে বিকাল থেকেই দলে দলে নেতাকর্মীরা গুলশানে জড়ো হতে থাকেন। সন্ধ্যার পর খালেদা জিয়ার বাসভবনে প্রবেশ করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
খালেদা জিয়াকে বিদায়ী শুভেচ্ছা জানাতে গুলশানসহ বিমানবন্দরের পথে রাস্তার দুপাশে বিএনপির নেতাকর্মী ও সমর্থকসহ বিভিন্ন স্তরের মানুষ জড়ো হন।
চোখ ও পায়ের ফলোআপ চিকিৎসার জন্য সবশেষ ২০১৭ সালের ১৬ জুলাই লন্ডনে গিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি দুর্নীতির এক মামলায় কারাবন্দি হন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া।
তাকে রাখা হয় ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের পরিত্যক্ত ও নির্জন কারাগারে। কারাগারে থাকাকালে নানা রোগে আক্রান্ত হন বিএনপি নেত্রী। বারবার যেতে হয় হাসপাতালে।
আদালতের দ্বারে দ্বারে ঘুরে জামিন ও মুক্তি না মেলায়, প্রাণঘাতী করোনার প্রকোপে পরিবারের আবেদনে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার কারাবাসের ২ বছর একমাস ১৩ দিন পর শর্তসাপেক্ষে ৬ মাসের অস্থায়ী মুক্তি দেন তাকে।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে ছয়মাস করে বাড়ানো হয় বেগম জিয়ার মুক্তির মেয়াদ।
এতদিন বাসা-হাসপাতাল, হাসপাতাল-বাসা এভাবেই কাটছিল বেগম জিয়ার জীবন। কয়েকদফা দীর্ঘদিন হাসপাতালে ভর্তি হয়ে থাকতে হয় তাকে। জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা বিএনপি নেত্রীকে বিদেশ থেকে চিকিৎসক এনে দেয়া হয় চিকিৎসা।
রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর কয়েকদফা তারিখ পরিবর্তন হলেও শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল থাকায় কাতারের আমিরের পাঠানো বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে লন্ডনে যাচ্ছেন বিএনপি নেত্রী। এই এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে আইসিইউ সুবিধা ছাড়াও রয়েছে তাৎক্ষণিক জীবন রক্ষার সব ধরনের সুবিধা।
মঙ্গলবার রাতে এ তথ্য জানিয়ে যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালিক জানান, বেগম জিয়াকে স্বাগত জানাতে আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্যসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে এরই মধ্যে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী লন্ডনে জড়ো হয়েছেন।
এত নেতাকর্মী হিথ্রো বিমানবন্দরে গেলে সিকিউরিটি ইস্যু তৈরি হবে। তার চেয়ে বড় বিষয় হলো, ম্যাডাম অসুস্থ। কাতার থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি লন্ডনের পথে রওনা হবার পর আমরা জানতে পারবো ঠিক কখন ম্যাডাম লন্ডনে পৌঁছাবেন।
তাই সবদিক বিবেচনা করে যুক্তরাজ্য বিএনপির আজকের প্রস্তুতি সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে তারেক রহমান সাহেব ও ডা. জোবাইদা রহমানের সাথে আমরা তিনজন যাবো।
ম্যাডাম সুস্থ হবার পর যুক্তরাজ্য বিএনপি সাংবাদিক ও সুধীজনের সম্মানে লন্ডনে বড় পরিসরে অনুষ্ঠান করবে। ওই অনুষ্ঠানে বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান দুজনেই উপস্থিত থাকবেন।
Leave a Reply